আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনির শিকার হয়ে দুই ব্যক্তির মৃত্যুর ঘটনায় ১২জনকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছে ভারতের একটি আদালত। একই সঙ্গে আসামিদের ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।
সোমবার (১১ নভেম্বর) বেলা ২টার দিকে দেশটির পূর্ব বর্ধমানের কালনা আদালত এ রায় ঘোষণা করে।
২০১৭ সালের ২০ জানুয়ারির ওই ঘটনায় রায় দেওয়ার সময় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক তপনকুমার মণ্ডল মন্তব্য করেন, গত কয়েক বছরে গণপিটুনিতে ১২৪ জনের মৃত্যু হয়। এ রায় পুলিশের প্রতি আস্থা ফেরাবে।
পূর্ব বর্ধমানের পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, সাক্ষীদের নিরাপদ রেখে অভিযুক্তরা যে ঘটনার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত, সেটা প্রমাণ করা কঠিন ছিল। সে দিক থেকে এই রায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই ঘটনার তদন্তকারী অফিসার হাসান পারভেজকে জেলা পুলিশের তরফে পুরস্কার দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
কালনার বারুইপাড়ার ওই মামলায় শুক্রবারই ১২ জনকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত। এ দিন আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয় তন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়, সমরেশ হালদার, গণেশ দাস, তাপস রায়, নাজির শেখ, বাবু সরকার, প্রীতম কর্মকার, রাজু পাত্র, কুন্তল দেবনাথ, মিনতি হালদার, সুমন মণ্ডল ও সাগর বাছারকে। সবাই বারুইপাড়ার বাসিন্দা। রায় শুনে কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি অসীমকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া, গণপিটুনি এই মুহূর্তে জ্বলন্ত সমস্যা। এই রায় যুগান্তকারী।
২০১৭ সালের ওই দিন গাছে কীটনাশক ছড়ানোর জন্য নদিয়ার রানাঘাট থেকে কালনার বারুইপাড়ায় যান কয়েকজন। তাদের ছেলেধরা সন্দেহে শুরু হয় গণপিটুনি। মারা যান অনিল বিশ্বাস এবং নারায়ণ দাস নামে দু’জন। গুরুতর জখম হন মধুমঙ্গল দাস, ব্যঞ্জন বিশ্বাস ও মানিক সরকার। পরে মৃত অনিল বিশ্বাসের ছেলে রাজু বিশ্বাস কালনা থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। ওই বছরের ১৪ এপ্রিল ২৬ জনের নামে চার্জশিট দেওয়া হয়।
কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী আশিস চৌধুরী বলেন, গণপিটুনির ঘটনায় সাধারণত অভিযোগকারী ও অভিযুক্ত পরস্পরের অপরিচিত হওয়ায় সাক্ষীর অভাবে অভিযুক্তেরা খালাস পায়। এ ক্ষেত্রে পুলিশের সক্রিয়তার কারণেই অভিযুক্তদের চিহ্নিত করে শাস্তি দেওয়া গিয়েছে।
গণপিটুনিতে নিহত নারায়ণ দাসের স্ত্রী তারামণি দাস বলেন, ‘২০১৭ থেকে এ দিনটার জন্য অপেক্ষা করছি। তবে রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছেন সাজাপ্রাপ্তদের পক্ষের অন্যতম আইনজীবী অতনু মজুমদার।
Discussion about this post