শুক্রবার রাজধানীর একটি হোটেলে এই অনুষ্ঠানে বদরুদ্দোজা বলেন, “জিয়াউর রহমান হাজার হাজার মাইল হেঁটেছেন, সবাইকে নিয়ে ১২ শ’ খাল কেটেছিলেন। সেদিন খালেদা জিয়াকে প্রশ্ন করেছিলাম, আপনি তিনবার ক্ষমতায় এসেছেন, কত মাইল খাল কেটেছেন?”
বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য বদরুদ্দোজার ভাষায় এ দলটি দুটি পর্যায় পেরিয়ে এখন তৃতীয় ধাপে রয়েছে। এর মধ্যে প্রথম ধাপটি ছিল ‘জিয়াউর রহমানের রাজনীতি’।
“এরপর আসল খালেদা জিয়ার রাজনীতি। মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন। এখন তৃতীয় ধাপে আছে, জামায়াতনির্ভর খালেদা জিয়ার রাজনীতি।
“এই ধাপটি বেশিদিন থাকবে বলে মনে হয় না। চতুর্দিকে চাপ সৃষ্টি হয়েছে। আন্তর্জাতিক চাপ একটু বেশি। তাই চতুর্থ ধাপ আসতে বাধ্য, যখন আবার ঘুরে ফিরে জিয়াউর রহমানের রাজনীতিতে ফিরে আসতে হবে।”
সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সামরিক বাহিনীতে থাকা অবস্থায় ১৯৭৮ সালে তার তত্ত্বাবধানে বিএনপির প্রতিষ্ঠা হয়। সে সময় দলের মহাসচিব ছিলেন বদরুদ্দোজা চৌধুরী।
২০০১ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোট সরকারে যাওয়ার পর প্রথমে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পরে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পান বদরুদ্দোজা। কিন্তু একবছরের মাথায় তাকে রাষ্ট্রপতির পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হলে বিকল্প ধারা বাংলাদেশ নামে নতুন দল গড়েন তিনি।
জাতীয় পার্টির সাংসদ মাঈদুল ইসলামও বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য। জিয়ার আমলে তিনি মন্ত্রী ছিলেন।
১৯৮১ সালে জিয়া নিহত হওয়ার পর বিচারপতি সাত্তার এবং পরে এইচ এম এরশাদের মন্ত্রিসভাতেও মাঈদুল দায়িত্ব পালন করেন।
তার লেখা ‘আত্মসত্ত্বার রাজনীতি এবং আমাদের ভাবনা’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করে বদরুদ্দোজা বলেন, দল প্রতিষ্ঠার সময় জিয়াউর রহমান তখনকার তরুণ শিল্পপতি মাঈদুলের কাছ থেকেই সর্বপ্রথম এক কোটি টাকা ‘অনুদান’ নিয়েছিলেন।
“এখন সেই বিএনপিতে আমিও নেই, মাঈদুলও নেই। জিয়ার বিএনপি তিনটি স্তর পার হয়ে এসেছে। একটা হচ্ছে জিয়ার বিএনপি, সেখানে আমরা সবাই ও জনগণ। একটা প্ল্যাটফর্মের মধ্যে সকলকে ঐক্যবদ্ধ করতে তিনি পায়ে হেঁটে গ্রামে গ্রামে ঢুকে গেছেন। হাজার হাজার মাইল হেঁটেছেন। এখন জিয়ার রাজনীতি নেই।”
বিকল্পধারা সভাপতির মতে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে চেয়েছিলেন। তবে তার ‘টেকনিক’ ছিল ভিন্ন।
“উনি বলেছিলেন, সব দল ফেলে দাও, একদল হয়ে যাও। গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের চেতনা তাকে সমর্থন দেয়নি। দেয়নি বলেই আওয়ামী লীগও তা গ্রহণ করেনি। আওয়ামী লীগ লিখিতভাবে কখনো বাকশালে ফিরে যায়নি। যদিও বঙ্গবন্ধু তাদের স্বীকৃত নেতা, এতে কোনো সন্দেহ নেই।”বিএনপির বর্তমান নেতৃত্বকে ইংগিত করে বদরুদ্দোজা বলেন, “আমি মনে করি, আবার বিএনপিকে জিয়ার রাজনীতিতে আসতে হবে। তার আদর্শ তুলে ধরতে হবে। যদি তারা বাঁচতে চায়, গ্রামে গ্রামে চলে যাবেন, লাখো কোটি মানুষের সঙ্গে হাত মেলাবেন জিয়াউর রহমানের মতো।”
জিয়াউর রহমানের চালু করা গ্রামে গ্রামে গণশিক্ষা, শিল্প-কারখানায় তিন শিফটে কাজের ধারা পরের বিএনপি সরকার ফিরিয়ে না আনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন সাবেক এই রাষ্ট্রপতি।
ভারতের সঙ্গে সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে ৫০ হাজার মানুষের সমস্যা সমাধানের পথ তৈরি হওয়ায় ‘খুশি হয়েছেন’ জানালেও নরেন্দ্র মোদীর ঢাকা সফরের সময় তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেন তিনি।
“মোদী সাহেব ২২টি চুক্তি করে গেলেন। আমরা হ্যাঁ হ্যাঁ করে গেলাম। চুক্তি মানে কী। বেস্ট চুক্তি সেই চুক্তি, যেখানে আমি ঠকব না, আপনিও ঠকবেন না; আমি জিতব, আপনিও জিতবেন। এখানে কি তা হয়েছে? আমরা জানি না। এখনো জাতীয় সংসদে চুক্তিগুলো উপস্থাপন করা হয়নি।”
জিয়ার মন্ত্রিসভার সদস্য মাঈদুল ইসলামকে উদ্দেশ্য করে বদরুদ্দোজা অনুষ্ঠানে বলেন, “গ্রন্থে অনেক সত্য তিনি লুকিয়ে গেছেন। সব সত্য কথা হয়ত বলা যায় না…।”
মাঈদুল কেন বিএনপি ছেড়ে এরশাদের দলে যোগ দিয়েছিলেন, সে বিষয়টিও এই বইয়ে ‘লেখা উচিৎ ছিল’ বলে মন্তব্য করেন বদরুদ্দোজা।
কুড়িগ্রাম- ৩ আসনের সংসদ সদস্য মাঈদুল অনুষ্ঠানে তার বই ও রাজনৈতিক জীবন নিয়ে কথা বলেন।
অন্যদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য জমিরউদ্দিন সরকার, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইনাম আহমদ চৌধুরী, সাবেক সচিব এম মোকাম্মেল হক, অধ্যাপক আনোয়ারুল্লাহ চৌধুরী, অধ্যাপক জসিম উদ্দিন আহমেদ, দৈনিক নিউজ টুডের সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন আহমদ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কবি আবদুল হাই শিকদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আহসানুল হাদী ও প্রকাশনা সংস্থা হাতেখড়ির সত্ত্বাধিকারী আবু তাহের সরকার অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
হাতেখড়ি থেকে প্রকাশিত মাঈদুল ইসলাম মুকুলের ‘আত্মসত্তার রাজনীতি এবং আমাদের ভাবনা’ বইটির দাম রাখা হয়েছে ৫০০ টাকা।
Discussion about this post