চিকিৎসক-নার্সের অভাব, যারা আছেন তাদেরও অনুপস্থিতি এবং অতিরিক্ত ফি আদায়সহ নানা অব্যবস্থাপনার কারণে এসব শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন মৃতদের স্বজনরা।
এ ঘটনায় শনিবার (০৩ অক্টোবর) বিকেলে হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট দুই ব্যক্তিকে ধাওয়া দিয়ে ধরে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। পরে তাদের মোহাম্মদপুর থানা নিয়ে যাওয়া হয়।
সরেজমিনে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, চিকিৎসকের অভাব ও নানা অব্যবস্থাপনায় শিশু মৃত্যুর অভিযোগে অন্য রোগীর অভিভাবকরাও আতঙ্কিত হয়ে শিশুদের নিয়ে অন্যত্র চলে গেছেন। হাসপাতালটির প্রধান ফটকে তালা ঝুলছে।
ভবনের কেয়ারটেকার আবদুল জলিল জানান, তিনি শুনেছেন, গত এক সপ্তাহের মধ্যে এখানে ছয়জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, আমরা এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ এখনও পাইনি। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে বিষয়টি জেনেছি।
এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
ভবনের কেয়ারটেকার আবদুল জলিল জানান, লালমাটিয়ার এ হাসপাতালটির মালিক নাজিম উদ্দিন নামে এক ব্যবসায়ী, তিনি পোলার আইসক্রিম কোম্পানির মালিক। তবে হাসপাতাল পরিচালনা করেন মনসুর আহমদ নামের এক ব্যক্তি।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুনতাসিরুল ইসলাম জানান, লালমাটিয়ার এশিয়ান হাসপাতালের কোনো ভূক্তভোগী এখন পর্যন্ত পুলিশের কাছে অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলেই সংশ্লিষ্ট অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো।
সামিউল ইসলাম নামের এক ভূক্তভোগী বলেন, রাকিব নামের আমার ছোট্ট ভাগ্নে এ হাসপাতালে ভর্তি ছিলো। হাসপাতালে ভালো চিকিৎসক ও নার্সের অভাবে শিশুরা মারা যাচ্ছিলো। এমন পরিস্থিতির কারণে ভাগ্নেকে অন্য হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।
ভবনের কেয়ারটেকার জলিল আরো জানান, শুক্রবার (২ অক্টোবর) পর্যন্ত বড়-ছোট মিলিয়ে ৩০ থেকে ৩৫ জন রোগী ভর্তি ছিলো। তার মধ্যে শিশু ছিল ৯ জন। রাতে ৩ শিশু মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে এক সপ্তাহে ৬ জন শিশু মারা গেলো।
তিনি আরো জানান, হাসপাতালের মালিক নাজিম উদ্দিন ভবনটির মূল মালিক হাজী রমিজউদ্দীনের কাছ থেকে চুক্তির ভিত্তিতে ভবন ভাড়া নিয়েছিলেন।
কেয়ারটেকার আব্দুল জলিল জানান, গত বছর এ হাসপাতালে রাজিব নামের এক স্টাফ বিষ্ফোরকসহ পুলিশের কাছে ধরা পড়েন। তিনি এখনো জেলে রয়েছেন। এ কারণে ভবনের মালিক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে চলে যেতে নোটিশ দেন। এরপরেও তারা বিভিন্ন অজুহাতে এখানে অবস্থান করছিলেন। হাসপাতালে ২৫ থেকে ৩০ জন স্টাফের কাজ করার কথা থাকলেও তার ঠিকমতো আসতেন না।
সরেজমিনে দেখা গেছে, হাসপাতালের প্রধান ফটক ৩টি তালা ঝুলিয়ে বন্ধ রাখা হয়েছে। তালাগুলো ভবন মালিকের পক্ষ থেকে লাগানো হয়েছে।
মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জামাল উদ্দীন মীর বাংলানিউকে জানান, ঘটনার সংবাদ পেয়ে পুলিশ হাসপাতালে যায়। গতরাতে মারা যাওয়া ৩ শিশুর মরদেহ পাওয়া যায়নি। জানা গেছে, অভিভাবকরা মরদেহ নিয়ে চলে গেছেন। তবে হাসপাতালের কাগজপত্র ঘেটে ৩ শিশুর মারা যাওয়ার প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া গেছে। বিষয়টি আরো খোঁজ-খবর নিয়ে দেখা হচ্ছে।
অভিযোগ পেলে আসামিদের ধরতে অভিযান চলবে বলে জানায় পুলিশ।
Discussion about this post