ড. বদরুল হাসান কচি
স্বাধীনতার পরাজিত শক্তি দেশ প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই নানান ষড়যন্ত্রে নির্ঘুম। প্রতিশোধের অনলে জ্বলছে তারা। থেমে নেই আজো। একটার পর একটা মিশন চালিয়ে যাচ্ছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার মধ্য দিয়ে তাদের বড় ধরণের মিশন আরম্ভ। ঠিক একই বছরে আজকের এই দিনে অর্থাৎ ৩ নভেম্বর জাতীয় চার নেতাকে জেলের ভেতরে হত্যার মধ্য দিয়ে তারা আরো একটি বিশাল ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করেন।
সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমেদ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী ও কামরুজ্জামান এই চার নেতাকে হারিয়ে দেশ হয়ে গেলো নেতৃত্ব শুন্য। বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে যারা মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে এই দেশ পরিচালনা করেছেন। যারা বঙ্গবন্ধুকে বুঝতেন, তাঁর স্বপ্নকে লালন করতেন এবং সর্বদা সহযোদ্ধা হিসেবে যারা দেশের জন্যে নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন।
তারপর শুরু হয়ে গেলো দেশ নিয়ে ছেলেখেলা। দপ্তর নিয়ে ভাগাভাগি। অর্থলোপাড় নিয়ে চললো কাড়াকাড়ি। দুমরে-মুছড়ে গেলো দেশের অর্থনীতি। অস্বীকার করার সুযোগ নেই, চার মেধাবী দক্ষ নেতৃত্বকে হারিয়ে দেশ পিছিয়ে গেলো কয়েকটি দশক। এখন আবার ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে দেশ। আমি মনে করি সফলতা ব্যর্থতার সমীকরণ করার সময় এখনো আসেনি। তবে বিশ্বাস রাখি ঘুরে দাঁড়াবে বাংলাদেশ, বিশ্ব পরিসংখ্যানও সেরকম কিছুই বলছে।
কিন্তু বাধা সেই পরাজিত শক্তি। তাদের ষড়যন্ত্রের নীল নকশা দেশকে সবসময় অস্থিতিশীল রাখতে চেষ্টা করছে। আর অস্থির সময়ে অর্থনীতিও অস্থির হয়ে উঠে। অর্থনীতির সুস্বাস্থ্যর সাথে দেশের শান্তি সম্পর্কিত। তাই সেই গোষ্ঠীর টার্গেট সবসময় দেশের অস্থিতিশীল পরিবেশ। এখন প্রশ্ন হতে পারে, দেশের অগ্রগতির স্বার্থে শান্ত পরিবেশ বজায় রাখতে এই গোষ্ঠীকে তাহলে নির্মূল করছে না কেন সরকার?
আমি এখানে বলবো আজকের এই পরিস্থিতির জন্যে আমাদের পুরনো পাপই দায়ী। যারা এই দেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছে কয়েকজন ছাড়া তাদের এখনো আমরা শাস্তি দিতে পারিনি, যদিও সেই বিচার কাজ চলছে কিন্তু ধীর গতিতে; বঙ্গবন্ধুর সকল খুনিদের শাস্তি দেয়া যায়নি; জাতীয় চার নেতাকে হত্যার কোন কূল কিনারা নেই; এই জঘন্য অপরাধগুলোর বিচার না করাকে আমি পাপ বলছি। আর এই পাপের শাস্তি পুরো জাতি আজ ভোগ করছে। সেই শক্তিগুলোই আজ এখন সক্রিয়। তাদের বিচার না করার ফলেই তো আজ দেশে তারা রাজনীতি করার অধিকার চায়, মুক্তচিন্তার মানুষদের হত্যা করছে, সংখ্যালঘুদের নির্যাতন করছে, ধর্মকে পুঁজি করে বানিজ্য করছে আবার সেই অর্থ দেশবিরোধী কাজে খরচ করছে।
যারা সামরিক শক্তিকে কাজে লাগিয়ে ক্ষমতা নিয়েছেন তাদের কথা বাদ দিলাম, কিন্তু স্বাধীনতার নেতৃত্ব দানকারী দলের কাছ থেকে সেই গোষ্ঠীর প্রতি এমন নমনীয় নীতি কখনোই প্রত্যাশা করেনা জাতি।
Discussion about this post