মানিকগঞ্জের সিংগাইরের একটি ধর্ষণ মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামির হয়ে টাকার বিনিময়ে আরেকজনের কারাভোগের ঘটনায় হাইকোর্ট মূল আসামির সাজা বহাল রেখেছেন।
ওই মামলার মূল আসামি আয়নাল হককে বিচারিক আদালতের দেওয়া যাবজ্জীবন সাজা বহাল রাখেন আদালত। ফলে নিম্ন আদালতের দেওয়া যাবজ্জীবন সাজা বহাল থাকলো বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কোর্টের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হারুন-অর-রশিদ।
ওই মামলা নিয়ে জারি করা রুলের শুনানি শেষে গতকাল সোমবার হাইকোর্টের বিচারপতি একেএম আব্দুল হাকিম ও এসএম মজিবুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রুলটি ডিসচার্জ করে এ আদেশ দেন।
সংশ্লিষ্ট কোর্টের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হারুন-অর-রশিদ জানান, ধর্ষণ মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি সেজে কারাভোগ করছিলেন সিংগাইর উপজেলার চক পালপাড়া গ্রামের আরজ খানের ছেলে আরিফ খান। তার জামিন আবেদনের শুনানির একপর্যায়ে বিষয়টি আদালতের নজরে আসে।
পরে গত ১৯ জুলাই মূল আসামি আয়নাল হককে আদালতে হাজির করা হলে বিষয়টি স্পষ্ট হয়। ওইদিন আদালত জালিয়াতিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে সিংগাইর থানার ওসিকে নির্দেশ দেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, মানিকগঞ্জের মৃত আমির উদ্দিনের ছেলে আয়নাল হকের বিরুদ্ধে ২০০৪ সালের ২৮ জুন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে সিংগাইর থানায় একটি ধর্ষণ মামলা হয়। মামলার অভিযোগে ঘটনার তারিখ বলা হয় ২০০৩ সালের ৯ ডিসেম্বর। এ মামলায় তদন্ত শেষে সিংগাইর থানা পুলিশ আয়নাল হকের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়। এরপর বিচার শেষে ২০১৩ সালের ২০ জানুয়ারি মানিকগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ আসামি আয়নাল হককে যাবজ্জীবন সাজা দিয়ে কারাদণ্ড দেয়। তবে আয়নাল হক মালয়েশিয়ায় থাকায় আদালত তাকে পলাতক দেখিয়ে সাজা দেন।
রায়ের পর আয়নাল হক সেজে একই গ্রামের আরিফ খান ২০১৩ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর মানিকগঞ্জ আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। পরে আদালত তাকে জেলে পাঠায়।
এদিকে, শর্ত অনুযায়ী আয়নাল হকের পরিবার আরিফ খানকে টাকা পরিশোধ না করায় সত্য ঘটনা প্রকাশ করে হাইকোর্টে আবেদন করেন আরিফের মা আলেয়া বেগম। তার ছেলে আরিফ খানকে অবৈধভাবে আটক রাখা হয়েছে দাবি করে এ আবেদন করা হয়। হাইকোর্ট বিষয়টি তদন্ত করে পুলিশকে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেন। কিন্তু আদালতে পুলিশের প্রতিবেদন না আসায় ২০১৫ সালের ২১ এপ্রিল হাইকোর্ট তার ছয়মাসের জামিন মঞ্জুর করেন। পাশাপাশি রুল জারি করেন। এরপর আরিফ খান কারাগার থেকে মুক্তি পান।
আরিফ খান জামিনে মুক্তির পর আয়নাল হক ২০১৫ সালের ৫ জুন মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফিরে আসেন। এরপর ৯ জুলাই আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। সেই থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন। এরপর তিনি সাজা বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে কোয়াশমেন্ট আবেদন করেন। এ নিয়ে আদালত রুল জারি করেন। একইসঙ্গে আসামি আয়নাল হক ও আরিফ খান এবং আরিফ খানের মা আলেয়া বেগমকে তলব করেন।
আদালতের নির্দেশে আয়নাল হককে গত ৩ জুলাই কারাগার থেকে হাইকোর্টে হাজির করা হয়। আদালত তার বক্তব্য শোনেন। এ সময় আরিফ খান আদালতকে জানান,তাকে নগদ দুই লাখ টাকা প্রদান এবং বিনা টাকায় মালয়েশিয়ায় নেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে আয়নাল হক সাজিয়ে আত্মসমর্পণ করানো হয়।
গত ১৯ জুলাই আদালত সব পক্ষের বক্তব্য শোনেন ও আদেশ দেন। আদেশে আরিফ খান ও তার মা আলেয়া বেগমের আবেদনে জারি করা রুল খারিজ করেন। আর আয়নাল হকের আবেদনে জারি করা রুলের ওপর ২৬ জুলাই শুনানির দিন ধার্য করেন। এরপর কয়েক দফা রুলের শুনানি শেষে ৩১ জুলাই মূল আসামির সাজা বহালের নির্দেশ দেন।
Discussion about this post