মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আগে জেএমবি নেতা আসাদুল ইসলাম আরিফের (৪৫) সঙ্গে তার পরিবারের ১৮ সদস্য শেষ সাক্ষাৎ করেছেন। এ সময় তিনি পরিবারের সদস্যদের ধৈর্য্য ধারণ করার পরামর্শ দেন।
রোববার (১৬ অক্টোবর) দুপুর দেড়টা থেকে বেলা সাড়ে ৩টা পর্যন্ত তারা খুলনা কারাগার অভ্যন্তরের একটি কক্ষে তার সঙ্গে সাক্ষাত করেন। এরআগে পরিবারের সদস্যরা বরগুনা থেকে খুলনায় আসেন।
জেএমবি নেতা আসাদুল ইসলাম আরিফের সঙ্গে সাক্ষাত করতে আসা তার চাচাতো ভাইয়ের ছেলে মো. জামাল জানান, তারা একটি মাইক্রোবাসে করে ১৮ জন সদস্য খুলনায় এসেছেন। দুপুর দেড়টায় কারাগারে প্রবেশ করে ঘণ্টাব্যাপী তার চাচার সঙ্গে কথা বলেন। আরিফ কোনো ধরনের ভীত-সন্ত্রস্ত নন, মনোবল হারাননি এবং মানসিকভাবেও সম্পূর্ণ সুস্থ রয়েছেন। উল্টো পরিবারের সদস্যদেরই তিনি ধৈর্য্য ধারণসহ বিভিন্নভাবে বুঝিয়ে বলেছেন, তার মউত (মৃত্যু) যেখানে ছিল সেখানেই হবে। এতে কারও হাত নেই।
অপর চাচাতো ভাইয়ের ছেলে নজরুল ইসলাম বলেন, আসাদুল ইসলাম আরিফের সাত বোনের মধ্যে ছয়জনই তার সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন। এছাড়া স্ত্রী, দুই মেয়ে, চারজন ভাতিজা এবং ভগ্নিপতিসহ মোট ১৮ জন দেখা করতে আসেন।
ফাঁসি কাযর্করের পর তাকে কুমিল্লায় শ্বশুর বাড়িতে দাফন করার কথা বলেছেন বলেও জানান তিনি।
এদিকে, আরিফের শারীরিক অবস্থা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন চিকিৎসকরা। তিনি সুস্থ রয়েছেন বলে তারা জানিয়েছেন।
খুলনার সিভিল সার্জন ডা. এ এস এম আব্দুর রাজ্জাক জানান, তিনি নিজে এবং জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. মাহবুবুর রহমান দুপুর দেড়টার দিকে কারাগারে গিয়ে আরিফের শারীরিক অবস্থা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন। তিনি সুস্থ এবং স্বাভাবিক অবস্থায় রয়েছেন।
খুলনা জেলা প্রশাসকের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. নূর-ই-আলম জানান, রাত সাড়ে ১০ টায় ফাঁসির রায় কার্যকর করার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।
খুলনা জেলা কারাগারের জেলার জান্নাতুল ফরহাদ বলেন, ফাঁসির মঞ্চ ও জল্লাদ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। নেওয়া হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তা।
আরিফ বরগুনা জেলা সদরের বান্দরগাছিয়া গ্রামের মো. হাবিবুর রহমানের একমাত্র ছেলে। তিনি ২০০৮ সাল থেকে খুলনা জেলা কারাগারে রয়েছেন।
দায়িত্বশীল সূত্র জানা যায়, ২০০৫ সালের ১৪ নভেম্বর ঝালকাঠি জেলার সিনিয়র সহকারী জজ সোহেল আহম্মেদ ও জগন্নাথ পাড়ের গাড়িতে বোমা হামলা চালিয়ে তাদের হত্যা করা হয়। ২০০৬ সালের ২৯ মে এই হত্যা মামলার রায়ে ঝালকাঠির অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ রেজা তারিক আহম্মেদ সাত জনের ফাঁসির আদেশ দেন। ইতোমধ্যে ছয়জনের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে।
যাদের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে তারা হলেন জেএমবি’র শীর্ষ নেতা শায়খ আবদুর রহমান, সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলাভাই, শায়খ আব্দুর রহমানের ভাই আতাউর রহমান সানি, জামাতা আবদুল আউয়াল, ইফতেখার হোসেন মামুন, খালেদ সাইফুল্লাহ ওরফে ফারুক।
২০০৭ সালের ২৯ মার্চ শীর্ষ এ ছয় জেএমবির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়। ২০০৭ সালের ৪ মার্চ রাষ্ট্রপতি ছয় জঙ্গির প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ করে দিলে একই বছরের ২৯ মার্চ রাতে তাদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। একই মামলার রায়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রাপ্ত আরেক জেএমবি নেতা আরিফ ২০০৭ সালের ১০ জুলাই ময়মনসিংহ থেকে গ্রেফতার হন। এরপর আপিল করেন আরিফ। ২৮ আগস্ট রোববার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ জেএমবি নেতা আসাদুল ইসলাম ওরফে আরিফের রিভিউ আবেদন খারিজ করে মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন। যা কার্যকর হবে রোববার রাতে।
Discussion about this post