বাংলাদেশের প্রধান শহর ঢাকার সাথে দ্বিতীয় প্রধান শহর চট্টগ্রামের ব্যবধান অনেক। এজন্য সবাই রাজধানী ঢাকায় চলে আসছে। সবকিছুই ঢাকা কেন্দ্রিক হয়ে পড়ছে। তাই এ চাপ কমাতে ঢাকা মানের আরো বিকল্প ৪ থেকে ৫টি শহর দেশে গড়ে তুলতে হবে। এক্ষেত্রে চট্টগ্রামের দিকে এখনই নজর দিতে হবে। একইসাথে শিক্ষা, সংস্কৃতি ও অবকাঠামো দিয়ে শহরকে সবার কাছে আকর্ষণীয় করতে হবে। তৈরি পোশাক শিল্প থেকে রফতানি আয় ৫০ বিলিয়ন ডলার করতে হলে চট্টগ্রামকে ঢাকার পরেই দ্বিতীয় প্রধান তৈরি পোশাক শিল্প এলাকা হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিপিআরসি’র আয়োজনে চট্টগ্রাম বিষয়ক এক আলোচনা সভায় বক্তারা এ কথা বলেন। গতকাল ডেইলি স্টার ভবনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, চট্টগ্রামে বর্তমানে ১৩৯টি প্রকল্প চলমান আছে। এর মধ্যে অনেক প্রকল্প জলাবদ্ধতা ও যানজট নিরসন সংক্রান্ত। এগুলো সম্পন্ন হতে ৩ বছর সময় লাগবে। এরপর সিটি করপোরেশনের দুরবস্থা আর থাকবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি। এসময় তিনি সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে বলেন, খুব শিগগিরই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা থেকে বায়োগ্যাস ও বিদ্যুত্ উত্পাদন করতে প্রয়োজনীয় প্রকল্প হাতে নেয়া হবে।
সভায় বক্তারা বলেন, সড়কপথে মিয়ানমার, চীনের কুনমিং, থাইল্যান্ড এবং ভিয়েতনাম পর্যন্ত বাণিজ্য গড়ে তুলতে হলে চট্টগ্রাম একমাত্র করিডোর। অপরদিকে, চট্টগ্রামের পর্যটন বলতে শুধুমাত্র কক্সবাজারকেই বুঝানো হয় অথচ চট্টগ্রামের একটি ঐতিহ্যবাহী নিজস্ব সংস্কৃতি রয়েছে যাকে কেন্দ্র করে পর্যটন শিল্প গড়ে তোলা যায়। একইসাথে চট্টগ্রামের একটা নিজস্ব ‘ব্র্যান্ডিং ভ্যালু’ গড়ে তুলার আহ্বান জানানো হয়।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে বিশ্বমানের করতে হলে চট্টগ্রাম শহরকে বিশ্বমানের হতে হবে। চট্টগ্রাম বন্দরের কারিগরি সুবিধা বাড়লেও ব্যবস্থাপনা জটিলতায় কার্গো হ্যান্ডলিং এ এখনো বেশি সময় লাগছে। সরকার মাতারবাড়িতে গভীর সমুদ্র বন্দর তৈরি করছে। গভীর সমুদ্র বন্দর তৈরির মধ্যবর্তী সময়ে চট্টগ্রাম বন্দরের উপর আরো চাপ পড়বে। এদিকটায় আমাদের নজর দিতে হবে।
আলোচনায় অংশ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, সবাই যেভাবে ঢাকামুখী হচ্ছে তাতে বাংলাদেশ এমন হবে যে একদিকে ঢাকা আর একদিকে সবকিছু মিলে মফস্বল।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সভাপতি ও এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. আবদুল মজিদ বলেন, চট্টগ্রামের বাণিজ্য বছরে ১৫ শতাংশ বাড়ছে, কিন্তু বন্দরের সক্ষমতা সে হারে বাড়ছে না। বিকেন্দ্রিকরণকে গুরুত্ব দিয়ে প্রাক্তন মুখ্য সচিব আবদুল করিম সভায় বলেন, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, কোস্টগার্ড এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তর ঢাকা থেকে সরিয়ে চট্টগ্রামে নিয়ে আসা যেতে পারে।
পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ড. শামসুল আলম বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের আয় থেকে একটা অংশ চট্টগ্রামের উন্নয়নে সরাসরি ব্যয় করা দরকার। এ কাজটি করতে হলে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে কার্যকর ও জবাবদিহি করতে হবে। স্থানীয় উন্নয়নের দায়িত্ব স্থানীয় সরকারের মাধ্যমে হলে তা বেশিমাত্রায় অর্থবহ হবে।
সূত্রঃদৈনিক ইত্তেফাক
Discussion about this post