অবশেষে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার পুরান ঢাকা থেকে কেরানীগঞ্জের রাজেন্দ্রপুরে স্থানান্তর করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে কারা অধিদপ্তর। সব কিছু ঠিক থাকলে চলতি বছরের ১০ এপ্রিল এটি স্থানান্তর হতে পারে। কারা সূত্রে এমনটাই জানা গেছে।
কারা সূত্র জানায়, রাজেন্দ্রপুর এলাকায় গ্যাসের সংযোগ না থাকায় গ্যাস সংযোগ দেয়া যাচ্ছেনা কারাগারে। তবে বিদ্যুৎ ও পানি সংযোগ দেয়া হয়েছে। এছাড়া ভবনের কাজ শেষ। আগামী ১০ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন এই কারাগার উদ্বোধন করবেন। ওইদিনই কারাবন্দীদের স্থানান্তর করা হবে। তবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি কিভাবে হবে তা জানা যায়নি।
অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়া ইউনিয়নের রাজেন্দ্রপুরে ১৯৪ দশমিক ৪১ একর জমির ওপর তৈরি হয়েছে নতুন কারাগার। এর মধ্যে ৩১ একর জমিতে বন্দিদের (পুরুষ-১) জন্য ভবনের নির্মাণ কাজ প্রায় সম্পন্ন। নতুন এ কারাগারের নামকরণ করা হয়েছে ‘ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার, কেরানীগঞ্জ।’
জানা যায়, ছয়টি ভবনের প্রতিটিতে ৪০টি করে কক্ষ রয়েছে। প্রতিটি কক্ষে চারটি করে সিলিং ফ্যান দেয়া হয়েছে। প্রতিটি কক্ষের ধারণ ক্ষমতা ১৩ জন করে। প্রতিটি ভবনের ধারণক্ষমতা ৫০০ বন্দি। তবে প্রতিকক্ষে ১৩ জন হিসেবে এর বেশিও রাখা যাবে। ভবনের নিচতলায় রয়েছে ডাইনিং। প্রতিটি ভবনের পাশেই রয়েছে একটি করে রান্নাঘর, একটি পাম্প হাউস ও ২০টি করে টয়লেট। এছাড়া প্রতিটি কক্ষের সঙ্গে একটি করে টয়লেট ও হাত-মুখ ধোয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।
এছাড়া সাজাপ্রাপ্ত বন্দিদের জন্য ৬ তলা বিশিষ্ট ২টি ভবন। প্রতিটি ভবনের ধারণক্ষমতা ৫০০ বন্দি। এ ভবনেও অনুরূপভাবে ডাইনিং, রান্নাঘর, পাম্প হাউস ও ২০টি টয়লেট রয়েছে। ওই তিনটি ভবন ছাড়া সব ভবনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে কিশোর বন্দি ব্যারাক একটি। এটি চার তলাবিশিষ্ট। বন্দি ধারণক্ষমতা ১০০ জন। শ্রেণীপ্রাপ্ত বন্দিদের ব্যারাক একটি। এটি চার তলাবিশিষ্ট। ধারণ ক্ষমতা ৬০ জন। মানসিক ভারসাম্যহীন প্রতিবন্ধী বন্দিদের জন্য রয়েছে দোতলাবিশিষ্ট একটি ভবন। ধারণ ক্ষমতা ৩০ জন। চার তলাবিশিষ্ট চারটি সেল ভবন রয়েছে। প্রতিটি সেল ভবনের ধারণক্ষমতা একশ’ জন। প্রতিটি ভবনে ১১২টি করে কক্ষ রয়েছে। সব ভবনই অন্তত ৬ ফুট উচ্চতায় পৃথক প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। কারা অভ্যন্তরের দক্ষিণে সেল ভবনের সামনে সীমানা প্রাচীরের কাছাকাছি করা হয়েছে ফাঁসির মঞ্চ। সেটির কাজও সম্পন্ন হয়েছে।
যেভাবে রয়েছে স্থাপনা : প্রধান গেটের ওপরেই প্রশাসনিক ভবন। প্রধান গেট দিয়ে ঢুকেই বাম পাশে জেল স্কুল ও লাইব্রেরি, এর দক্ষিণে মানসিক ভারসাম্যহীন প্রতিবন্ধী বন্দিদের ব্যারাক, এর পাশে কারারক্ষী হাউস ও মেডিকেল ইউনিট। মেডিকেল ইউনিটে আটটি বেড রয়েছে। এ দুটি ভবনের পূর্বদিকে সীমানা প্রাচীর থেকে দূরে পাশাপাশি তিনটি ছয় তলা ভবন (বিচারাধীন বন্দিদের ৬টি ভবনের মধ্যে ৩টি)। প্রধান গেটের ডান পাশে কিশোর বন্দিদের ভবন, এর দক্ষিণে শ্রেণীভিত্তিক বন্দি ভবন, এর পশ্চিমে সীমানা প্রাচীরের অদূরে ছয় তলা তিনটি ভবন (বিচারাধীন বন্দিদের ৬টি ভবনের মধ্যে ৩টি)। গেট দিয়ে ঢুকে সোজা আনুমানিক ২শ’ গজ দূরে গোলাকার একটা খোলা বৈঠকখানা করা হয়েছে। এটার নাম কেইস টেবিল। এটি সালিশ বৈঠকের স্থান। এর চারপাশে ফাঁকা জায়গা। কেইস টেবিলের আনুমানিক দেড়শ’ গজ দূরে (দক্ষিণে) রয়েছে কয়েকটি ভবন। মাঝখানে বিশাল ফাঁকা জায়গা। এরপরই রাস্তার পশ্চিম ও পূর্ব দিকে সাজাপ্রাপ্ত বন্দিদের দুটি ভবন (ছয় তলা)। পশ্চিমের ভবনের পাশে গুদাম, ময়দার কল, ধোপাখানা, লন্ড্রি ও সেলুনের ঘর। এর দক্ষিণে চার তলাবিশিষ্ট দুটি সেল ভবন। সেল ভবনের দক্ষিণে ফাঁসির মঞ্চ। সেল ভবনের পূর্বদিকে পাশাপাশি আরও দুটি সেল ভবন। এ ভবনের পাশে বন্দিদের জন্য দোতলাবিশিষ্ট কর্মশালা ভবন। কারা অভ্যন্তরের মধ্যে বিশাল খোলা মাঠ রয়েছে। সীমানা প্রাচীরের বাইরে চার কোনায় চারটি ওয়াচ টাওয়ার রয়েছে। যার উচ্চতা ৪০ ফুট।
কারাগারের বাইরে বাম দিকে রয়েছে দর্শনার্থীদের ঘর। কারাগারের পশ্চিমে বাইরের দিকে কারা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পরিবারের জন্য আলাদা ভবন, অফিসার্স ক্লাব, স্টাফ ক্লাব, স্কুল, মসজিদ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ সভার জন্য মিলনায়তন নির্মাণ করা হয়েছে। সবক’টি ভবনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া কারাগারের দক্ষিণে বাইরে কারারক্ষীর থাকার জন্য ব্যারাকও রয়েছে।
সূত্র জানায়, ১৯৮০ সালে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত হলেও প্রায় ৩৫ বছর পর এটি বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে। ২০০৬ সালে একনেকে এ প্রকল্পের অনুমোদন দেয়ার পর থেকেই শুরু হয় জমি অধিগ্রহণের কাজ। বাস্তবায়নের সময় নির্ধারণ করা হয় ২০১১ সালের জুন মাস পর্যন্ত। কিন্তু পরে তিন দফায় প্রকল্প মেয়াদ বাড়িয়ে করা হয় ২০১৭ সাল পর্যন্ত। ২০০৭ সালে মাটি ভরাটের কাজ শুরু হয়। ২০১১ সালে মূল কারাগার ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়। প্রথমে ব্যয় ৩১৭ কোটির কিছু বেশি ধরা হলেও সর্বশেষ বাড়িয়ে প্রকল্প ব্যয় ধরা হয় ৪০৬ কোটি ৩৫ লাখ টাকা।
Discussion about this post