টাঙ্গাইলের মধুপুরে বগুড়ার একটি যাত্রীবাহী বাসে তরুণী ধর্ষণ ও হত্যার বর্ণনা দিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে বাসচালক হাবিবুর রহমান হাবিব ও সুপারভাইজার সফর আলী ওরফে গেন্দা। তবে তারা এসব ঘটনায় নিজেদের সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করে বাসে থাকা অপর তিন সহকারী (হেলপার) তরুণীকে ধর্ষণের পর হত্যা করেছেন বলে দাবি করেছে। বুধবার দুপুর আড়াইটা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত টাঙ্গাইলের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম রোকন কুমার দাস, গোলাম কিবরিয়া ও মো.শামছুল আলম পৃথক পৃথকভাবে তাদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করেন বলে জানান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও মধুপুর থানার উপ-পরিদর্শক কাইয়ুম খান চৌধুরী।
এ নিয়ে গণধর্ষণের পর হত্যা মামলায় গ্রেফতার ৫ আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করা হল। জবানবন্দি রেকর্ড শেষে বিচারক বাসের চালক ও সুপারভাইজারকে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে দেওয়া বর্ণনায় তারা ধর্ষণে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে বলে, এক সহকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে ওই তরুণী ময়মনসিংহগামী তাদের পরিচালিত ছোঁয়া পরিবহনের (ঢাকা মেট্রো ব-১৪-৩৯৬৩) বাসে উঠেন। ওই তরুণী ছাড়াও বাসে আরও পাঁচ-ছয়জন যাত্রী ছিল। বাসে থাকা অন্য সব যাত্রী সিরাজগঞ্জ মোড়, বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম প্রান্ত ও এলেঙ্গায় নেমে যায়। তরুণীর সহকর্মীর কর্মস্থল ঢাকায় হওয়ায় তিনিও টাঙ্গাইলের এলেঙ্গায় নেমে যান। তবে ওই বাসেই ময়মনসিংহে পৌঁছানোর কথা ছিল ধর্ষিত ও হত্যার শিকার ওই তরুণীর। এরপর বাসটি টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার কাছাকাছি এলে বাস চালকের সহকারী শামীম তরুণীকে জোর করে পেছনের আসনে নিয়ে যান। এ সময় তরুনীটি তার কাছে থাকা পাঁচ হাজার টাকা ও মুঠোফোন শামীমকে দিয়ে তাকে নির্যাতন না করতে হাতজোড় করে অনুরোধ করেন। কিন্তু শামীম কোনও কথাই শোনেননি। পরে শামীম, আকরাম ও জাহাঙ্গীর তাকে ধর্ষণ করে। এ সময় ধর্ষিতা তরুণী কান্নাকাটি ও চিৎকার শুরু করায় তারা তিনজন তার মুখ চেপে ধরে। একপর্যায়ে ঘাড় মটকে তাকে হত্যাও করে তারা। পরে মধুপুর উপজেলা সদর অতিক্রম করে বন এলাকায় রাস্তার পাশে ওই তরুণীর মরদেহটি ফেলে রেখে চলে যায়। এ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কোর্ট ইন্সপেক্টর আনোয়ারুল ইসলাম।
এ ছাড়াও গত মঙ্গলবার বিকেলে ময়মনসিংহ জেলা মির্জাপুর গ্রামের কামাল হোসেনের ছেলে আকরাম, এমদাদুল হকের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম ও ময়মনসিংহ জেলা মুক্তাগাছা উপজেলার নন্দীবাড়ি গ্রামের খোরশেদের ছেলে শামীম হোসেন একই বক্তব্যে গণধর্ষণের কথা স্বীকার করে টাঙ্গাইলের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো.গোলাম কিবরিয়া, মো. আমিনুল ও মো. সামছুল হক এর আদালতে পৃথক পৃথকভাবে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয় বলেও জানান তিনি। জবানবন্দি শেষে তাদের জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
এ ঘটনায় আটককৃতরা হলো, বাসচালক ময়মনসিংহের মির্জাপুরের হাবিব, সুপারভাইজার একই এলাকার সফর আলী ওরফে গেন্দা,বাসচালকের সহকারী (হেলপার) আকরাম হোসেন,বাসচালকের সহকারী (হেলপার)জাহাঙ্গীর হোসেন ও বাসচালকের সহকারী (হেলপার)মুক্তাগাছা উপজেলার নন্দীবাড়ির শামীম হোসেন।
উল্লেখ্য, গত ২৫ আগস্ট শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল সড়কের মধুপুর উপজেলাস্থ পঁচিশ মাইল এলাকার সুমী নার্সারির কাছে রাস্তার পাশে পড়ে থাকা অজ্ঞাত পরিচয়ের একটি তরুণীর মরদেহ উদ্ধার করে মধুপুর থানা পুলিশ। পরে মধুপুর সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আলমগীর কবিরের নেতৃত্বে ওসি মো. সফিকুল ইসলাম, ওসি (তদন্ত) মো. নজরুল ইসলাম, অরণখোলা পুলিশ ফাঁড়ির এসআই আমিনুল ইসলামসহ একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে। পরে মরদেহটি থানায় আনা হয়। এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে অজ্ঞাত মরদেহ উদ্ধার হিসেবে সংবাদ প্রকাশ পায়। এদিকে মরদেহের পরিচয় না মেলায় শনিবার ময়নাতদন্ত শেষে বেওয়ারিশ মরদেহ হিসেবে টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় কবরস্থানে দাফন করে পুলিশ। এরপর সোমবার গণমাধ্যমে উদ্ধারকৃত মরদেহের ছবি ও সংবাদ দেখে লাশটি নিজের বোনের বলে শনাক্ত করেন নিহতের বড় ভাই মো. হাফিজুর রহমান। পরে থানায় এসে মামলা করেন তিনি। বড় ভাইয়ের দেওয়া তথ্য মতে পুলিশ নিশ্চিত হয় ধর্ষণের পর হত্যার শিকার ওই তরুণীর নাম পরিচয়।
নিহতের ভাই আরও বলেন, তার বোন ছিলেন একজন মেধাবী ছাত্রী। তিনি বগুড়া আজিজুল হক কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে অনার্স-মাস্টার্স শেষ করে ঢাকার আইডিয়াল ‘ল’ কলেজে এলএলবি শেষ বর্ষে অধ্যয়নরত ছিলেন।ওই দিন তিনি ‘শিক্ষক নিবন্ধন’ পরীক্ষায় অংশও নিয়েছিলেন । একইসঙ্গে ময়মনসিংহ জেলা সদরে ইউনিলিভার কোম্পানির প্রোমোশনাল ডিভিশনে কাজ করছিলেন তিনি।
Discussion about this post