ভারতের সর্বোচ্চ আদালতকে কার্যত চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে ব্যক্তিগত মুসলিম আইন রক্ষায় নিয়োজিত সর্বভারতীয় সংগঠন অল ইন্ডিয়া মুসলিম পারসোনাল ল’ বোর্ড (এআইএমপিএলবি)। তালাক কিংবা বিয়ের মতো বিষয়গুলোতে আদালতের কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার নেই বলে মত দিয়েছে সংগঠনটি। এআইএমপিএলবি-র দাবি, ধর্মীয় বিশ্বাস হলো ব্যক্তির জন্য নিশ্চিত করা সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার। বিয়ে বা তালাকের ব্যাপারে আদালত সিদ্ধান্ত নিলে সেই অধিকার ক্ষুণ্ন হয়।
কোরআনকে সুপ্রিম কোর্ট দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।
উল্লেখ্য, সমাজতত্ত্বে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী এক ভারতীয় নারীর করা এক মামলার প্রেক্ষিতেই মুসলিম নারীদের অধিকারের ওপর তিন তালাকের প্রভাব নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। সেই নারীর নাম সায়রা বানু। উত্তরাখণ্ডের বাসিন্দা তিনি। গত বছর অক্টোবর মাসে অনেক দিন পর সায়রা বাবার বাড়িতে এসেছিলেন ডাক্তার দেখাতে। তবে হঠাৎ তালাকনামা পান ওই দুই সন্তানের মা। ১৫ বছর সংসার করে হঠাৎ তালাকনামা পেয়ে অবাক সায়রা স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। কোন উপায় না দেখে এ বছর ফেব্রুয়ারি মাসে সায়রা বানু সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করেন। সেই মামলার প্রেক্ষিতে সর্বোচ্চ আদালত ব্যক্তিগত মুসলিম আইনের সংস্কার করে নারীদের দুরাবস্থা নিরসনে আইনি বিষয়গুলো খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নেয়।
দ্য হিন্দু-র শনিবারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিন তালাক ইস্যুতে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের পদক্ষেপ বাস্তবায়িত হলে সংবিধান-স্বীকৃত মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন হবে বলে মনে করছে অল ইন্ডিয়া মুসলিম পারসোনাল ল’ বোর্ড। তারা বলেছে, ব্যক্তিগত আইন চ্যালেঞ্জ করা যায় না।
অবশ্য গত বছর অক্টোবর মাসের ১৬ তারিখে গত জুনে সুপ্রিম কোর্টে শুনানির সময়ও তালাকের বিরোধিতা করেছিল এআইএমপিএলবি। সে সময় তারা একটি রুলের কথা উল্লেখ করে তালাকের বিরোধিতা করে। উল্লেখ্য, ১৯৮৫ সালে তালাক সম্পর্কিত বিষয়ে পাঁচ সন্তানের মা ৬২ বছর বয়সী শাহবানুর প্রশ্ন নিয়ে বেকায়দায় পড়েছিল তৎকালীন রাজীব গান্ধী সরকার। তখন দেশটির সর্বোচ্চ আদালত শাহবানুকে দেয়া তার স্বামীর তালাক বহাল রেখেছিল। ১৯৮৬ সালে তালাকের সুরক্ষা নিশ্চিত করে আইন জারি হয়েছিল ভারতে। সেই আইন আজও বলবৎ রয়েছে।
সেই রায় আর পরবর্তী আইনের প্রসঙ্গ ধরেই জুলাইয়ে অল ইন্ডিয়া মুসলিম পারসোনাল ল’ বোর্ড বলেছিল. ব্যক্তিগত আইন পালনকে আদালতের অন্তর্ভূক্ত না করার ব্যাপারে যে একটি রুলিং রয়েছে। তবে তখন দুটি এনজিও’র পক্ষের আইনজীবী সিনিয়র অ্যাডভোকেট ইন্দিরা জয়সিং বলেছিলেন, বোর্ড অনেক পুরনো একটি রায়ের কথা উল্লেখ করেছে, যা বোম্বে হাই কোর্টের প্রথম ভারতীয় প্রধান বিচারপতি দিয়েছিলেন।
তবে এখন এআইএমপিএলবি আবারও বলছে, বিয়ে ও তালাকের মতো ধমীয়-ব্যক্তিগত বিশ্বাসের ক্ষেত্রে ‘আদালত তাদের নিজস্ব ব্যাখ্যা এ ক্ষেত্রে আরোপ করতে পারেন না।’
৬ সেপ্টেম্বর এ সংক্রান্ত রায় জানাবে ভারতের সর্বোচ্চ আদালত। রায়ের দিনকে সামনেরেখেই নিজেদের অবস্থান জানালো ‘অল ইন্ডিয়া মুসলিম পারসোনাল ল’ বোর্ড। দ্য হিন্দু, এএনআই, উইকিপিডিয়া, বিবিসি
Discussion about this post