ক্রয়ের আগে অবশ্যই জমি সংশ্লিষ্ট সকল কাগজপত্র খুব সতর্কতার সাথে যাচাই বাছাই করা উচিত। কারন সামান্যতম অসতর্কতার ফলে আপনি জালিয়াতির শিকার হতে পারেন এবং সেক্ষেত্রে আপনি আপনার কষ্টার্জিত টাকা ও মূল্যবান সময় দুটোই হারাবেন। তাই জমিজমা ক্রয়ে একটু সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।
- যে ব্যাক্তি জমিটি বিক্রয় করবে ঐ জমিতে বিক্রয়কারীর মালিকানা আছে কিনা তা নিশ্চিত হতে হবে। তাই প্রস্তাবিত জমিটির সর্বশেষ রেকর্ডে বিক্রয়কারীর নাম আছে কিনা দেখতে হবে। সিএস, আরএস ও অন্যান্য খতিয়ানের ক্রম মিলেয়ে দেখতে হবে। যিনি আপনার কাছে জমিটি বিক্রি করছে তিনি যদি অন্য কোনো ব্যাক্তির কাছ থেকে জমিটি ক্রয় করে থাকেন তাহলে অবশ্যই তাকে জমিটির ভায়া দলিল রেজিস্ট্রিশানের সময় উপস্থাপন করতে হবে।
- যেকোনো উপায়ে জমির মালিকানা হলেও জমিটির নামজারি ঠিক আছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে হবে। যদি বিক্রেতা ওয়ারিশসূত্রে জমিটির মালিক হয় তবে বিক্রেতার ফরায়েজ সার্টিফিকেট, বাটোয়ারা দলিল, পূর্বপুরুষদের মালিকানার ধারাবাহিকতা পরীক্ষা করে নিতে হবে। এই ধরনের জমি ক্রয়ের ক্ষেত্রে প্রিয়েমশন বা অগ্রক্রয় একটি গুরত্তপূর্ণ বিষয়, তাই আইনানুযায়ী সকল অংশীদারকে নোটিশ প্রদান করতে হবে। কেউ আপত্তি জানালে সেটি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জমি ক্রয় করা উচিত নয়। এজমালি জমি ক্রয়ে সকল অংশীদারগণকে সাফ কবলা দলিলে সাক্ষী রাখা অতীব জরুরী তাহলে পরবর্তীতে কোন আপত্তি তোলার সুযোগ থাকবে না। সবচেয়ে গুরত্তপূর্ণ বিষয় হল বিক্রেতা জমির যতটুকু অংশ বিক্রয় করতে সক্ষম তার বেশী ক্রয় করা একদমই উচিত নয়।
- বিক্রেতা যদি অন্য কোন সূত্রে জমিটির মালিক হয় যেমন-দান, নিলাম, ডিক্রিমূলে ইত্যাদি তবে জমি প্রাপ্তির সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র পরীক্ষা করা উচিত।
- জমিটির হালনাগাদ ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করা আছে কিনা তা খেয়াল রাখতে হবে। ভূমি কর না দেয়ায় অনেক সময় সার্টিফিকেট মামলা করা হয়। এছাড়াও ভূমিতিতে অন্য কোন মামলা আছে কিনা তা দেখতে হবে।
- জমিতে বিক্রেতার শান্তিপূর্ণ দখল কার্যকর আছে কিনা তা ভালো করে যাচাই করে দেখতে হবে। কারন কোন সম্পত্তির বা জমির প্রকৃত মালিকানা বলতে দলিল ও দখল দুই-ই বুঝায়। একটি ছাড়া অন্যটি অসম্পূর্ণ।
- জমিটির পাশে সরকারের খাস জমি আছে কিনা অথবা জমিটিতে সরকারের কোন স্বার্থ আছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে হবে। জমিটি অর্পিত কিংবা পরিতিক্ত সম্পত্তির তালিকায় আছে কিনা, তা খেয়াল রাখতে হবে। এছাড়াও দেখতে হবে জমিটি আগে কখন অধিগ্রহণ হয়েছিল কিনা বা প্রক্রিয়াধীন আছে কিনা অথবা ওয়াকফ, দেবোত্তর বা কোর্ট অব ওয়ার্ডসের জমি কিনা।
- জমিটি কখনো খাজনা অনাদায়ে বা অন্য কোন কারনে নিলাম হয়েছে কিনা তা দেখতে হবে।
- ঋণের কারনে জমিটি ব্যাংকের কাছে বন্ধক আছে কিনা তা যাচাই করে নিতে হবে।
- জমিটির প্রকৃত মালিক জমিটিতে কোনো অ্যাটর্নি বা আমমোক্তার নিয়োগ করেছে কিনা জেনে নিতে হবে। বিক্রেতা যদি পাওয়ার অব অ্যাটর্নি বা আমমোক্তারনামার মাধ্যমে ক্ষমতা পেয়ে থাকে, তাহলে যাচাই করে দেখতে হবে আসলে তিনি জমিটি বিক্রি করার পাওয়ার পেয়েছেন কিনা। আমমোক্তারনামাটি যথাযথ হয়েছে কিনা তা যাচাই করার জন্যে প্রকৃত মালিকের সাথে যোগাযোগ করে দেখতে হবে।
- জমিটি এর আগেও অন্য কোন ব্যাক্তির কাছে বিক্রি করা হয়েছিল কিনা তা দেখে নিতে পারেন।
- যদি আপনি কোনো আদিবাসীর জমি কিনতে চান তাহলে রেজিস্ট্রি করার সময় রেভিনিউ কর্মকর্তার লিখিত অনুমতি নিতে হবে। তবে এক আদিবাসী অন্য আদিবাসীর কাছে জমি বিক্রি করতে এই নিয়মটি মানতে হবেনা।
অতএব, জমি ক্রয়ের সময় উপরোক্ত বিষয় গুলো বিবেচনা করে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে জমি ক্রয় করলে কোনরূপ জালিয়াতির শিকার হবার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
লেখক: ড. বদরুল হাসান কচি, আইনজীবী ও সম্পাদক; ল‘ইয়ার্সক্লাববাংলাদেশ.কম
Discussion about this post