জব্দ করা ও মালিকবিহীন গাড়ি পুলিশের হেফাজতে সরকারি কাজে ব্যবহার করা হবে। এ জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিধি প্রণয়ন করছে। এই বিধি কার্যকর হওয়ার পর পুলিশ নিবন্ধনবিহীন গাড়ি জব্দেরও সুযোগ পাবে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সুপারিশে মন্ত্রণালয় ‘জব্দকৃত ও মালিকবিহীন যানবাহন পুলিশ বাহিনীর কর্তৃত্বে ও হেফাজতে ব্যবহারের বিধিমালা-২০১৬’ তৈরির কাজ করছে। ফৌজদারি কার্যবিধির অধীন এই বিধি তৈরি করা হয়েছে। গত বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এ বিধির খসড়া সংসদীয় কমিটির বৈঠকে উপস্থাপন করা হয়। প্রস্তাবিত এই বিধিতে ‘জব্দ করা’ ও ‘মালিকবিহীন গাড়ি’ বলতে চোরাই, মাদকদ্রব্য বহনকারী, পরিত্যক্ত ও নিবন্ধনবিহীন গাড়িকে বোঝানো হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, আইন মন্ত্রণালয়ের যাচাই-বাছাই শেষে বিধিটি গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে।
এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি টিপু মুন্শি বলেন, কমিটির সুপারিশের আলোকে মন্ত্রণালয় বিধি তৈরির কাজ করছে। বিষয়টি আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত নেওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। তিনি বলেন, পুলিশের গাড়ি রিকুইজিশন ক্ষমতার প্রয়োগ নিয়ে নানা বিতর্ক ও গাড়ি মালিকদের হয়রানির অভিযোগ রয়েছে। নতুন বিধিতে যাতে মানুষকে হয়রানির কোনো সুযোগ না থাকে, সেদিকেও খেয়াল রাখার পরামর্শ দিয়েছে কমিটি। তিনি বলেন, বন্দরগুলোয় বছরের পর বছর পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকা গাড়িগুলোও পুলিশের ব্যবহারের জন্য দেওয়া প্রয়োজন বলে কমিটি মনে করে।
বৈঠকের কার্যপত্র থেকে জানা যায়, বিভিন্ন সময়ে জব্দ করা ও মালিকবিহীন অসংখ্য গাড়ি দীর্ঘদিন ধরে পুলিশের হেফাজতে পড়ে আছে। ব্যবহার না হওয়ায় এসব গাড়ি কিছুদিন পর ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। বর্তমানে এসব গাড়ি সরকারি কাজে ব্যবহারের ক্ষেত্রে আইনি বাধা আছে। এই বাধা দূর করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনের অধীনে নতুন একটি বিধি প্রণয়নের কাজ শুরু করে।
প্রস্তাবিত বিধিতে বলা হয়েছে, আদালতের আদেশে জব্দ করা ও মালিকবিহীন গাড়ি পুলিশের হেফাজতে সরকারি কাজে ব্যবহার করা যাবে। মালিকের জিম্মায় দেওয়ার সুযোগ নেই এমন গাড়ি পুলিশের হেফাজতে ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া যাবে। পরিত্যক্ত ও মালিকবিহীন গাড়ি মালিকের কাছে ফিরিয়ে দিতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিতে হবে। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের ছয় মাসের মধ্যে মালিক গাড়ি বুঝে না নিলে আদালতের আদেশে তা বাজেয়াপ্ত হবে এবং সরকারি কাজে ব্যবহারের জন্য পুলিশ বাহিনীর হেফাজতে দেওয়া হবে। এক থানায় জব্দ করা গাড়ি প্রয়োজনে অন্য থানায় ব্যবহার করা যাবে।
আরও বলা হয়েছে, আদালতের নির্দেশে জব্দ করা গাড়ি নিবন্ধনবিহীন হলে ব্যবহারের জন্য তার নিবন্ধনের প্রয়োজন হবে না। নিবন্ধিত গাড়ির ক্ষেত্রে ট্যাক্স টোকেন, ইন্স্যুরেন্স, রুট পারমিটের প্রয়োজন হবে না। জব্দ করা গাড়ি ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়লে তা নিলামে বিক্রি করা হবে। এ ছাড়া সরকারি কাজে ব্যবহারের সময়ে আদালত কোনো গাড়ি অন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে হস্তান্তরের নির্দেশ দিলে, পুলিশ সেই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে হস্তান্তর করবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, চোরাকারবারি ও মাদক ব্যবসায়ীরা সাধারণত বৈধ গাড়ি ব্যবহার করে না। পুলিশ যখন এসব গাড়ি আটক করে, তখন এর বৈধ মালিককে খুঁজে পাওয়া যায় না। আটকের পর দীর্ঘ সময় এক জায়গায় পড়ে থাকার কারণে একসময় গাড়িগুলো নষ্ট হয়ে যায়। রাষ্ট্রীয় সম্পদের এই অপচয় রোধে নতুন এ বিধি প্রণয়ন হচ্ছে। -সমকাল
Discussion about this post