সাঈদ চৌধুরী:
সবচেয়ে কাছের মানুষ স্বামী স্ত্রীর মধ্যেও তোষামোদের ব্যপারটি কখনও কখনও চলে আসে । কোন কিছু চাইবার ক্ষেত্রে স্ত্রীরা একটু বেশী আহ্লাদী হওয়া অস্বাভাবিক নয় । এই অস্বাভাবিকতা স্বামী যদি মনে করে স্ত্রী আমাকে বেশী বেশী গুণের কথা বলে কিছু আদায় করতে চাইছে তবে তার কাছে তোষামোদ মনে হওয়াটা খুব অস্বাভাবিক নয় !
আসলেই কি এ বিষয়টি তোষামোদের ? একটু এলিয়ে দিয়ে আপন মানুষের কাছ থেকে কিছু নেওয়া তোষামোদের বলে বিবেচিত হলে কিভাবে বললে সেটা আপনার কাছে গ্রহনযোগ্য হবে বলে মনে করেন ?
যদি কোন স্ত্রী বলে ওঠে “এই তুমি অবশ্যই কালকে অফিস থেকে আসার সময় এই এই জিনিস নিয়ে আসবা” তবেতো ভেবেই নেবেন আমি স্বামী আমাকে স্ত্রী ওয়ার্ডার করলো !
কিম্বা সোজাসোজি স্ত্রী যদি বলে “এই কালকে এগুলো নিয়ে এসোতো” । তবে ভাববেন কেমন বউ আমার একটু আদর করেও বলতে পারেনা ?
এই সব ক্ষেত্রে খুব সিদ্ধান্তহীনতার সৃষ্টি হয় নিজের নিজেকে নিয়ে । এই ভুলগুলো বা না বুঝতে পারাগুলোই একসময় অশান্তির কারণ হয় । কারণ কোনভাবেই একজন মানুষ কারও কাছে পরিপূর্ণ ভালো হতে পারবেনা বা পারা উচিৎও নয় ।
অফিসে কেউ কেউ সারাদিন বসকে তেল মেরেই যায় এবং এই তেলের হার এত বেশী যে সবাই ঐ কেউ কেউকে তৈলাক্ত বলেই ডাকতে শুরু করে এক সময় । এই তেলবাজ মানুষগুলোও অন্যকে তোষামোদকারী বলে আখ্যায়িত করে নির্দ্বিধায় !
সহজাত বৈশিষ্ট্যের বাইরে থেকে বলতে গেলে তোষামোদ শব্দটি খুবই বেশী টানা হেচরার একটি শব্দ ।
একবার শেয়ালের বাচ্চার ইচ্ছে হয়েছিলো মহিষের মাংস খাবে । শেয়াল মনে মনে ভাবলো এত বড় মহিষতো মেরে খায়ানো আমার পক্ষে সম্ভভ নয় । সে তখন তোষামোদ শুরু করলো দুটি মহিষকে আলাদা আলাদাভাবে । এক মহিষকে গিয়ে বলল “মামা নদীর ঐ পাড়ে যে মহিষ রয়েছে ঐ মহিষটি আপনার চেয়ে বেশী শক্তিশালী” তখন সে ভীষন রাগ করলো এবং বলল “তুই কি বলিস ও তো আমার এ লাথিই সহ্য করতে পারবেনা”
একই কথা সে নদীরেআরেক পাড়ের মহিষটিকে গিয়েও বলল । তখন সে ও খুব রাগ । এদিকে দুই মহিষের এই রাগের কারণ একটি মাত্রই তা হল শেয়ালের তোষামোদ প্রিয়তা ।
রাগের ফলাফল একদিন মহিষদয় প্রচন্ড আক্রোশে একে অপরের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হল আর শেয়াল দূর থেকে বলতে থাকলো মামারই জয়, মামারই জয় । দুই মহিষই ভাবে আমিইতো মামা, আমার জয়ই তবে অনিবার্য ! এভাবে যুদ্ধ যুদ্ধ করতে করতে এক সময় দুটো মহিষই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে । তারপর তারা হয় সামান্য শেয়ালের বাচ্চার খাবার !
রাজনীতির ক্ষেত্রেও তোষামোদ প্রিয়তা লক্ষ করা যায় । কিছু কিছু নেতাকর্মী তৈরীই হয়ে যায় নিনিয়র নেতাদের শুধুমাত্র তোষামোদ করে উপরে ওঠার জন্য । এতে করে সবচেয়ে বড় সমস্যা হয় রাজনীতিতে দুর্নীতিবাজ ও অক্ষম নেতৃত্ব চলে আসা ।সবচেয়ে হতাশাকর ছাত্র রাজনীতির মত জায়গায়ও তোষামোদের ব্যপারটি ঢুকে যাওয়া ! যোগ্য নেতৃত্ব বাছাইয়ে তোষামোদই বড় একটি অন্তরায় বলা যায় ।শুধু তাই নয় তোষামোদের কারণে অনেকেই নিজের কাজগুলোর সঠিকতা বাছাই করতেও পারছেনা এবং অন্যায় করতে থাকলেও তা তোষামোদকারীর জন্য আরও দীর্ঘ হচ্ছে ।
এই অন্তরায়ের প্রধান কারণই হল “তোষামোদ” শব্দটির ব্যবহারের ক্ষেত্রে গিয়ে একপক্ষ কোন কিছুর ভালো তোষামোদ হিসেবে নিচ্ছে অন্য পক্ষ ভাবছে আমি যা করছি তা হল ভালো কাজের সুনাম ।
এতে কিন্তু আমরাই দ্বিধাগ্রস্থ্য হয়ে পড়ছি । এক সময় কোন ভালো কাজের ব্যপারে কেউ কেউ কথা বলতে গেলে ভাববে তবে কি এটা তোষামোদের মধ্যে পড়ে যাচ্ছে অথবা যে ভাবছে তোষামোদ সে নিজেও আর ভালো কাজ নিয়ে কথা বলতে দ্বিধাগ্রস্থ্য হয়ে পড়তে পারে !
এই বিষয়গুলো খুব ছোট । ছোট্ট একটি পৃথিবীতে কয়েকটি শব্দ যেন মানুষের দৃষ্টিগুলোকে একদিকে না নিয়ে যায় এবং যারা সত্যিকারের তোষামোদ করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চায় যাদের সম্পর্কে সে তোষামোদ করছে তাদের উচিৎ হবে ভুলগুলো ধরিয়ে দিয়ে স্থিতিশীল একটি সমাজ ও রাজনৈতিক মঞ্চ প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখা ।
বাড়িয়ে বলা কোন সৌন্দর্য নয় বরং ভালোকে মৃদু স্বরে ভালো বলা এবং তা ছড়িয়ে দেওয়া ও খারাপকে উচ্চ স্বরে খারাপ বলে সমালোচনা করাই প্রত্যেকটি মানুষের কর্তব্য !যদি এটা প্রতিষ্ঠা করা যায় তবে সঠিক নেতৃত্ব যেমনি সামনে আসবে তেমনি মানুষের মধ্যে সামাজিক আস্থাও আরও বাড়বে ।
Discussion about this post