মোঃ ফয়জুল হাসান:
আবু সাইদ সাহেবের একখন্ড জমি আছে ধানমন্ডি এলাকায়। তিনি এই জমিটি ২০০৩ সালে রেজওয়ানা রহমান সাহেবের নিকট থেকে ক্রয় করেছিলেন। বর্তমানে এই জমিতে তার শান্তিপুর্ন ভোগদখল আছে ও তার মালিকানার দলিলও আছে। তিনি আইনানুগ সকল পদ্ধতি বা নিয়ম অনুসরন করেই এই জমিটি ক্রয় করেছিলেন এবং বর্তমানে তিনি জমিটির সকল ট্যাক্স ও খাজনা পরিশোধ করছেন। একই এলাকার মামুনুর রহমান সাহেবের সাথে তার অনেকদিন থেকেই ব্যাক্তিগত কোন্দল ছিল। মামুনুর রহমান সাহেব একজন বদ প্রকৃতির লোক এবং কারো ভাল তিনি সহ্য করতে পারেন না। কিছুদিন আগে মামুনুর রহমান সাহেব অনুরুপ একটি দলিল দেখিয়ে দাবি করেন যে জমিটি তার। এখানে মামুনুর রহমান সাহেবের দলিলটি একটি জাল দলিল। তিনি শত্রুতাবসত আবু সাইদ সাহেবকে বিপদে ফেলার জন্য এই জাল দলিল তৈরি করেন। এখন আবু সাইদ সাহেব কিভাবে বর্তমান সমস্যার প্রতিকার পেতে পারেন।
আবু সাইদ সাহেব এখানে দুই ভাবে প্রতিকার পেতে পারেন-
- দেওয়ানী মামলার মাধ্যমে,
- ফৌজদারী মামলার মাধ্যমে।
দেওয়ানী মামলার মাধ্যমেঃ
এখানে আবু সাইদ সাহেবের দলিলটিই হচ্ছে মূল দলিল কারন এটি সম্পূর্ন সঠিক পদ্ধতিতে প্রস্তুতকৃত। অন্যদিকে মামুনুর রহমান সাহেবের দলিলটি একটি জাল দলিল কারন, আংশিক বা সম্পূর্ন জালিয়াতির মাধ্যমে প্রস্তুতকৃত দলিলই হচ্ছে জাল দলিল, এ সম্পর্কে দন্ডবিধির ৪৬৪ ধারায় বলা আছে।
দন্ডবিধির ৪৬৪ ধারা মোতাবেক, “ যে ব্যাক্তি কোন দলিল বা কোন দলিলের অংশবিশেষ এমন কোন ব্যাক্তি কর্তৃক কতৃত্ববলে প্রস্তুত, স্বাক্ষরিত, সীলমোহরকৃত বা সম্পাদিত বলিয়া বিশ্বাস জন্মাইবার অভিপ্রায়ে, যে ব্যাক্তি কর্তৃক বা যে ব্যাক্তির কর্তৃত্ববলে উহা প্রস্তুত, স্বাক্ষরিত, সীলমোহরকৃত বা সম্পাদিত হয় নাই বলিয়া সে জানে, অথবা এমন কোন সময়ে, যে সময় উহা প্রস্তুত, স্বাক্ষরিত, সীলমোহরকৃত বা সম্পাদিত হয় নাই বলিয়া সে জানে অসাধুভাবে বা প্রতারণামূলকভাবে অনুরূপ দলিল বা অনুরূপ কোন দলিলের অংশবিশেষ প্রস্তুত, স্বাক্ষর, সীলমোহর বা সম্পাদন করে বা কোন দলিল সম্পাদনা জ্ঞাপক কোন চিহ্ন করে; অথবা
কোন দলিল অপর কোন ব্যাক্তি কর্তৃক সম্পাদিত হইবার পর আইনানুগ কর্তৃত্ব ব্যাতিরেকে অসাধু বা প্রতারণামূলকভাবে, কর্তন করিয়া বা প্রকারন্তরে উহার কোন গুরুত্বপুর্ণ অংশে পরিবর্তন করে-অনুরূপ পরিবর্তন সাধনকালে অনুরুপ ব্যাক্তি জীবিত বা মৃত যাহাই হউক না কেন; অথবা
অসাধুভাবে প্রতারণামূলকভাবে এইরুপ জানিয়া কোন ব্যাক্তিকে কোন দলিল প্রস্তুত, স্বাক্ষর, সীলমোহর, সম্পাদন বা পরিবর্তন করতে বাধ্য করে, যে ব্যাক্তি মানসিক অপ্রকৃতিস্ততা বা প্রমত্ততার কারনে কিংবা তাহার প্রতি প্রযুক্ত প্রতারণার দরুন উক্ত দলিলের বিষয়বস্তু বা পরিবর্তনের প্রকৃতি জানিতে পারে না বা জানে না, সেই ব্যাক্তি মিথ্যা দলিল প্রস্তুত করে বলে গন্য হবে।
এখানে মামুনুর রহমান সাহেব প্রতারণামূলকভাবে আবু সাইদ সাহেবের দলিলের গুরত্বপুর্ণ অংশ পরিবর্তন করে অনুরুপ আরেকটি দলিল প্রুস্তুত করেন তাই এটি একটি জাল দলিল। এখন মামুনুর রহমান সাহেবের দলিলটি জাল তাই আবু সাইদ সাহেব সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৪২ ধারার অধীনে ঘোষনামূলক মামলা করতে পারেন। যার ফলে আদালত ঘোষণা করবেন যে কোন দলিলটি সঠিক ও কোনটি মিথ্যা। এছাড়াও আবু সাইদ সাহেব একই আইনের ৩৯ ধারার অধীনে মিথ্যা বা জাল দলিলটি বাতিলের মামলা করতে পারেন। যার ফলে আদালত মিথ্যা বা জাল দলিলটি বাতিল করবেন।
ফৌজদারী মামলার মাধ্যমেঃ
ফৌজদারী মামলার মাধ্যমে কোন দলিল বাতিল করা যায়না কিন্তু জালিয়াতির জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তির বিরুদ্ধে জালিয়াতির মামলা করা যায়। এর ফলে ঐ ব্যাক্তির জেল জরিমানা হতে পারে। দন্ডবিধির ধারা ৪১৫ থেকে ৪২৪ প্রতারণা ও তার শাস্তির কথা বলা আছে। জাল দলিল প্রতারণার ক্ষেত্রে কোন ব্যাক্তি এইসব ধারার অধীনে প্রতিকার পেতে পারেন।
যদি কোন ব্যাক্তি আবু সাইদ সাহেবের মত সমস্যায় পরেন তবে উপরোক্ত নিয়মে দেওয়ানী আদালতে মামলা করার পর জালিয়াতির জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তির বিরুদ্ধে ফৌজদারী আদালতে মামলা করতে পারেন। দন্ডবিধির ৪১৫-৪২৪ ও ৪৬৩-৪৭৭(ক) ধারাগুলোতে জালিয়াতির ব্যাপারে বলা আছে। তাই এই ধরনের সমস্যাগুলোতে যে কেউ-ই দন্ডবিধির এই সব ধারার অধীনে প্রতিকার পেতে পারেন।
শিক্ষার্থী, চতুর্থ বর্ষ, আইন বিভাগ, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, ই-মেইলঃ hassan.foyzul@gmail.com
Discussion about this post