বেলজিয়ামের সালিহা বেন আলির মতো গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলায় জড়িত নিবরাস ইসলামের পরিবারসহ তিনটি পরিবার জঙ্গিবাদবিরোধী কার্যক্রমে যুক্ত হতে চায়। পরিবারগুলো বলছে, জঙ্গিবাদ কীভাবে সন্তানকে পরিবার থেকে কেড়ে নেয়, কীভাবে সর্বনাশা কার্যক্রমে যুক্ত করে এবং তার প্রভাব কতটা ভয়ংকর হয়, সেই উপলব্ধির কথা তারা তুলে ধরতে চায়। যাতে আর কোনো পরিবার এই বিপদের মুখে না পড়ে।
এই পরিবারগুলোর মধ্যে রয়েছেন ঢাকার গুলশান হামলায় অংশগ্রহণকারী ও নিহত পাঁচ জঙ্গির একজন নিবরাসের বাবা-মা, রূপনগরে পুলিশের অভিযানে নিহত মেজর (অব.) জাহিদুল ইসলামের শ্বশুর-শাশুড়ি ও কল্যাণপুরের জঙ্গি আস্তানায় পুলিশের অভিযানে নিহত জুবায়েরের বাবা-মা। তাঁরা গত বুধবার ঢাকায় আসা তিউনিসীয় বংশোদ্ভূত বেলজিয়ামের নাগরিক সালিহা বেন আলির সঙ্গে দেখা করেন এবং জঙ্গিবাদবিরোধী কার্যক্রমে যুক্ত হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন। ওই সময় মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট ও পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
সালিহা বেন আলির ছেলে সাবরি বেন আলি (১৮) জঙ্গিবাদে জড়িয়ে সিরিয়ায় যান এবং আইএসের পক্ষে যুদ্ধ করতে গিয়ে সেখানেই নিহত হন। সালিহা এখন বিশ্বব্যাপী জঙ্গিবাদবিরোধী প্রচার চালান।
গুলশান হামলার পর নিহত নিবরাস দেশে অনেকটা জঙ্গিবাদের ‘পোস্টার বয়’ হিসেবে প্রচারে আসে। রাজধানীর উত্তরার বাসিন্দা নিবরাসের ব্যবসায়ী বাবা নজরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘হলি আর্টিজানে হামলার পর আমি ও নিবরাসের মা কোথাও যাই না। সামাজিক অনুষ্ঠান এড়িয়ে চলি। বন্ধুবান্ধবের সঙ্গেও যোগাযোগ করি না। অথচ এই উত্তরায় আমি আর আমার ছেলে ছিলাম ফুটবলের সেরা জুটি। সবাই আমাদের চিনত।’ তিনি বলেন, ছেলে হারানোর কষ্ট অসহনীয়, জঙ্গিবাদে জড়িয়ে ছেলে হারানোর কষ্ট আরও ভয়াবহ। এই কষ্টের কথাটা যারা জঙ্গিবাদের ঝুঁকিতে আছে তাদের ও তাদের পরিবারের জানা দরকার।
মেজর (অব.) জাহিদের শাশুড়ি জোহরা আক্তার গণমাধ্যমকে বলেন, তাঁর জামাতা মারা গেছেন, মেয়ে জেবুন্নেসা শিলা আছেন কারাগারে। তিনি বলেন, ‘আমার মেয়ে এখন আর আত্মঘাতী হতে চায় না। জঙ্গিবাদ যে কতটা খারাপ তার থেকে ভালো আর কে বোঝে? ছোট বাচ্চাটা নিয়ে কারাগারে। বড়টা মায়ের কাছে যাওয়ার জন্য শুধু কাঁদে। জঙ্গিবাদ মায়ের কাছ থেকে সন্তানকে দূরে সরিয়ে নেয়। আমার মেয়ে আমার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। এখন সে বিচ্ছিন্ন নিজের মেয়ের থেকে।’
হলি আর্টিজানে হামলায় অংশ নিয়ে নিহত হন, এমন এক জঙ্গির বাবা বলেন, জঙ্গিবাদবিরোধী কার্যক্রমে এমন পরিবারগুলোকে যুক্ত করার উদ্যোগ খুব ভালো। কিন্তু বাংলাদেশ এখনো এর জন্য প্রস্তুত নয়। মানুষ তাদের সহজভাবে গ্রহণ করবে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই বাবা বলেন, ‘আমরা যে ক্যাম্পেইন করব, নিরাপত্তা কে দেবে? ছেলে নিখোঁজ হওয়ার পর আমরা তো সব কটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে গিয়েছি। পীর-ফকির, সন্ন্যাসী কাউকে বাদ দিইনি। ছেলের হদিস পাইনি। এখন জঙ্গিরা যে হামলা করবে না, তার কী নিশ্চয়তা?’
নোয়াখালী সরকারি কলেজের ছাত্র জুবায়ের গত বছরের ২৭ আগস্ট কল্যাণপুরে অন্য জঙ্গিদের সঙ্গে নিহত হন। তাঁর বাবা আবদুল কাইয়ূম ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, ‘জুবায়েরকে যারা নষ্ট করেছিল, তারা থানায় আত্মসমর্পণ করেছে। তাদের একজন আমার ভাইপো। তাকে দেখলেই আমার ছেলেটার কথা মনে হয়। ছেলে না হারালে আমিও ভাবতাম এগুলো সাজানো নাটক। কল্যাণপুরের ঘটনার পর বেশ কবার পুলিশের সঙ্গে কথা হয়েছে। আমি এখন বিষয়টা বুঝি। কিন্তু আমার এলাকার অন্যরা এখনো বোঝে না। এ জায়গায় মানুষকে বোঝানো খুব দরকার।’ -প্রথম আলো
Discussion about this post