শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা। জামালপুর থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী তিস্তা এক্সপ্রেস ট্রেন এসে থামলো ময়মনসিংহ রেলস্টেশনের এক নম্বর লাইনে।
১৯ বগির এ ট্রেনের ছাদে গিজগিজ করছে ঢাকাগামী কর্মজীবী মানুষ আর মানুষ। ট্রেনের ইঞ্জিন, দরজা-জানালা ও ছাদে বাদুরঝোলা হয়ে আছেন যাত্রীরা। একই অবস্থা ভেতরেও। ট্রেনের ছাদে উঠা নিষিদ্ধ থাকলেও কেউ মানছে না এ নিয়ম।
ট্রেনের ছাদে চড়ার কোনো জায়গা না থাকায় স্টেশনের ওভার ব্রিজ থেকে লাফিয়ে পড়ে যাত্রীরা ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করছেন। আবার অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে টিকিট কেটেও ট্রেনে উঠতে না পেরে হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরতেও দেখা গেলো অনেক যাত্রীকে।
ঈদের সপ্তম দিনে শুক্রবার (২৪ জুলাই) সন্ধ্যায় ময়মনসিংহ রেলস্টেশনে সরেজমিনে গিয়ে এমন চিত্রই লক্ষ্য করা যায়।
ময়মনসিংহ রেলস্টেশনে ট্রেন এসে থামা মাত্র শুধু বাঁশিতে ফু দেওয়া ছাড়া আর কোনো কাজ করতে দেখা গেলো না-ময়মনসিংহ রেলওয়ে পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মীর মজনুসহ আরও পাঁচ পুলিশ সদস্যকে।
এ বিষয়ে এএসআই মীর মজনু বলেন, ‘পাবলিক নিয়ম মানে না। আমরা কী করবো? আমাদের দায়িত্ব বাঁশি ফু দিয়ে তাদের সতর্ক করা। আমরা অনেক বার বাঁশি ফু দিয়েছি, কাজ হয়নি। ছাদে গিয়ে তাদের নামানো আমাদের দায়িত্ব না।’
শুক্রবার সারাদিন ঢাকামুখী মানুষের চাপে লোকে লোকারণ্য ছিল ময়মনসিংহ রেলস্টেশন। ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, অগ্নিবীণা, যমুনা, কমিউটারসহ সব ট্রেনেই অতিরিক্ত যাত্রীদের প্রচণ্ড ভিড় দেখা যায়।
স্টেশনের ট্রেন এসে থামতে না থামতেই সর্বশক্তি প্রয়োগ করে যাত্রীরা ঠেলাঠেলি করে উঠছেন ট্রেনের ভেতরে। আবার টিকিট না পেয়ে জীবিকার তাগিদে ভিড় ঠেলে কেউ ভেতরে দাঁড়িয়ে, আবার কেউ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছাদে উঠছেন।
যারা এ সুযোগটিও পাচ্ছেন না তারা স্টেশনের ওভার ব্রিজ থেকে লাফিয়ে চড়ে বসছেন ট্রেনের ছাদে। এতে জীবন বিপন্ন হবার আশঙ্কা থাকলেও সে দিকে কারো তিলার্ধ ভ্রুক্ষেপ নেই।
ছাদে বসা যাত্রী জামালপুরের ইসলামপুরের রনি (২৫) ও দেওয়ানগঞ্জের শহীদুল (২৮) ঢাকায় গার্মেন্টস কোম্পানিতে চাকুরি করেন। তারা বলেন, ‘রিস্ক-টিস্ক বুঝি না। কাল থেকে অফিস খোলা। যাইতে হইবোই। এ কারণেই দেড়শ টাকা ভাড়া দিয়া জামালপুর থেকে এ স্টেশন পর্যন্ত আইছি।’
পাশের বগির ছাদে থাকা জামালপুরের বাসিন্দা গার্মেন্টস কর্মী রেশমি ও আইরিন বলেন, ‘রিস্কের কতা (কথা) চিন্তা করলে কী অইবো? কাইল গার্মেন্টস খোলা। চাকরি গেলে কেউ আমগোর পেট চালাইবো না।’
ঢাকা জজ কোর্টের আইনজীবী দেলোয়ার হোসেন খান স্ত্রী ও দু’সন্তানকে নিয়ে যাবেন ঢাকায়। ঈদে শ্বশুরবাড়ি ময়মনসিংহের ত্রিশালে এসেছিলেন। তার স্ত্রী রাজিয়া সুলতানা বলেন, জামালপুর থেকেই ট্রেন হাউসফুল। সব ট্রেনেই ভেতরে, এমনকি ছাদেও অসম্ভব ভিড়। কীভাবে ট্রেনে উঠবো সেই উপায়ই বের করার চেষ্টা করছি।
স্টেশনে ট্রেন আসার আগে স্টেশন কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে মাইকে বার বার ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে, ‘অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কেউ ট্রেন ভ্রমণ করবেন না। সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি।’ কিন্তু কে শোনে কার কথা। ট্রেন আসার পর পরই জীবনের ঝুঁকি নিয়েই ট্রেনের ছাদে, দরজা-জানালায় বাদুরঝোলা হচ্ছেন যাত্রীরা।
এ বিষয়ে ময়মনসিংহ রেলস্টেশনের সুপারিনটেনডেন্ট আবু তাহের বাংলানিউজকে জানান, ট্রেনের ছাদে বা ইঞ্জিনে কারা চড়লো, সেটা রেলওয়ে পুলিশের দেখার বিষয়। আমাদের তরফ থেকে ঘোষণা দিয়ে যাত্রীদের সতর্ক করা হয়েছে।
ময়মনসিংহ থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া সব ট্রেনেই এমন মাত্রাতিরিক্ত ভিড় বলেও জানান তিনি।
ময়মনসিংহ রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল আহাদ খান বলেন, ট্রেনের ধারণক্ষমতার চেয়ে ঢাকামুখী মানুষের চাপ কমপক্ষে দশগুণ বেশি। ছাদে যাত্রীদের না উঠতে আমরা নিরুৎসাহিত করছি। তাছাড়া ছাদে চড়ে ভ্রমণ করা আইনসম্মতও নয়। কিন্তু এমন পরিস্থিতে যাত্রীরা এবং আমরা সবাই নিরুপায়।
Discussion about this post