নিজস্ব প্রতিবেদক: মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত হত্যা-গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামিনের শর্ত ভঙ্গ করায় সুনামগঞ্জের শাল্লার জোবায়ের মনিরের জামিন বাতিল করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
আজ রবিবার (০৯ আগস্ট) জামিননের শর্ত ভঙ্গ করে সুনামগঞ্জে নৌবিহারে গিয়ে সন্ত্রাসীদের সঙ্গে ঘুরে বেড়িয়েছেন, এমন অভিযোগে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুমের আবেদনের শুনানি নিয়ে ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন। এর আগে অসুস্থতা দেখিয়ে আদালত থেকে জামিন নিয়েছিলেন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় অভিযুক্ত জোবায়ের মনির।
জানা গেছে, জোবায়ের ঈদের আগের দিন গ্রামের বাড়ি শাল্লা উপজেলার দৌলতপুরে গিয়ে কোরবানিতে অংশ নেন। পরে লোকজন নিয়ে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে সোমবার (৩ আগস্ট) ঢাকায় ফিরেন। এ ঘটনায় মামলার বাদী, সাক্ষী ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষজন আতঙ্কে আছেন। এলাকায় একক প্রভাবশালী হিসেবে এখনও প্রতিষ্ঠিত জোবায়ের মনিরের পরিবার।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালে ট্রাইব্যুনালে একাত্তরে গণহত্যা, নারী নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের অভিযোগে জোবায়ের মনির, তার ভাই প্রদীপ মনির ও চাচা মুকিত মনিরসহ অপরাধে সম্পৃক্তদের বিরুদ্ধে চারটি অভিযোগ জমা দেওয়া হয়। ওই বছরের ২১ মার্চ অভিযোগের তদন্ত শুরু করে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
পেরুয়া গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা রজনী দাসের দায়েরকৃত মামলায় ২০১৮ সালের ২০ ডিসেম্বর জোবায়ের মনির, জাকির হোসেন, তোতা মিয়া টেইলার, সিদ্দিকুর রহমান, আব্দুল জলিল, আব্দুর রশিদসহ অভিযুক্ত ছয়জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। অভিযোগ দায়েরের পরই আমেরিকায় পালিয়ে যায় অভিযুক্ত মুকিত মনির। পরে ২০১৯ সালের ১৭ জুন তদন্ত সংস্থা একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে জোবায়ের মনিরসহ ১১ জন জড়িত বলে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দাখিল করে। গত ফেব্রুয়ারিতে আদালতকে অসুস্থতার তথ্য দিয়ে জোবায়ের মনির জামিন নেন।
উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের ৪ ডিসেম্বর হাওরাঞ্চলের শীর্ষ দালাল আব্দুল খালেকের নির্দেশে পেরুয়া, উজানগাঁও, শ্যামারচরে ভয়াবহ গণহত্যা, অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্ন অপরাধ সংঘটিত হয়। শ্যামারচর বাজারের স্কুলের সামনে ২৭ হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনকে লাইন ধরিয়ে জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত করে ব্রাশফায়ারে হত্যা করা হয়। পরে কয়েকটি পল্লীতে প্রায় তিন শতাধিক প্রশিক্ষিত রাজাকার বাহিনী দিয়ে নারীদের ধর্ষণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ করে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করে। ওই গণহত্যায় নেতৃত্ব দেয় দালাল আব্দুল খালেকের ভাই মুকিত মনির, কদর আলী, ছেলে প্রদীপ মনির, জোবায়ের মনিরসহ প্রশিক্ষিত রাজাকার বাহিনী। ১৯৭২ সালে কদর আলীকে দালাল আইনে গ্রেফতার করা হয়।
Discussion about this post