জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে থাকা বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করার অনুমতি চেয়েও সাড়া পায়নি তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক দল। কারাফটক থেকে ফিরে এসে তাঁরা অভিযোগ করেছেন, খালেদা জিয়া ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের পরামর্শ নিতে চাইলেও কারা কর্তৃপক্ষ অনুমতি দিচ্ছে না।
আজ সোমবার সকালে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করার জন্য পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের কারাগারের সামনে যান চিকিৎসকরা। পরে তাঁরা কারা কর্তৃপক্ষের কাছে দেখা করার আবেদন করেন। কিন্তু তাতে কোনো সাড়া মেলেনি।
পরে চিকিৎসকরা ফিরে এসে রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে এসব অভিযোগ করেন। বিএনপিপন্থী চিকিৎসকরা ‘সচেতন চিকিৎসক সমাজ’-এর ব্যানারে এই সংবাদ সম্মেলনে করেন।
সংবাদ সম্মেলনে অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সহসভাপতি অধ্যাপক ডা. রফিকুল কবির লাবু বলেন, ‘আমরা খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু কারা কর্তৃপক্ষ দেখা করার অনুমতি দেয়নি। পরে আইজি প্রিজনের কাছে চিঠি দিলেও কোনো ধরনের সাড়া পাইনি। আমরা বিভিন্ন বিষয়ের বিশেষজ্ঞ ডাক্তার মিলে দেখা করতে গিয়েছিলাম। দেখে চিকিৎসা দিলে অবশ্যই তিনি ভালো হতেন বলে আমরা আশাবাদী।
’‘খালেদা জিয়া কিছুদিন আগে চোখের অপারেশন করেছেন। ৩০ বছর ধরে হাঁটু-সংক্রান্ত অস্টিওআর্থ্রাইটিস রোগে ভুগছেন তিনি। প্রচণ্ড হাঁটুব্যথায় তাঁর স্বাভাবিক চলাফেরায় ব্যাঘাত ঘটছিল। একপর্যায়ে হাঁটু-সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে দুই হাঁটু প্রতিস্থাপন করে কৃত্রিম হাঁটুর জোড়া লাগানোর অপারেশন করেন। এর পর থেকে কঠোর নিয়মকানুনের মধ্যে থাকায় তাঁর হাঁটুতে কোনো সমস্যা হচ্ছিল না। তবে কারাগারে যাওয়ার পর আবার হাঁটুর ব্যথা বেড়েছে।’
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে শ্বাসকষ্ট, হার্টের সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ ও হাঁটু-সংক্রান্ত রোগে ভুগছেন। কারাগারে যাওয়ার পর এসব সমস্যা আরো বেড়ে গেছে। এরই মধ্যে তিনি বাইরের ডাক্তারদের পরামর্শ নিতে চাইলেও কারা কর্তৃপক্ষ অনুমতি দিচ্ছেন না।’
চিকিৎসক আরো বলেন, ‘খালেদা জিয়ার চলাচলের অবস্থা ও ওয়াশরুম ব্যবহারের পদ্ধতি সবকিছুর ব্যাপারেই একজন হাঁটু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শের প্রয়োজন। নতুবা কারাগারের পরিবেশের জন্য কৃত্রিম জোড়া লাগানো দুটো হাঁটু কোনোভাবে ঢিলে হয়ে গেলে তাঁর স্বাস্থ্য মারাত্মক হুমকির মুখে পড়তে পারে।’
কারাগারের বাইরের চিকিৎসক দিয়ে খালেদা জিয়ার শরীরের সার্বিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়ে রফিকুল কবির বলেন, ‘অন্যথায় কোনো ক্ষতি হলে এর দায়ভার সরকারকে নিতে হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন এমএর সাবেক সভাপতি ও সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাবেক অধ্যক্ষ ডা. এ কে এম আজিজুল হক, বিএমএর সাবেক প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কিডনি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আবদুস সালাম, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) সহসভাপতি অধ্যাপক ডা. শহীদ হাসান, উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ক্যানসার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ সহযোগী অধ্যাপক ডা. শহীদুল আলম প্রমুখ।
Discussion about this post