ফরিদ মিয়া, টাঙ্গাইল থেকে: চাতাল মানে চাল তৈরী করার কারখানা। চাতালের জন্য বিখ্যাত টাঙ্গাইল জেলা। আর জেলার ১২টি উপজেলায় এর সংখ্যা প্রায় ৪ শতাধিক। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের ডাকা টানা অবরোধ ও দফায় দফায় হরতালে হুমকির মুখে পড়েছে চাতালগুলো। ধান-চালের কেনা-বেচা না থাকায় বন্ধ হয়ে গেছে প্রায় ৩ শতাধিক কল। ফলে বেকারের পথে প্রায় ৯ হাজার শ্রমিক। আর শ্রমিকদের বেতন দিতে মিল মালিকদের বাড়ছে ব্যাংক ঋণের বোঝা। এ জন্য প্রতিদিন লোকসান গুনতে হচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা।
মালিকদের দাবি, চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এভাবে চলতে থাকলে খুব দ্রুত বন্ধ হয়ে যাবে এ ব্যবসা। গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে দেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার ফলে বন্ধ হয়ে গেছে চাতালগুলো ।
জেলা চাতাল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আমীর আলী জানান, জেলার ৪ শতাধিক চাতালে শ্রমিক আছে প্রায় ১২ হাজার। প্রতি শ্রমিকের মাসিক বেতন গড়ে ৮ হাজার ৫’শ টাকা হিসেবে ১২ হাজার শ্রমিকের বেতন দিতে হয় ১০ কোটি ২০ লক্ষ টাকা। কিন্তু টানা অবরোধ ও দফায় দফায় হরতালে চাতাল বন্ধ থাকায় শ্রমিকদের বেতন দেয়া অসম্ভব হয়ে পড়েছে। ফলে শ্রমিক ছাঁটাই করায় বন্ধ হয়ে গেছে ৩ শতাধিক চাতাল। আর চালু কলগুলোর মালিকরা শ্রমিকদের বেতন দিচ্ছে কয়েক দফায়। ফলে ভোগান্তিতে পড়েছে নিম্নআয়ের শ্রমিকদের পরিবার।
চাতাল মালিক নজরুল ইসলাম জানান, আগে উত্তরবঙ্গ থেকে এক ট্রাক ধান আনতে ভাড়া দিতে হতো ১২-১৫ হাজার টাকা। কিন্তু অবরোধ-হরতালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫-৩০ হাজার টাকায়। আর পেট্রোল বোমা-ককটেলের ভয়ে চালকরা গাড়ি বের না করায় সেটাও সম্ভব হচ্ছে না। ফলে মজুদকৃত চালও বিক্রি করতে পারছেন না তারা। আর বিক্রি না থাকায় শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করতে গিয়ে বাড়ছে ব্যাংক ঋণের বোঝা।
এলেঙ্গার চাতাল মালিক আজিম জানান, এক ট্রাকে প্রায় ৫ লক্ষ থেকে ৬ লক্ষ টাকার চাল থাকে। অবরোধে গাড়ি বের করলে পেট্রোল বোমা মেরে গাড়ি জ্বালিয়ে দেয়। আর চাল পুড়ে গেলে কে দেবে ক্ষতিপূরণ? তাই আপাতত চাল বিক্রির জন্য পাঠাচ্ছি না। এতে ক্ষতি হলেও কিছু করার নেই।
টাঙ্গাইল হাজী অটো রাইস মিলের মালিক জহিরুল ইসলাম জানান, চালের ব্যবসায় এখন আর লাভ হয় না। ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছি। প্রতিদিন সুদ দিতে হয় ৪২ হাজার টাকা। কিন্তু চলমান অবরোধে বিক্রি না হওয়ায় ব্যাংকের সুদ বেড়েই চলেছে। তাই বাধ্য হয়ে জমি বিক্রির জন্য বিজ্ঞাপন দিয়েছি। জমি বিক্রি হলেই ব্যাংকের টাকা পরিশোধ করতে পারব। আর এ ব্যবসায় থাকব না।
এদিকে শ্রমিকদের অবস্থা আরও ভয়াবহ। চাতালের অধিকাংশ শ্রমিক আসে উত্তরবঙ্গ থেকে। কাজ ও আয় বন্ধ থাকলেও অবরোধের কারণে যেতে পারছে না বাড়িতে। আয় না থাকায় বাড়িতে টাকা পাঠাতে পারছে না তারা। ফলে পরিবারের সদস্যরা দুর্বিষহ দিনাতিপাত করছে। এমতাবস্থায় দুইদলের জাতাকলে ব্যবসায়ী ও গরিব দিন মুজুর খেটে খাওয়া মানুষদের পিষ্ঠ না করে তাদের দিক বিবেচনা করে, হরতাল অবোরোধ প্রতাহার করার দাবী জানান ব্যবসায়ীরা।
Discussion about this post