ফরিদ মিয়া, টাঙ্গাইল প্রতিনিধি, বিডি ল নিউজঃ টাঙ্গাইলের দেলদুয়ারে বাঁশ শিল্পে বদলে গেছে কয়েকশ মানুষের ভাগ্যের চাকা। এ শিল্পের সাথে জড়িত হয়ে বেকাররা সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। এমনি একটি নাম মোহাম্মদ শাহ আলম ।
যুবক শাহ আলম বাঁশ শিল্পের মাধ্যমে বদলে দিয়েছেন কয়েকশ’ মানুষের ভাগ্যের চাকা।
সরেজমিনে বাথুলী, কোপাখী, প্রয়াগজানী, বর্ণী ও বারপাখিয়া গ্রাম ঘুরে বাঁশ শিল্পে জড়িতদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এসব গ্রামে অধিকাংশ ব্যক্তিই এ পেশার সাথে জড়িত। শাহ আলম করেছেন নারী পুরুষ ও যুবকদের সারা বছরের কাজের ব্যবস্থা। ঘরে বসেই তারা এখন মাসে ৫/৬ হাজার টাকা আয় করছেন।
বর্ণী গ্রামের শাহ আলমের বাড়ি গিয়ে কথা হয় তার সাথে। তিনি জানান, এসব অঞ্চলে বাঁশ শিল্প প্রায় দুইশ বছর ধরে চলে আসছে। তখন গৃহস্থালি সামগ্রী তৈরি করা হতো। তিনি ২৬ বছর আগে বাঁশ শিল্পের কাজ শুরু করেন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ার সময় শখ করে টুকিটাকি কাজ করতেন। পরে সংসারের অভাব অনটনের কারণে ৭ম শ্রেণীতে পড়ার সময় লেখাপড়ার পাশাপাশি বাঁশ শিল্পের সাথে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেন। কাজের পাশাপাশি তিনি এইচ.এস.সি পাশ করেন। যান্ত্রিক শিল্পের সামগ্রীর কারণে বাঁশ শিল্পের সামগ্রীর চাহিদা দিন দিন কমতে থাকে। বেকার হয়ে যায় এ অঞ্চলের বহু লোক। শাহ আলম নতুন ভাবে ভাবতে শুরু করেন। কিভাবে সবাইকে বেকারত্বের গ্লানি থেকে রক্ষা করা যায়।
পরে আজক ইন্টারন্যাশনালের সাথে চুক্তি হয় বাঁশের তৈরি পাখির বাসা বিদেশে রপ্তানির। কর্মচঞ্চল হয়ে উঠে অসংখ্য মানুষ। ১৯৯২ সালে দেশের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান আড়ং এর ডিজাইনার চন্দধ শেখর সাহা তাকে বাঁশের তৈরি সৌখিন পণ্য তৈরির পরামর্শ দেন। শাহ আলম নমুনা হিসেবে ৫টি পণ্য তৈরি করে আড়ং এ জমা দেন। তার পণ্যগুলো পছন্দ হওয়ায় বাণিজ্যিক ভাবে তৈরির অর্ডার পেয়ে যান তিনি। শুরু হয় নতুন ভাবে পথ চলা।
তিনি নিজেই নতুন নতুন সৌখিন পণ্যের ডিজাইন করে শ্রমিকদের দেন। তারা সেভাবেই তৈরি করে। দেশে বিদেশে ছড়িয়ে পড়ে শাহ আলমের বাঁশ শিল্পের সুনাম। পরে প্রবর্তনা, বাংলার মেলা, অনন্যা
কে ক্রাফট, উবিনীগ সহ দেশের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানে তিনি বাঁশের তৈরি সৌখিন পণণ্য সরবরাহ করেন।
তিনি বাংলাদেশ কারু শিল্প পরিষদ ২০০২ এ সেরা কারু শিল্পীর পুরস্কার পেয়েছেন। সরকারি ভাবে নেপাল, ভারত ও চীন সফর করেছেন। তিনি বর্তমানে টেধ, প্লেস ম্যাট, ফুলদানী, টেবিল ল্যাম্প, ডিধংক বক্স, ওয়াল ম্যাট ও বিভিন্ন ডিজাইনের ঝুড়ি সহ আধুনিক সৌখিন পণ্য তৈরি করছেন। বর্তমানে তার নতুন আবিষ্কার বাঁশের সৌখিন গহনা। প্রতি মাসে তিনি শুধু ঢাকাতেই প্রায় ৭/৮ লাখ টাকার পণ্য বিক্রয় করেন।
এব ব্যাপারে বর্ণী গ্রামের বাঁশ শধমিক নাজমুল হোসেন (৩২) বলেন, আমি ১২ বছর যাবত কাজ করছি। ভালভাবে কাজ করলে প্রতি মাসে ৫/৬ হাজার টাকা আয় হয়। একই গ্রামের ছানোয়ার হোসেন (৬০) বলেন, শাহ আলম বাঁশ শিল্পে নতুন পথ না দেখালে ছেলেমেয়েদর লেখাপড়া করাতে পারতাম না। এখন এ শিল্পের সাথে জড়িত আশেপাশের কয়েক গ্রামের মানুষ সারা বছরই কাজ করে ভালভাবে চলতে পারছে।
বর্ণী সুফিয়া ওমর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক কালিদাস চন্দ্র মন্ডল বলেন, বাঁশ শিল্পের কারণে এসব এলাকায় তেমন অভাব নেই। সারা বছরই কাজের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
এ ব্যাপারে শাহ আলম বলেন, আমি সবসময়ই আমার আশে পাশের লোকদের নিয়ে ভাবি। তাদের স্বল্প খরচে চিকিৎসা সেবা দেয়ার জন্য নাটিয়াপড়ায় একটি হাসপাতাল বানানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছি। সরকার এবং বেসরকারি উদ্যোক্তারা এগিয়ে আসলে এ শিল্পের আরও উন্নয়ন সম্ভব হবে বলে তিনি মনে করেন।
Discussion about this post