বিডি ল নিউজঃ
ভারতের পশ্চিমবঙ্গে জঙ্গিদের মোকাবিলায় এবার নামানো হচ্ছে ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ড (এনজিএস) কমান্ডোদের। আজ-কালের মধ্যে যেকোন মহূর্তে জঙ্গিডেরা শিমুলিয়া মাদ্রাসায় উপস্থিত হবে জঙ্গি মোকাবিলায় বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ভারতীয় এই বাহিনীর সদস্যরা। সেখানে নতুন করে আবিষ্কৃত সুরঙ্গপথের রহস্য উদ্ঘাটনের পাশাপাশি এসব ঘটনার তদন্তে থাকা ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এনআইএ) সহ অন্যান্য সংস্থার কর্মীরা নিরাপত্তা প্রদান করবে এনএসজি। অন্যদিকে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে তদন্তে নেমে দিশেহারা অবস্থা দেশটির গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর। একটি রহস্যের কিনারা করার আগেই সামনে চলে আসছে নতুন আরো বহু রহস্য। বুধবারও নতুন করে শিমুলিয়া মাদ্রাসার নিচে সুরঙ্গপথ ও একই এলাকায় ২৫ কাঠা জমির উপর জঙ্গিদের অন্য একটি মাদ্রাসার কাঠামোর সন্ধান পাওয়া গেছে। এতে পশ্চিমবঙ্গে জঙ্গি নেটওয়ার্কের ভয়াবহতা উপলব্ধি করে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে সংশ্লিষ্টদের কপালে। জানা গেছে, বর্ধমান জেলার খাগড়াগড় এলাকায় গত ২ অক্টোবর জঙ্গিদের একটি ডেরায় বিস্ফোরণের পর প্রথম দিকে ঘটনাটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে ধারণা করা হলেও এ ঘটনার তদন্তে নেমে গোয়েন্দাদের ‘কেঁচো খুড়তে কেউটে’র সন্ধানের অবস্থা হয়েছে। ঐ বিস্ফোরণের পর জীবিত আটক জঙ্গি হাসেম মোল্লা, আমিনা বিবি, রাজিয়া বেগমদের জেরা ও ঘটনাস্থলে পাওয়া তথ্য নিয়ে অনুসন্ধান করতে গিয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনআইএ ও সিআইডিসহ অন্যান্য সংস্থাগুলো বিস্মিত। ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া মোবাইল সিম কার্ডের ফোন নম্বর, বিভিন্ন নথি, সন্ধান পাওয়া জঙ্গিডেরার ভাড়াটিয়া, মালিক ও তাদের পরিচিতদের সম্পর্কে খোঁজ খবর নিতে গিয়ে বেরিয়ে আসছে বহু তথ্য। এনআইএ সূত্র জানায়, তদন্ত শুরুর পর তারা জানতে পেরেছেন কত দ্রুত এ রাজ্যে জঙ্গিরা তাদের নেটওয়ার্ক ছড়িয়ে দিয়েছে। নেটওয়ার্ক তৈরির পর বিভিন্ন স্থানের নারী-পুরুষদের একত্রিত করে তাদেরকে অস্ত্র ও বিস্ফোরক তৈরিতে পারদর্শী করে তাদের মাধ্যমেই বিস্ফোরক ও সরঞ্জাম বিভিন্ন স্থানে জড়ো করে তারা। তবে বর্ধমান কান্ডের পর জঙ্গিরা তাদের অবস্থান পরিবর্তন করে আত্নগোপনে রয়েছে। এদিকে আত্নগোপনে থাকলেও ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার হওয়া জঙ্গি ও বিভিন্ন নথিগুলো থেকে গোয়েন্দারা যেসব চাঞ্চল্যকর তথ্য পাচ্ছে তাতে রাজ্যের নিরাপত্তা নিয়ে চরম উদ্বিগ্ন গোয়েন্দারা। এ উদ্বেগ আরো বাড়িয়েছে প্রতিদিন জঙ্গিদের ডেরা থেকে উদ্ধার হওয়া সর্বাধুনিক বিস্ফোরক পদার্থগুলো। সূত্র জানিয়েছে, এরই মধ্যে গতকাল বুধবার জঙ্গিদের নতুন আরো একটি ডেরা এবং গোপন সুরঙ্গপথের সন্ধান মিলেছে। যা ভাবিয়ে তুলেছে সংশ্লিষ্টদের। নতুন ও রহস্যময় সুরঙ্গপথটি পাওয়া গেছে ইতিপূর্বে আবিষ্কৃত জঙ্গিডেরা শিমুলিয়া মাদ্রাসার ভেতরে। মাদ্রাসাটির চারপাশে অনুসন্ধান করতে গিয়ে মঙ্গলবার সুরঙ্গটির বিষয়ে নিশ্চিত হয় সিআইডি’র বম্ব স্কোয়াডের সদস্যরা। তারা বিষয়টি এনআইএ’কে জানালে নিজেদের নিরাপত্তা নিয়েই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন এনআইএ’র কর্মকর্তারা। কারণ, ঐ সুরঙ্গপথে কে কেন কোথায় যাতায়াত করত এবং এর ভেতরে ভয়াবহ দাহ্য কিছু রয়েছে কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত করা যায়নি। ফলে তদন্তকারীদের উপর হামলার আশংকাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এ কারণে সেখানে আনা হচ্ছে জঙ্গি মোকাবিলায় বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বাহিনী ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ড কমান্ডোদের। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে এই বাহিনী মূলত জঙ্গিদের হাতে পণবন্ধী ও দেশের নিরাপত্তা স্বার্থে শত্রু ডেরায় হানা দেওয়ার কাজ করে থাকে। কিন্তু শিমুলিয়ার সুরঙ্গটিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে নেওয়ায় এই বাহিনী এখানে এসে সুরঙ্গ রহস্যের উন্মোচন ও এখানে তদন্তে থাকা এনআইএ’র কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা বিধানের কাজ করবে। সুরঙ্গের বিষয়ে সিআইডির বম্ব স্কোয়াডের সুস্পষ্ট রিপোর্টের পর এনএসজি ঘটনাস্থলে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে এনআইএর কর্মকর্তারা সাংবাদিকদের জানান। আজ-কালের মধ্যেই তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছাবে। অন্যদিকে শিমুলিয়ার মাদ্রাসার অদূরে মুকিমনগরে নতুন করে আরো একটি মাদ্রাসার সন্ধান মিলেছে। ২৫ কাঠা জায়গার উপর মাদ্রাসার নির্মাণ কাজ চলছিল। ইউসুফ নামক জঙ্গি সংশ্লিষ্ট এক ব্যক্তি ৮লক্ষ ৭৫ হাজার টাকায় জমি কিনে এখানে মাদ্রাসাটি নির্মাণের কাজ করছিলেন। ইতিমধ্যে পাঁচিলে ঘেরা জায়গাটিতেও জঙ্গিদের আনাগোনা ছিল বলে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছে। ফলে সেখানে তদন্ত শুরু হয়েছে। এদিকে জঙ্গি নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি সংস্থার তদন্তের মধ্যেও জঙ্গিরা থেমে নেই। মালদহ বিস্ফোরণের পর রাতারাতি গর্ত ভরাট ও ভাঙা পাঁচিল নির্মাণের পর জঙ্গিরা এবার বর্ধমান মেডিকেল কলেজের মর্গ থেকে নিহত জঙ্গি শাকিল গাজী ও শোভানের লাশ চুরির চেষ্টা করেছে বলে মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষা মঞ্জুশ্রী রায় অভিযোগ করেছেন। তিনি জানান, রবিবার রাতে সংঘবদ্ধ একটি চক্র যেখানে শাকিল ও শোভানের লাশ রয়েছে সেই দেওয়ালটি ভাঙার চেষ্টা করে। পরে পুলিশে খবর দেওয়া হলে তারা পালিয়ে যায়। এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ করা হয়েছে বলে তিনি জানান। তবে বর্ধমানের পুলিশ সুপার সৈয়দ মুহম্মদ মির্জা বলেছেন, এ বিষয়ে কোন লিখিত অভিযোগ তারা পাননি। অন্যদিকে এরই মধ্যে আরো একটি জঙ্গিডেরায় বিস্ফোরণের ঘটনা পুলিশ লুকিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এনআইএ’র কর্মকর্তারা সাংবাদিকদের জানান, গত ৫ অক্টোবর মালদহের বৈষ্ণবনগরের ইংরেজবাজার এলাকায় ঐ বিস্ফোরণে আরো ৩ জঙ্গি নিহত ও ৩ জন আহত হয়েছে বলে তারা জানতে পেরেছেন। আহত ৩ জঙ্গিকে কলকাতার পার্কসার্কাসের একটি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। ঘটনাটি জানার পর এনআইএর একটি দল ঐ হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে উজের শেখ, আব্দুল্লা শেখ ও জসীম শেখ নামক ৩ জনের সন্ধান পায়। তবে আহতরা এনআইএর কাছে দাবি করেছে তারা জঙ্গি নয়। অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিরা তাদের উপর বোমা নিক্ষেপ করে পালিয়ে যাওয়ায় তারা আহত হয়েছে। কিন্তু এ বক্তব্য মানতে নারাজ রাজ্যের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো। মালদহ জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক নরেন্দ্র তিওয়ারি, সিপিএম এর জেলা সম্পাদক অম্বর মিত্র ও বিজেপির নেতারা এসব ঘটনার জন্য জঙ্গিদের পাশাপাশি ক্ষমতাসীন তৃণমূল নেতাদের দায়ী করে ঘটনা চাপা দেওয়ার চেষ্টায় পুলিশকেও তুলোধুনো করেছেন। তবে মালদহের এসপি প্রসূন বন্দোপাধ্যায় বলেন, পুলিশ কোন প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা করেনি। কয়েকজন লোক আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তারা সুস্থ হলেই গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হবে বলে তিনি জানান। এদিকে জঙ্গি নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও নানা জল্পনার মধ্যেই নিয়মিত অভিযান চলছে। গতকাল বুধবারও নিহত জঙ্গি শাকিল গাজীর বাড়ি, হাবীবুরের বাড়ি, শিমুলিয়া মাদ্রাসা, বোরহান শেখের বাড়ি ও বীরভূম, বর্ধমানে অভিযান চালিয়েছে গোয়েন্দারা। পাওয়া গেছে আরো নতুন তথ্য। তবে আজ-কালের মধ্যে ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ডের কমান্ডো বাহিনী শিমুলিয়াসহ অন্যান্য স্থানে অভিযানে নামলে চমকে যাবার মতই কোন খবর মিলতেও পারে। আপাতত সেদিকেই বিশেষ নজর সংশ্লিষ্টদের।
Discussion about this post