ধৈর্যের চরম পরীক্ষা দিয়ে হলেও প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে বাড়ি ফিরতে চায় মানুষ। অপেক্ষার ১ মিনিট যেখানে ১ দিনের মতো, সেখানে বাড়ি যাওয়ার টিকেট পেতে হাসিবুর রহমানের মত টিকিট প্রত্যাশীরা কমলাপুর রেলস্টেশনে অপেক্ষা করছেন ১৫ ঘণ্টা ধরে।
শুক্রবার ভোর রাতে কমলাপুর স্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে এমনই চিত্র। শুক্রবার সকালে টিকিট হাতে পেতে রাত থেকেই সেখানে অপেক্ষা করছেন কয়েক’শ মানুষ।
আসন্ন ঈদুল ফিতরে গ্রামে ফেরা মানুষের জন্য বৃহস্পতিবার সকাল থেকে অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরু হয়েছে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে। প্রথম দিনে টিকেট না পাওয়ায় শুক্রবারের টিকেট পেতে অনেকেই বৃহস্পতিবার বিকেল কিংবা সন্ধ্যায় কমলাপুর রেল স্টেশনের কাউন্টারের সামনে এসে অবস্থান নিয়েছেন। তাদেরই একজন হাসিবুর রহমান। রাজধানীর রামপুরায় অন্য দুই ভাইয়ের সঙ্গে থাকেন তিনি।শুক্রবার (১০ জুলাই) সকাল ৯টায় দ্বিতীয় দিনের মতো টিকেট বিক্রি শুরু হবে। লালমনিরহাট যাওয়ার অগ্রিম টিকেট পেতে কমলাপুর স্টেশনে এসেছেন বৃহস্পতিবার (০৯ জুলাই) বিকেল সোয়া ৬টার দিকে। লাইনের প্রথমে থাকার সুবাদে প্রায় ১৫ ঘন্টা পর অর্থাৎ পরদিন সকাল ৯টায় তার টিকেট পাওয়ার কথা রয়েছে।
লাইনে থাকা টিকেট প্রত্যাশীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের কেউ কেউ বৃহস্পতিবার বিকেল কিংবা সন্ধ্যার দিকে কমলাপুর স্টেশনে এসেছেন। তবে বেশির ভাগই এসেছেন রাত ৯টা থেকে সাড়ে ১২টার মধ্যে।
দীর্ঘ অপেক্ষার বিরক্তি কাটাতে অনেকে তাস কিংবা লুডু খেলছেন। এসব খেলার সঙ্গী পূর্বপরিচিত কিংবা লাইনের দাঁড়ানো পাশের মানুষগুলো। টিকেট পাওয়ার কষ্টটাকে ভাগাভাগি করতে স্বল্প সময়ে নিজের মধ্যে বন্ধুত্ব পাতিয়ে নিচ্ছেন অনেকে।
দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষার কষ্টকে হালকা করতে এই বন্ধুত্ব খুবই কাজের তবে স্বল্প সময়ে এসব পাতানো বন্ধুদের বিষয়ে বিশেষ সর্তক থাকাও একান্ত প্রয়োজন। যেন কোন অনাকাঙ্ক্ষিত বিপদ না ঘটে।
এদিকে দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পর সকাল বেলা টিকিট নেয়ার সময় সম্ভাব্য বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে অনেকেই নিজেদের উদ্যোগে এখনই তালিকা করে নিচ্ছেন। নতুন করে কেউ আসলে তাকে লাইনে অবস্থানের পাশাপাশি তালিকায় নাম অর্ন্তভুক্ত করিয়ে নিতে হচ্ছে।
টিকিটের জন্য এই দীর্ঘ অপেক্ষা, নির্ঘুম রজনী কাটানোর মধ্যেও আনন্দ খুঁজে নিচ্ছেন নাড়ির টানে বাড়ি ফিরতে যাওয়া মানুষগুলো। তাদের চেহারায় কষ্টের ছাপ থাকলেও মনে আচড় কাটতে পারেনি লাইনে দাঁড়ানোর কষ্ট।
লালমনিরহাটের রাকিব হাসান বাংলানিউজকে বলেন, টিকিটের জন্য অনেকেই আগে আগে এসেছে। এভাবে কষ্ট করে টিকিট নেয়ার মাঝেও একটা উৎসবের আমেজ আছে। তাছাড়া সকাল বেলা টিকিট হাতে পেলে এসব কিছু মনে থাকবে না-যোগ করেন তিনি।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার (০৯ জুলাই) বিক্রি হয়েছে ১৩ জুলাইয়ের টিকিট। ৫ দিন ধরে চলবে ঈদের এই অগ্রিম টিকিট বিক্রি। এর ধারাবাহিকতায় ১০ জুলাই ১৪ জুলাইয়ের, ১১ জুলাই ১৫ জুলাইয়ের, ১২ জুলাই ১৬ জুলাইয়ের এবং ১৩ তারিখ ১৭ জুলাইয়ের টিকিট দেওয়া হবে।
অন্যদিকে ঢাকায় ফেরার অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হবে ১৬ জুলাই থেকে। ১৬ জুলাই বিক্রি হবে ২০ জুলাইয়ের ফিরতি টিকিট, ১৭ জুলাই ২১ জুলাইয়ের, ১৮ জুলাই ২২ জুলাইয়ের, ১৯ জুলাই ২৩ জুলাইয়ের, ২০ জুলাই বিক্রি হবে ২৪ জুলাইয়ের ফিরতি অগ্রিম টিকিট।
Discussion about this post