তুরস্কের কারাগারে মানবেতর জীবনযাপন করছেন দুই হাজার বাংলাদেশি। তারা দ্রুত স্বজনদের কাছে ফিরে আসতে চান। তাদের একটি বড় অংশ ইউরোপে প্রবেশ করতে গিয়ে তুরস্কের নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে আটক হয়েছে। কিছু মানুষ সিরিয়ায় ঢুকতে গিয়ে আটক হয়েছেন। তুরস্কে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এসব বাংলাদেশিকে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে নিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি দিয়েছেন। ওই চিঠিতে ৪ দফা সুপারিশও করেছেন তিনি। রাষ্ট্রদূত আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, আটক বাংলাদেশিদের দ্রুত স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের ব্যবস্থা না করলে তারা ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদে জড়িয়ে পড়তে পারে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে রাষ্ট্রদূত যে সুপারিশগুলো করেছেন সেগুলো হলো, এনএসআই এবং এসবির নিরাপত্তা ছাড়পত্র ৩-৪ সপ্তাহের মধ্যে সম্পন্ন করে দূতাবাসে প্রেরণ, কাজের সুবিধার্থে এনএসআই এবং এসবিতে ফোকাল পয়েন্ট নিযুক্ত করা, যোগাযোগের বিদ্যমান প্রক্রিয়াকে সংক্ষিপ্ত করে এনএসআই এবং এসবি হতে সরাসরি দূতাবাস ও কনস্যুলেট জেনারেলে ইলেক্ট্রনিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রিপোর্ট আদান-প্রদান করা, একই সঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুলিপি প্রদান করে অবহিত করা এবং ঢাকার ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্টমিডিয়ার মাধ্যমে ইউরোপে অবৈধভাবে যাওয়ার ঝুঁকি সম্পর্কে ব্যাপকভিত্তিক প্রচার চালানো।
সূত্র জানিয়েছে, দুই হাজার বাংলাদেশির মধ্যে ইতোমধ্যে ৪৭০ জনের পরিচয়পত্র সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছে দূতাবাস। অন্যদের বাংলাদেশ থেকে নিরাপত্তা ছাড়পত্র বিলম্ব হওয়ার কারণে তাদের প্রত্যাবর্তনও পিছিয়ে পড়ছে। জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব ড. কামালউদ্দিন আহমেদ বলেন, যারা তুরস্কে আটক আছেন তাদের মধ্যে কতজন বাংলাদেশি নাগরিক তা যাচাই-বাছাই ছাড়া বলা মুশকিল। যাচাই-বাছাই করে যারা বাংলাদেশি নাগরিক বলে প্রতীয়মান হচ্ছে তাদের দেশে প্রত্যাবর্তনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
জানা গেছে, ইউরোপে পাড়ি জমাতে বাংলাদেশিরা ঢাকা থেকে দুবাই বা তুরস্ক হয়ে লিবিয়া যাচ্ছেন। সেখান থেকে নৌকায় করে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালির উপকূলে গিয়ে উঠছেন। লিবিয়া পর্যন্ত যেতে ‘এজেন্সি’ বা পাচারকারীদের তারা জনপ্রতি ১০ হাজার ডলার (প্রায় আট লাখ টাকা) দিচ্ছেন। লিবিয়া থেকে ইতালি যেতে নৌকার জন্য দিতে হয় আরও ৭০০ ডলার (প্রায় ৫৬ হাজার টাকা)। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর খবর অনুযায়ী নৌকায় ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয়প্রার্থীদের মধ্যে এখন বাংলাদেশিরাই শীর্ষে। যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়া কিংবা ইরাক, আফগানিস্তান ও ইরিত্রিয়ার মতো দেশের গৃহহারা মানুষজনের বহুল ব্যবহৃত এ ‘পথে’ এখন তাদের ছাপিয়ে বাংলাদেশিদের সংখ্যাই বেশি। এভাবে বিপদসঙ্কুুল পথে ইউরোপ পাড়ি দিতে গিয়ে তুরস্কসহ বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশিদের পাশাপাশি রোহিঙ্গারা আটক হচ্ছে।
Discussion about this post