তথ্য গোপন করে একই সঙ্গে দুই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মো. শওকত আলী। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম লঙ্ঘন করে তিনি আমেরিকান ইন্টারন্যাশন্যাল ইউনির্ভাসিটি, বাংলাদেশের অর্থনীতি বিভাগের স্থায়ী শিক্ষক হিসেবেও কর্মরত। বেসরকারি এ বিশ্ববিদ্যালয়টির অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
আমেরিকান ইন্টারন্যাশন্যাল ইউনির্ভাসিটি বাংলাদেশের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, অধ্যাপক মো. শওকত আলী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক সহযোগী অধ্যাপক এবং এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মো. শওকত আলী জাবির অর্থনীতি বিভাগের স্থায়ী অধ্যাপক। তিনি গত ০১ আগস্ট থেকে আগামী বছরের ৩১ জুলাই পর্যন্ত এক বছরের শিক্ষা ছুটি নিয়েছেন। এর মধ্যে তিনি মাসখানেক আগে একবার বিভাগে যোগদান করে পরে আবারও ছুটি নেন। তিনি ২০০৬ সালের ০১
জানুয়ারি থেকে আমেরিকান ইন্টারন্যাশন্যাল ইউনির্ভাসিটি বাংলাদেশে শিক্ষকতা করছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানান, প্রশাসনের অনুমতি সাপেক্ষে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অস্থায়ী হিসেবে ক্লাস নেওয়ার সুযোগ পান শিক্ষকরা। সেটা নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস আওয়ারে নয়। কিন্তু শিক্ষা ছুটি নিয়ে একই সঙ্গে দু’টি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী শিক্ষক হওয়া যায় না। এটা ‘নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধ’। এক্ষেত্রে শিক্ষা ছুটির অপব্যবহার করা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিভাগের একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, মো. শওকত আলী ক্লাসে নিয়মিত নন। তিনি সপ্তাহে দুই তিন দিন বিভাগে আসেন এবং রুটিন
অনুসারে নয়, তার সময় অনুসারে ক্লাস নেন। প্রতি কোর্সে সর্বোচ্চ ১০/১৫টি ক্লাস নেন এবং টিউটোরিয়ালও ঠিকমতো নেন না।
মো. শওকত আলী বলেন, ‘আমি আমেরিকান ইন্টারন্যাশন্যাল ইউনির্ভাসিটি বাংলাদেশে উপদেষ্টা হিসেবে আছি, শিক্ষক হিসেবে নয়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমি গত ০১ আগস্ট থেকে ২০১৭ সালের ৩১ জুলাই পর্যন্ত এক বছরের শিক্ষা ছুটি নিয়েছি’।
তিনি বলেন, ‘২০০৬ সালের ০১ জানুয়ারি থেকে আমি আমেরিকান ইন্টারন্যাশন্যাল ইউনির্ভাসিটি, বাংলাদেশে আছি’।
আমেরিকান ইন্টারন্যাশন্যাল ইউনির্ভাসিটি বাংলাদেশের কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমি তো একাডেমিক দিকটা দেখি। প্রশাসনিক বিষয়গুলো মানবসম্পদ বিভাগ বলতে পারবে’।
পরে ডিন অফিসও জানায়, মো. শওকত আলী বেসরকারি ওই বিশ্ববিদ্যালয়টির অর্থনীতি বিভাগের স্থায়ী শিক্ষক ও সহযোগী অধ্যাপক। বর্তমানে তিনি বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন।
অথচ জাবির অর্থনীতি বিভাগের বিভাগীয় সভাপতি মোহাম্মদ আমজাদ হোসেন জানেনই না যে, শওকত আলী ছুটি ভোগ করছেন। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘শওকত আলী তো শিক্ষা ছুটির জন্য আবেদন করেছেন’।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম বলেন, ‘একই সঙ্গে দুই বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ী শিক্ষক হিসেবে চাকরি করতে পারার কথা নয়। যদি এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটে থাকে এবং আমরা প্রমাণ পাই, তাহলে প্রশাসনের উচ্চ পর্যায় ছাড়াও সিন্ডিকেটে আলোচনা সাপেক্ষে এ বিষয়ে করণীয় ঠিক করা হবে’।
Discussion about this post