নিজস্ব প্রতিবেদক: কেরানীগঞ্জে অবস্থিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তিন মাসে ছাড়া পেয়েছেন ১০ হাজার ৭২০ বন্দি। এর মধ্যে জুলাইয়ে ৩ হাজার ৬৭৫, আগস্টে ৪ হাজার ১০৫ ও সেপ্টেম্বরে ২ হাজার ৯৫০ জন মুক্তি পেয়েছেন। এর বাইরে চলতি মাসের প্রথম ৬ দিনে ছাড়া পেয়েছেন ১ হাজার ২৮০ বন্দি।
কেন্দ্রীয় কারাগার সূত্রে জানা যায়, দেশের কারাগারগুলোতে ‘লঘু অপরাধে’ বন্দি থাকা প্রায় ৬ হাজার আসামিকে মুক্তি দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ওই তালিকায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ১ হাজার ২৪৫ জনের নাম রয়েছে। তাদের বিষয়ে আদালতে নথিপত্র উপস্থাপন করা হচ্ছে। আদালতের নির্দেশ পাওয়ার পরই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
সূত্র জানিয়েছে, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের বন্দি ধারণ ক্ষমতা সাড়ে ৪ হাজার। এই মুহূর্তে এখানে সাড়ে ১০ হাজার বন্দি আছেন। কারাগারের ধারণ ক্ষমতা বাড়াতে কারা কমপ্লেক্সের ভেতর আরও দুইটি ছয় তলা ভবন তৈরি করা হয়েছে। এ দুই ভবনে ৩ হাজার বন্দির থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। শিগগিরই ভবন দুটি বুঝে পাওয়ার আশা করছে কারা কর্তৃপক্ষ।
কারা অধিদফতরের এক কর্মকর্তা জানান, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি মহল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে পারে। পুলিশ যেকোনো মূল্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করবে। এ কারণে নতুন দুটি ভবন প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে।
সূত্র জানায়, সম্প্রতি যেসব বন্দি মুক্তি পেয়েছেন তাদের ৬০ ভাগই মাদক মামলার আসামি। ২০ ভাগ রাজনৈতিক, বাকিরা অন্যান্য মামলার আসামি। ওই সূত্রটি জানায়, ৩ মাসে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নতুন বন্দি এসেছে ১৭ হাজার ৫২২ জন।
এর মধ্যে জুলাইয়ে ৬ হাজার ৪৯৫, আগস্টে ৪ হাজার ৫৯০ ও সেপ্টেম্বরে ৬ হাজার ৪৩৭ জন। আর চলতি মাসের ছয় দিনে এসেছে ১ হাজার ৭৯৬ জন। আগে মাদক মামলার আসামি বেশি এলেও গত এক মাসে রাজনৈতিক মামলার বন্দি বাড়ছে।
বিএনপির দাবি, গত এক মাসে সারা দেশে ৪ হাজারের বেশি মামলায় ৩ লাখ ৬০ হাজার নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে ৪ হাজার ৬০০ জনকে।
দলটির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী রবিবার বলেছেন, গত এক মাসে ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন থানায় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ২৯১টি মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। এসব মামলায় আসামি হিসেবে ৮ হাজার ৫৯৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে ৩২ হাজার ৮৫৪ জনকে। ১ সেপ্টেম্বর থেকে এ পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে ৫৫১ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের মধ্যে ১৩৭ জন এখন রিমান্ডে আছেন। নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা করেন।
জানতে চাইলে কারা অধিদফতরের এআইজি আমিরুল ইসলাম বলেন, দেশের কারাগারগুলোতে লঘু অপরাধে যারা বন্দি আছেন, তাদের মুক্তির বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে তালিকা করা হয়েছে। আদালতের মাধ্যমেই তাদের মুক্তি দেয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার ও ফেনী কারাগার থেকে তালিকাভুক্ত বেশকিছু বন্দি মুক্তি পেয়েছেন। তালিকায় থাকা অন্য বন্দিরাও একই প্রক্রিয়ায় মুক্তি পাবেন।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার ইকবাল কবির চৌধুরী বলেন, কারা অভ্যন্তরে নতুন দুটি ভবন নির্মাণের কাজ শেষ হলেও ভবনগুলো এখনও বুঝে পাইনি। ভবন দুটি তৈরি করেছে গণপূর্ত অধিদফতর। তাই অধিদফতরকে ভবনগুলো দ্রুত বুঝিয়ে দিতে বলেছি। বুঝে পাওয়ার পরই সেগুলোতে নতুন বন্দি উঠানো হবে। তবে, কারাগারে নতুন বন্দি আসা বা বন্দিদের ছেড়ে দেয়ার বিষয়ে কারা কর্তৃপক্ষের কোনো হাত নেই। আদালত কাউকে কারাগারে রাখার নির্দেশ দিলে আমরা তাকে রাখি। আবার কাউকে মুক্তির আদেশ দিলে আমরা কেবল সেই আদেশ প্রতিপালন করি।
Discussion about this post