চট্টগ্রাম প্রতিনিধি: জরিপের নামে চাঁদাবাজি করতে তিন ইন্সপেক্টরসহ ৫জনকে আটক করেছে স্থানীয় জনতা। আটককৃতরা চট্টগ্রাম কর বিভাগ, কর অঞ্চল (৩) এর কর্মকর্তা। তারা হলেন ইন্সপেক্টর নাজমুল, শাহাজাহান, আব্দুল মুহিব ও তাদের সহকারী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র দাবিদার মোরশেদুল ইসলাম, মোঃ আদিল।
ঘটনাটি রবিবার চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ২নং গেইট জোবরা এলাকায় ঘটেছে।
জানা যায়, চট্টগ্রাম কর বিভাগের কর অঞ্চল-৩ হাটহাজারী সার্কেলের এর জরিপের কাজে নিযুক্ত আটককৃতরা বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে জোবরা গ্রামের বিশ্ববিদ্যালয় ২নং গেইট এলাকায় বিভিন্ন বাসা-বাড়ি ও দোকানপাটে জরিপ করতে গিয়ে করের নামে কৌশলে টাকা তুলতে থাকে।
স্থানীয় একটি ফার্মেসীর মালিক রঞ্জিতকে বিভিন্ন কথা বলে তিন হাজার টাকা কর দাবি করে। দোকানদার এত টাকা নাই জানিয়ে দোকানের ক্যাশ খুলে দেখায় ক্যাশ বাক্সে তিনশ টাকা আছে। অবশেষে তিনশ টাকাই নেন ঐ কর্মকর্তারা।
পরে হার্ডওয়ার দোকানের মালিক জামসেদ ও মুদি দোকানদার সোহেলকে বিভিন্ন প্রশ্নে জর্জরিত করে তিন ও দুই হাজার টাকা দাবি করে। এক পর্যায়ে তারা টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে তাদের হুমকি ধমকী দেয় কর্মকর্তারা।
উপস্থিত জনতা তাদের টাকার ব্যাপারে চ্যালেঞ্জ করলে তারা সদুত্তর দিতে না পারায় স্থানীয়রা তাদের অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে স্থানীয় ইউপি সদস্য সোহেল ও মহিউদ্দিন সংবাদ পেয়ে তাৎক্ষণিক পরিষদের চেয়ারম্যানকে অবহিত করে জনগণের রোষানল থেকে ঐ পাঁচজনকে উদ্ধার করে তাদের ব্যবহৃত একটি হাইসসহ (যার নং- চট্টমেট্রো চ ৫১-২০৩৬) পরিষদে নিয়ে আসে।
পরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার কার্যালয়ে নিয়ে গেলে তারা টাকা নেয়ার বিষয়টি স্বীকার করে এবং উপস্থিত সবার সামনে ফার্মেসির মালিক রঞ্জিতকে নেয়া তিনশ টাকা ফেরত দেয়।
এদিকে খবর পেয়ে অতিরিক্ত সহকারী কর কমিশনার মোঃ আব্দুল আউয়াল মজুমদার ও চৌধুরী আশরাফ উদ্দিন উপজেলা কার্যালয়ে এসে ঘটনার বিবরণ শুনে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান। পাশাপাশি নির্বাহী অফিসারকে তাদের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগের অনুরোধ জানিয়ে অভিযুক্তদের তাদের জিম্মায় দেয়ার অনুরোধ জানান।
ফতেপুর ইউপি চেয়ারম্যান এডভোকেট শামিম বলেন, ইউপি সদস্যের ফোন পেয়েই তাদের জনগণের রোষানল থেকে রক্ষা করি। সরকারি কর্মকর্তার এমন দুর্ণীতি কাম্য নয়। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবেন বলে আমাদের আশ্বস্ত করেছেন তাদের দুইজন অতিরিক্ত সহকারী কর কমিশনার।
নির্বাহী অফিসার রুহুল আমিন বলেন, সার্ভেয়ারের নামে করের কথা বলে টাকা নিতে গিয়ে কর অঞ্চল-৩ এর তিন ইন্সপেক্টরসহ পাঁচজনকে আটক করে ফতেপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাহেব, বেশ কয়েকজন ইউপি সদস্যসহ স্থানীয়রা আমার কার্যালয়ে নিয়ে আসলে তাদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ স্বীকার করে এবং রঞ্জিত নামে এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে নেয়া তিনশ টাকা ফেরত দেয়। তাদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিচ্ছি। দুইজন অতিরিক্ত সহকারী কর কমিশনারের জিম্মায় তাদের দেয়া হয়েছে।
এসময় নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে ফতেপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এডভোকেট শামিম, গুমানমর্দ্দনের মজিবুর রহমান, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা নিয়াজ মোর্শেদ, ইউপি সদস্য মোহাম্মদ সোহেল, মহি উদ্দিন, সাজ্জাদ, মাসুদ রানা, হামিদ, আওয়ামীলীগ নেতা শাহ আলম, ছাত্রলীগ নেতা আলাউদ্দিনসহ স্থানীয় সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
Discussion about this post