নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভোটগ্রহণের সময় বাড়তি পুলিশ ও আনসার সদস্য মোতায়েনের প্রস্তাব করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ। এতে সাধারণ ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তায় ২০ জন এবং গুরুত্বপূর্ণ (ঝুঁকিপূর্ণ) কেন্দ্রে ২০ থেকে ২২ জন মোতায়েনের কথা জানানো হয়েছে। আর ভোটকেন্দ্রের বাইরের নিরাপত্তায় পুলিশের মোবাইল ও স্ট্রাইকিং টিমের সংখ্যা দ্বিগুণ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এবং কয়েক প্লাটুন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) বাড়ানোর কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
এসব প্রস্তাবনা উল্লেখ করে দুই সিটি নির্বাচনের নিরাপত্তা পরিকল্পনার খসড়া পরিপত্র নির্বাচন কমিশনে পাঠিয়েছে জননিরাপত্তা বিভাগ। তবে ভেটিংয়ে পুলিশ ও বিজিবি বাড়ানোর প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কমিশনের প্রস্তাবনা অনুযায়ী পুলিশ মোতায়েন পরিকল্পনা উল্লেখ করে পরিপত্র জারি করতে নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে।
আজ সোমবার (২৭ জানুয়ারি) বা আগামীকাল মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিরাপত্তা সংক্রান্ত পরিপত্র জারি করার কথা রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসির অতিরিক্ত সচিব মো. মোখলেসুর রহমান বলেন, নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন সংক্রান্ত পরিপত্রের খসড়া ভেটিংয়ের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আমাদের কাছে পাঠিয়েছে। ওই পরিপত্র জারির পরই জানা যাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কতজন সদস্য এ নির্বাচনে মোতায়েন করা হবে। পরিপত্র জারির আগে কিছু বলা সমীচীন হবে না।
জানা গেছে, ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনের খরচ হিসেবে পুলিশ প্রায় ২৬ কোটি ৪২ লাখ টাকা চেয়েছিল। এর বিপরীতে ৮ কোটি ১ লাখ টাকা অর্থছাড় করতে চিঠি দিয়েছে ইসি। আর আনসার ও ভিডিপি সদস্যদের জন্য বরাদ্দ দিয়েছে ৯ কোটি ৮ লাখ ২২ হাজার টাকা। বিজিবির পক্ষ থেকে চাহিদা না পাওয়ায় এ সংস্থাটিকে রবিবার পর্যন্ত বরাদ্দ দেয়া হয়নি।
ঢাকার দুই সিটি নির্বাচন উপলক্ষে আগামী ৩০ জানুয়ারি পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স মাঠে নামছে। এর আগে নির্বাচনে কতসংখ্যক টিম মাঠে থাকবে তা উল্লেখ করে পরিপত্র জারি করবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ইতিমধ্যে খসড়া পরিপত্র ভেটিংয়ের জন্য নির্বাচন কমিশনে পাঠিয়েছে। এতে পুলিশের মোবাইল ও স্ট্রাইকিং টিমের সংখ্যা বাড়িয়ে দ্বিগুণ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। আর ভোটকেন্দ্রে নিরাপত্তা বাহিনীর সংখ্যা বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে।
প্রস্তাব অনুযায়ী, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রতিটি সাধারণ ওয়ার্ডে পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসারের দুটি করে মোবাইল টিম হিসেবে ১০৮টি এবং প্রতিটি থানায় দুটি করে রিজার্ভ স্ট্রাইকিং টিম হিসেবে ৫৪টি রাখার প্রস্তাব করেছে।
প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে ২৭টি টিম মোতায়েনের কথা জানিয়েছে। আর ৫৪টি ওয়ার্ডে ৫৪টি র্যাবের টিম এবং ভোটকেন্দ্র সংখ্যা বিবেচনা করে ৩০ প্লাটুন বিজিবি রাখার কথা বলা হয়েছে।
অপরদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনেও একই হারে প্রস্তাব করা হয়েছে। এ সিটিতে পুলিশ ও এপিবিএন সমন্বয়ে গঠিত ১৫০টি মোবাইল টিম, ৩৮টি স্ট্রাইকিং এবং ৫০টি রিজার্ভ স্ট্রাইকিং ফোর্স মোতায়েনের প্রস্তাব করা হয়েছে খসড়া পরিপত্রে। এছাড়া র্যাবের ৭৫টি টিম ও ৪০ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েনের কথা বলা হয়েছে।
সূত্র জানায়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এসব প্রস্তাবে আপত্তি রয়েছে নির্বাচন কমিশনের। খসড়া পরিপত্র ভেটিংয়ে পুলিশ ও বিজিবির সংখ্যা কমিয়ে দেয়া হচ্ছে। ঢাকা উত্তর সিটিতে পুলিশের মোবাইল টিমের সংখ্যা ১০৮ থেকে কমিয়ে ৫৪টি ও দক্ষিণ সিটিতে ১৫০টি থেকে কমিয়ে ৭৫টি নির্ধারণ করে দিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। আর ঢাকা উত্তর সিটিতে স্ট্রাইকিং ফোর্সের ২৭টি থেকে কমিয়ে ১৮টি ও দক্ষিণ সিটিতে ৩৮টি থেকে কমিয়ে ২৫টি করা হচ্ছে। একইভাবে রিজার্ভ ফোর্সের সংখ্যা অর্ধেক কমিয়ে ঢাকা উত্তরে ২৭টি ও দক্ষিণে ২৫টি করা হচ্ছে।
তবে র্যাবের ফোর্সের সংখ্যায় কোনো হেরফের করা হচ্ছে না। কমানো হয়েছে বিজিবির সংখ্যা। ঢাকা উত্তর সিটিতে বিজিবি প্রস্তাবিত ৩০ প্লাটুন থেকে কমিয়ে ২৭ প্লাটুন ও দক্ষিণে ৪০ প্লাটুন থেকে কমিয়ে ৩৮ প্লাটুন মোতায়েনের জন্য বলা হচ্ছে।
পরিপত্রে স্থানীয় চাহিদা, ভোটকেন্দ্রের অবস্থান, কেন্দ্র সংখ্যা ও ওয়ার্ড বিন্যাস বিবেচনায় বাস্তবতার নিরিখে রিটার্নিং অফিসারকে মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্সের সংখ্যা কমবেশি করার এখতিয়ার দেয়া হচ্ছে।
ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা: স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের খসড়া পরিপত্রে সাধারণ কেন্দ্রের নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ২০ জন ও ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ২০ থেকে ২২ জন সদস্য মোতায়েনের প্রস্তাব করেছে। সাধারণ কেন্দ্রে পুলিশের ৪ জন, অস্ত্রসহ আনসার ২ জন ও লাঠিসহ আনসার সদস্য ১৪ থাকার কথা বলেছে।
ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে পুলিশ সদস্য দু’জন বাড়িয়ে ৬ জন করার কথা বলেছে। এ প্রস্তাবনাও আংশিক নাকচ করেছে ইসি। সাধারণ কেন্দ্রে ২০ জনের স্থলে ১৪ জন ও ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ২০-২২ জনের স্থলে ১৮ জন মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত দিচ্ছে ইসি।
এক্ষেত্রে পুলিশ সদস্য ঠিক রেখে আনসার সদস্য কমানোর কথা বলা হয়েছে। পরিপত্রে দুই সিটিতে ভোটের দু’দিন আগ থেকে পরের দিন পর্যন্ত অর্থাৎ ৩০ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১২৯ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং ৭৪ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের সিদ্ধান্ত দিচ্ছে ইসি।
আইনশৃঙ্খলা খাতে বাজেট: ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে পুলিশ, র্যাব ও এসবির জন্য সব মিলে ২৬ কোটি ৪২ লাখ ৬৩ হাজার টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছিল। নির্বাচন কমিশন ওই চাহিদার বিপরীতে ৮ কোটি ১ লাখ ৬২ হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়েছে ইসি।
রবিবার এ সংক্রান্ত বরাদ্দপত্র পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে ৩ কোটি ৯৬ লাখ ৪৫ হাজার টাকা এবং দক্ষিণ সিটিতে ৪ কোটি ৫ লাখ ১৬ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে। অপরদিকে আনসার বাহিনী চাহিদা না দিলেও নির্দিষ্ট হার অনুযায়ী ৯ কোটি ৮ লাখ ২২ হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়েছে ইসি।
Discussion about this post