তারা দাবি করেছেন, হেফাজতে ইসলামের মামলায় আসামির জামিন নিতে না পেরে তারা মনিরুজ্জামান মাসুদ ওরফে ডনকে টাকা ফেরত দিয়েছিলেন। কোন ধরনের জঙ্গি অর্থায়নের সঙ্গে তারা সম্পৃক্ত নন।
রোববার (২৩ আগস্ট) বাঁশখালীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সাজ্জাদ হোসেনের আদালতে তিন আইনজীবী ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।
তিন আইনজীবী হলেন, ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানা, অ্যাডভোকেট হাসানুজ্জামান লিটন ও অ্যাডভোকেট মাহফুজ চৌধুরী বাপন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, জবানবন্দিতে আইনজীবীরা জানান-হেফাজত ইসলামের মামলায় কয়েকজন আসামির জামিন নেয়ার জন্য কয়েক দফায় তারা টাকা (সুনির্দিষ্ট সংখ্যা উল্লেখ করে) পেয়েছিল। কিন্তু হাইকোর্ট থেকে তারা আসামিদের জামিন নিতে ব্যর্থ হন। পরে সেই টাকা তারা কয়েক দফায় তিনটি ব্যাংকের মাধ্যমে মনিরুজ্জামান মাসুদ ওরফে ডনের হিসাব নম্বরে ফেরত দেন। জঙ্গি অর্থায়নের জন্য তারা কাউকে কোন অর্থ দেননি। তিনটি ব্যাংক হচ্ছে ডাচ বাংলা ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক এবং এক্সিম ব্যাংক।
জবানবন্দিতে তিন আইনজীবী হেফাজতে ইসলামের মামলা শুরু থেকে পরিচালনা, বিভিন্নসময় অর্থ নেয়া, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ, সর্বশেষ র্যাবের হাতে গ্রেপ্তারের বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা দেন বলে সূত্র জানিয়েছে।
তবে তিন আইনজীবীর এ জবানবন্দিকে ‘পরোক্ষভাবে’ জঙ্গি অর্থায়নের বিষয়টি স্বীকার করে নেয়া বলে মনে করছেন রাষ্ট্রপক্ষের কৌসুলী ও বাঁশখালী আদালতের সহকারি পিপি বিকাশ রঞ্জন ধর।
অ্যাডভোকেট বিকাশ রঞ্জন ধর বাংলানিউজকে বলেন, জবানবন্দিতে তারা মনিরুজ্জামান ডনকে টাকা দেয়ার কথা স্বীকার করেছেন। হেফাজতে ইসলামের মামলা পরিচালনার বিষয়ে বলেছেন। কিন্তু ডন তো হেফাজতে ইসলামের নেতা নন। তিনি হামজা ব্রিগেডের অন্যতম শীর্ষ নেতা। তারা হামজা ব্রিগেডকে টাকা দিয়েছেন আর বলছেন হেফাজতের মামলা পরিচালনার টাকা। বিষয়টি স্ববিরোধী। এটা পরোক্ষভাবে জঙ্গি অর্থায়ন স্বীকার করে নেয়া।
‘তিনজন সুপ্রিম কোর্টের মহামান্য আইনজীবী। তারা টেকনিক্যালি কথা বলেছেন। তারা সরাসরি স্বীকার করেননি, পরোক্ষভাবে করেছেন। ’ বলেন এপিপি বিকাশ।
সূত্র জানায়, আদালতে তিন আইনজীবীর জামিনের আবেদন জানানো হয়েছিল। শুনানি শেষে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
১৮ আগস্ট রাতে ঢাকার ধানমন্ডি থেকে তিন আইনজীবীকে গ্রেপ্তারের পর চারদিনের রিমান্ডে নেয় র্যাব।
তিন আইনজীবীর মধ্যে ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানা (৩৯) বিএনপির কেন্দ্রীয় তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এবং সাবেক হুইপ সৈয়দ ওয়াহিদুল আলমের মেয়ে। তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য পদেও আছেন তিনি।
অপর দু’জন অ্যাডভোকেট হাসানুজ্জামান লিটন (৩০) সুপ্রিম কোর্টে এবং অ্যাডভোকেট মাহফুজ চৌধুরী বাপন (২৫) ঢাকা জজ কোর্টে আইন পেশায় যুক্ত আছেন।
র্যাব জানিয়েছিল, তিন আইনজীবী চার ধাপে মনিরুজ্জামান ডনসহ কয়েকজনের অ্যাকাউন্টে নগদে এক কোটি আট লক্ষ টাকা জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানা দিয়েছেন ৫২ লক্ষ টাকা। তিনি প্রথম ধাপে ২৫ লক্ষ ও পরবর্তী ধাপে ২৭ লক্ষ টাকা জমা দিয়েছেন। হাসানুজ্জামান লিটন ৩১ লক্ষ টাকা এবং বাপন দিয়েছেন ২৫ লক্ষ টাকা।
গ্রেপ্তারের পর বুধবার (১৯ আগস্ট) রাতে তিন আইনজীবীকে বাঁশখালী উপজেলার লটমণি পাহাড়ে শহীদ হামজা ব্রিগেডের গোপন সামরিক আস্তানা থেকে অস্ত্র-বিস্ফোরক উদ্ধারের ঘটনায় দায়ের হওয়া একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে হাজির করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের সাতদিনের রিমান্ডের আবেদন জানানো হয়েছিল। বাঁশখালীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সাজ্জাদ হোসেন তাদের চারদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
চলতি বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি হাটহাজারী এলাকায় ‘আল মাদরাসাতুল আবু বকর’ নামে একটি কওমি মাদ্রাসায় অভিযান চালিয়ে ১২ জনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। মাদ্রাসাটিকে হামজা ব্রিগেডের তাত্ত্বিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে উল্লেখ করেছে সংস্থাটি।
২১ ফেব্রুয়ারি বাঁশখালীর লটমণি পাহাড় থেকে ৫ জন, ২৮ ফেব্রুয়ারি নগরীর হালিশহর থানার একটি আবাসিক এলাকা থেকে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
১২ এপ্রিল (রোববার) রাতে নগরীর কোতয়ালি থানার মিডটাউন আবাসিক হোটেলে অস্ত্র কেনাবেচার সময় বিক্রেতা মোজাহের হোসেন মিঞা (৩৫) এবং বাঁশখালীতে জঙ্গি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সাব্বির আহমেদ ওরফে মুহিবকে (২৩) গ্রেপ্তার করে র্যাব। তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওইদিন রাতে আকবর শাহ থানার একে খান মোড়ে শ্যামলী বাস কাউন্টার থেকে মো.কামাল উদ্দিন ওরফে মোস্তফা (২৪) এবং আশরাফ আলীম ওরফে আদনানকে (২৫) আটক করা হয়।
Discussion about this post