মোঃ ফয়জুল হাসান:
জমি ক্রয়ের আগে অবশ্যই জমি সংশ্লিষ্ট সকল কাগজপত্র খুব সতর্কতার সাথে যাচাই বাছাই করা উচিত। কারন সামান্যতম অসতর্কতার ফলে আপনি জালিয়াতির শিকার হতে পারেন এবং সেক্ষেত্রে আপনি আপনার কষ্টার্জিত টাকা ও মূল্যবান সময় দুটোই হারাবেন। তাই জমজমা ক্রয়ে এক্তু সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।
জমি ক্রয়ের ক্ষেত্রে প্রথমেই জমি সংক্রান্ত সকল কাগজপত্র বিক্রেতার কাছেথেকে চেয়ে নিয়ে পরীক্ষা করুন। যেহেতু সাধারন জনগন এ বিষয়ে কম জানেন তাই একজন দেওয়ানি আইন বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে পারেন বা তার পরামর্শ নিতে পারেন। তবে আপনি নিজেও কাগজপত্র পরীক্ষা করতে পারেন, সেক্ষেত্রে প্রথমেই বিক্রেতার কাছেথেকে নিম্নোক্ত সকল কাগজপত্রের ফটোকপি চেয়ে নিন-
- বিক্রেতা ক্রয়সূত্রে মালিক হলে সংশ্লিষ্ট জমির ক্রয় দলিল,
- বিক্রেতা যাহার নিকট থেকে জমিটি ক্রয় করেছেন সেই ব্যাক্তির ক্রয় দলিল (অন্যকোনোভাবে জমিটি প্রাপ্ত হলে তার দলিল)। এইরুপ ধারাবাহিকভাবে কমপক্ষে ২৫ বছরের বা সর্বশেষ চূড়ান্ত জরিপের পর থেকে যতবার বর্ণিত জমি হস্তান্তর হয়েছে,
- খতিয়ান বা পর্চা (রেকর্ড অব রাইট্স),
- খাজনার রশিদ ও ডিসিআর বা ডুপ্লিকেট কার্বন রশিদ,
- গ্যাসবিল, পানিবিল, বিদ্যুৎবিল ইত্যাদি বিক্রেতার নামে পরিশোধ হচ্ছে কিনা,
- অন্যান্য ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দলিল, ডিক্রি, ডকুমেন্ট ইত্যাদি,
- ভবন বা বিল্ডিং বা ফ্ল্যাট কেনার সময় সংশ্লিষ্ট দফতর থেকে নেয়া অনুমদিত নক্সা দেখতে হবে এবং সেই অনুসারে ভবন বা ফ্ল্যাট তৈরি হয়েছে কিনা তা দেখতে হবে।
এবার প্রাপ্ত ডকুমেন্ট বা দলিলগুলো যথাযত ফি প্রদানপূর্বক আবেদনের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট রেজিস্ট্রি অফিস থেকে বা জেলা পর্যায়ে ডিসির মহাফেজখানা থেকে বা সিটিকর্পোরেশন এলাকায় সিটিকর্পোরেশন থেকে ক্লার্কের মাধ্যমে যাচাই করা যায়। এক্ষেত্রে অতিরিক্ত সতর্কতার জন্য সর্বশেষ ২৫ বছরের জন্য সংশ্লিষ্ট জমিতির ক্রয়/বিক্রয় দলিলগুলো যাচাই করা উত্তম। এরুপ যাচাই এর মাধ্যমে জমিটির রেজিস্ট্রি সঠিক কিনা, বর্তমান মালিক কে, জমিটি কোথাও দায়বদ্ধ আছে কিনা, অন্য কাউকে আমমোক্তারনামা দেয়া আছে কিনা (পাওয়ার অব এটর্নি), জমিটির সঠিক পরিমাপ ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে সঠিক ও নির্ভুল তথ্য পাওয়া যায়।
যদি বিক্রেতা ওয়ারিশসূত্রে জমিটির মালিক হয় তবে বিক্রেতার ফরায়েজ সার্টিফিকেট, বাটোয়ারা দলিল, পূর্বপুরুষদের মালিকানার ধারাবাহিকতা পরীক্ষা করে নিতে হবে। এই ধরনের জমি ক্রয়ের ক্ষেত্রে প্রিয়েমশন বা অগ্রক্রয় একটি গুরত্তপূর্ণ বিষয়, তাই আইনানুযায়ী সকল অংশীদারকে নোটিশ প্রদান করতে হবে। কেউ আপত্তি জানালে সেটি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জমি ক্রয় করা উচিত নয়। এজমালি জমি ক্রয়ে সকল অংশীদারগণকে সাফ কবলা দলিলে সাক্ষী রাখা অতীব জরুরী তাহলে পরবর্তীতে কোন আপত্তি তোলার সুযোগ থাকবে না। সবচেয়ে গুরত্তপূর্ণ বিষয় হল বিক্রেতা জমির যতটুকু অংশ বিক্রয় করতে সক্ষম তার বেশী ক্রয় করা একদমই উচিত নয়।
বিক্রেতা যদি অন্য কোন সূত্রে জমিটির মালিক হয় জেমন-দান, নিলাম, ডিক্রিমূলে ইত্যাদি তবে জমি প্রাপ্তির সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র পরীক্ষা করা উচিত।
এইসব পরীক্ষা নিরীক্ষা সম্পন্ন হবার পর আসে সবচেয়ে গুরত্তপূর্ণ ধাপ। এই গুরত্তপূর্ণ বিষয়টা হল সংশ্লিষ্ট জমিতে বিক্রেতার শান্তিপূর্ণ দখল কার্যকর আছে কিনা কারন কোন সম্পত্তির বা জমির প্রকৃত মালিকানা বলতে দলিল ও দখল দুই-ই বুঝায়। একটি ছাড়া অন্যটি অসম্পূর্ণ।
জমি ক্রয়ের সময় উপরোক্ত বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখে পরীক্ষাপূর্বক নিষ্কণ্টক জমি ক্রয় করা উচিত এবং নিম্নোক্ত ধরনের জমি ক্রয় করা একেবারেই অনুচিত-
- খাস জমি বা অর্পিত সম্পত্তি,
- অধিগ্রহনকৃত জমি বা এরুপ সম্ভাবনাকৃত জমি,
- যাতায়াতের রাস্তা নেই এরুপ জমি,
- ইতোমধ্যে অন্যত্র বিক্রয়ের জন্য চুক্তিবদ্ধকৃত জমি,
- বন্ধকীকৃত জমি,
- কোন আদালতে মামলায় আবদ্ধ জমি,
- বিরোধপূর্ণ জমি।
অতএব, জমি ক্রয়ের সময় উপরোক্ত বিষয় গুলো বিবেচনা করে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে জমি ক্রয় করলে কোনরূপ জালিয়াতির শিকার হবার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
লেখকঃ শিক্ষার্থী, চতুর্থ বর্ষ, আইন বিভাগ, স্টামফোরড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ।
E-mail: hassan.foyzul@gmail.com
Discussion about this post