বিডি ল নিউজঃ দিনাজপুরে ডিসি অফিসে স্টাফ দ্বারা আইনজীবী লাঞ্ছিতের ঘটনায় ডিসির স্টাফ ৭ জন আইনজীবীকে আসামী করে মামলা করেছে। আরও ৪ থেকে ৫ জন অজ্ঞাতনামাকেও এই মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে । ডিসির স্টাফ এজাহার করেছেন। সাথে এডিএম একটা রিপোর্ট দিয়েছেন। রিপোর্টে আইনজীবীদেরকে জঙ্গি এবং নেশাখোর হিসেবে আজ্ঞাখিত করা হয়েছে। অন্যদিকে, কোর্ট পুলিশ এবং থানা মামলার কপিও দিচ্ছে না। কারণ জানতে চাইলে জবাবে তারা বলছে, ‘এসপি’র কড়া নিষেধ রয়েছে’।
এদিকে আইনজীবীদের সাথে এমন ব্যবহার এবং মিথ্যা মামলা ও মিথ্যা সংবাদের প্রতিবাদে দিনাজপুর জেলা আইনজীবী সমিতিও ৭২ ঘন্টার আলটিমেটাম ঘোষনা করেছে। আগামী ৭২ ঘন্টার মধ্যে আইনজীবীদের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসনের দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করা না হলে কঠোর কর্মসূচী প্রদানের হুমকি দিয়েছে দিনাজপুর জেলা আইনজীবী সমিতি। সেই সাথে দিনাজপুরের কিছু পত্রিকায় “আইনজীবীদের হাতে কর্মচারী প্রহৃত” শীর্ষক প্রকাশিত খবরের তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। দিনাজপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ্যাড. নুরুজ্জামান জাহানী ও সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. মো. তৌহিদুল ইসলাম সরকার স্বাক্ষরিত এক প্রতিবাদ লিপিতে একথা জানানো হয়। প্রতিবাদ লিপিতে বলা হয়, একটি ছোট্ট ঘটনাকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিশাল ঘটনায় রুপান্তর করার অপচেষ্টা আসলে দূরভিসন্ধিমূলক। যা সচেতন কোন মানুষের কাম্য নয়। একটি ভূল বুঝাবুঝি আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান সম্ভব থাকলেও জেলা প্রশাসন সম্পূর্ণ হটকারীমূলকভাবে বিজ্ঞ ৭ আইনজীবীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে। শুধু তাই নয়, পত্রিকাগুলোতে অসত্য তথ্য পরিবেশন করে সংবাদ প্রকাশ করিয়েছে।
আইনজীবীরা সমাজের সচেতন ব্যক্তি হিসেবে কোন হটকারী কাজ করেনি। তারপরেও তাদের বিরুদ্ধে সংবাদ পরিবেশন করানোসহ মামলা দায়েরের মত কাজ করেছে জেলা প্রশাসন। বিষয়টিতে জেলার আইনজীবীরা ক্ষুব্ধ ও প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠেছে।
এমতাবস্থায় জেলা প্রশাসনকে এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। আগামী ৭২ ঘন্টার মধ্যে তাদের দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে এবং আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে হবে। নচেৎ আইনজীবী সমিতি আগামীতে কঠোর কর্মসূচীর মাধ্যমে জেলা প্রশাসনের হটকারী সিদ্ধান্তের দাঁতভাঙ্গা জবাব দেবে। যা কখনই মঙ্গলজনক হতে পারে না।
তাই সময়ক্ষেপন না করে অনতিবিলম্বে মামলা প্রত্যাহারসহ যাবতীয় সমস্যার সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ সমাধানে সংশ্লিষ্ট সকলের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন আইনজীবী নেতৃদ্বয়।
উল্লেখ্য, গত২৩শে মে বুধবার বিকাল আনুমানিক ৪ ঘটিকার সময়, এড রবিউল আলম তার মোটরসাইকেলযোগে ডিসি অফিসের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় দিনাজপুর শহরে বৃষ্টিপাত শুরু হয়। সেসময় বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়া থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এড রবিউল আলম ডিসি অফিসের গাড়ি রাখার পোর্চের নিচে অবস্থান গ্রহণ করেন। এসময় ডিসি অফিসের আর্দালী সালাম এড রবিউলকে ধমক দিয়ে পোর্চ থেকে সরে দাঁড়াতে বলে। এড রবিউল নিজের আইনজীবী পরিচয় প্রদান করেন। কিন্তু আর্দালী সালাম এড রবিউলকে বলেন সরে না গেলে গাড়ি দিয়ে চাপা দিবে। এড রবিউল আলম নিজের মানসম্মান রক্ষার্থে সেইখান থেকে কিছু না বলে চলে যান। পরবর্তী দিনে ২৪শে মে বৃহস্পতি বারে দুপুর আনুমানিক ১টার সময় এড রবিউল তার কাজে ডিসি অফিসে গেলে আর্দালী সালামের সাথে দেখা হয়। আর্দালী সালাম তাকে দেখা মাত্র কটূক্তি করা শুরু করলে এড রবিউল প্রতিবাদ করেন। তখন ডিসি অফিসের এডিএম এর সিএ আনিসুর রহমান সহ ১২/১৩ জন স্টাফ দৌড়ে আসে এবং এড রবিউলকে ঘেরাও করে অপমানজনক কথা বার্তা বলতে থাকে। তখন এড রবিউল দিনাজপুরের এডিএম সাহেবকে এই বিষয়ে জানালে এডিএম বলেন যে তিনি ব্যস্ত, কাজ করে বিষয়টি দেখবেন বলে এড রবিউলকে জানান। এড রবিউল তখন বের হয়ে আসতে থাকা অবস্থায় আবার সালাম, আনিসুর সহ ডিসি অফিসের ১২/১৩ জন স্টাফ এড রবিউলকে ঘিরে ধরে অবরুদ্ধ করে এবং আনিসুর রহমান বলে যে এডিএম ছেড়ে দিয়েছে তো কি হয়েছে, আমরা তোকে আটকে রাখার ক্ষমতা রাখি বলে আইনজীবীকে লাঞ্ছিত করতে থাকে। এইরূপ হইচই দেখে অন্যান্য আইনজীবীরা এড রবিউলকে উদ্ধারের জন্য এগিয়ে আসলে স্টাফরা আইনজীবীদের সাথে চরম বাকবিতন্ডা ও দুর্ব্যবহার করে। আইনজীবীরা স্টাফদের প্রবল শারীরিক আক্রমণের সম্মুখে অবরুদ্ধ এড রবিউলকে স্টাফদের কবজা থেকে উদ্ধার করে জেলা আইনজীবী সমিতিতে নিয়ে আসে। আইনজীবীরা ডিসি অফিসের স্টাফদের কাউকে আক্রমন না করলেও তারা উদ্ধারকারী আইনজীবীদের মাদকসেবী, জঙ্গি ও নাশকতাকারী দাবী করে বিচারের দাবী ডিসি অফিস থেকে বের হয়ে মিছিল করে ও স্লোগান দিতে থাকে। উক্ত বিষয়ে আইনজীবীরা এখন পর্যন্ত কোন আইনী পদক্ষেপ গ্রহণ করে নি।
Discussion about this post