ছাত্রলীগকে ‘উসকে’ দেয়ায় বিশ্বদ্যালয়ের শিক্ষকদের ‘সাজা’ চান কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ। তিনি দাবি করেছেন, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মীর কর্মকাণ্ডের কারণে ‘বহিষ্কার’ হলে ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত শিক্ষকদেরও ‘বহিষ্কার’ করা হোক। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকদেরও ভাষ্য, ‘অপরাধী যেই হোক তার সাজা হওয়া উচিত।’
তবে এ ধরনের অপরাধের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষকের শাস্তি হয়েছে কিনা কেউ বলতে পারছেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন আইন আছে কিনা তাও শিক্ষকরা জানেন না।
গেল রোববার শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসিবিরোধী আন্দোলনে শিক্ষকদের ওপর হামলার ঘটনায় ওই বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের তিন নেতাকে সোমবার সাময়িক বহিষ্কার করেছে কেন্দ্রীয় কমিটি। এবছরে পহেলা বৈশাখ বাংলা নববর্ষেও কয়েকটি ঘটনায় নিন্দিত হয় ছাত্রলীগ কর্মীরা। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এক আদিবাসী ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের ঘটনায় ছাত্রলীগ নেতাসহ আট জনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। কেবল এ বিশ্ববিদ্যালয়ই নয়, দেশের প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন কারণে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। কিছুদিন পরে আবার সংগঠনের পক্ষ থেকে ‘বহিষ্কারাদেশ’তুলেও নেয় হয়। তাহলে এগুলো আইওয়াশ কিনা প্রিয়.কম-এর তরফে এমন প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে সোহাগ বলেন, ‘ছাত্রলীগের তবুও সাজা হয়। কিন্তু যেসব শিক্ষকরা ছাত্রলীগকে ডেকে আনে তাদের বিরুদ্ধে তো কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় না।’
সোহাগের দাবি, ‘শিক্ষকরাই ছাত্র কিংবা ছাত্রলীগকে কুলষিত করছে। আর অপকর্মের জন্য শাস্তি হয় ছাত্রলীগের কিন্তু শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কোনো কথা কেউ বলে না।’ এ ক্ষেত্রে শিক্ষকদের শাস্তি হওয়া উচিত বলে মনে করেন ছাত্রলীগের সদ্য বিদায়ী সভাপতি।
এ বিষেয় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রিয়.কমকে বলেন, ‘কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সাথে আদর্শগত দিক মিলে গেলে তাদের আমরা নার্সিং করি। তার মানে এই নয়, তাদের আমরা ব্যবহার করি। তবে কোনো শিক্ষক যদি রাজনৈতিকভাবে কাউকে ব্যবহার করে অপকর্ম করে তার সাজা হওয়া উচিত।’
প্রায় একই ধরনের কথা বললেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক আবুল মুনসুর। তিনি প্রিয়.কমকে বলেন, অপরাধ যেই করুক তার সাজা হওয়া উচিত।’ তবে ছাত্র সংগঠনকে ব্যবহারের ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষকের শাস্তি হয়েছে এমন কথাও মনে নেই তার। আর এমন অপরাধের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আইন আছে কিনা তাও জানেন না তিনি।
তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংগঠনকে (রাজনৈতিক) শিক্ষকরা ইন্ধন দেয়। এর কারণে তারা ক্যাম্পাসে বিশৃংখা সৃষ্টি করেছে এমন অভিযোগও শোনা গেছে বিভিন্ন সময়। বিষয়টি এভাবে চলতে পারে না। রাজনীতি করে কোনো শিক্ষক বিশৃংখলা করলে তদন্ত সাপেক্ষ তার শাস্তি হতেই পারে।’
আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক সদরুল আমিন প্রিয়.কমকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ছাত্র সংগঠনই কারো মদদ ছাড়া সংঘর্ষে জড়ায় না।’ ‘তাই একই অপরাধের কারণে ছাত্রদের শাস্তি হলে শিক্ষকদের কেন শাস্তি হবে না’ প্রশ্ন রাখেন তিনি। আর শিক্ষকদের সংগঠনের পক্ষ থেকে সাংগাঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার অবকাশ আছে বলে মনে করেন ড. সদরুল আমিন।
একই সাথে ছাত্র সংগঠনের এমন ‘মাস্তানি’ নিয়ন্তণে মূল দলের বড় ভূমিকা আছে বলেও মত দেন এই বিশ্লেষক।-প্রিয়.কম
Discussion about this post