একে.এম নাজিম, হাটহাজারী চট্টগ্রাম প্রতিনিধিঃ দীর্ঘ দিন পর চট্টগ্রাম হাটহাজারী-নাজিরহাট ও ফটিকছড়িবাসীর লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে আগামী ২৫ শে জুন। নিয়মিত ভাবে প্রতিদিন তিন জোড়া চট্টগ্রাম নাজিরহাট রেললাইনে ডেমু ট্রেন চলবে। এ জন্য গত ২০১২-২০১৩ অর্থ বছরে উক্ত রেললাইন সংস্কারের জন্য ১ শত ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। ইতোমধ্যে সংস্কার কাজ শেষ শুধু মাত্র ৪টি ষ্টেশনের আধুনিকায়নেরকাজ শেষ হবার পথে । রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ কয়েক দফা উক্ত রেল লাইন উন্নয়ন কাজসহ স্টেশনগুলো পরিদর্শন করেছে।
তথ্যসূত্রে জানা গেছে, অবিভক্ত আসাম রেলওয়ে ১৯২৯-১৯৩১ সালে পূর্বা লীয় রেল চট্টগ্রাম-নাজিরহাট পর্যন্ত দীর্ঘ ৩৬ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করেছিল। তখনকার সময়ে উত্তর চট্টগ্রামের লোকজন শহরে যাতায়াতের জন্য একমাত্র মাধ্যম ছিল হাটহাজারী ও নাজিরহাট পর্যন্ত প্রায় ১৫টি’র অধিক রেলওয়ে স্টেশন। ঐ সময় ফটিকছড়ির বিভিন্ন এলাকা থেকে যাত্রীরা নির্দিষ্ট সময়ে গরু গাড়ী (পরে বাস, জীপ, টেক্সীতে) করে নাজিরহাট এসে ট্রেনযোগে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াত করত । টিকেট বিক্রি ও বুকিং বাবদ রেলওয়ের বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আদায় হতো। ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম – নাজিরহাট রুটে প্রতিদিন ৮টি ট্রেন আসা-যাওয়া করতো। কিন্তু সুষ্ঠু পরিচালনার অভাব, অব্যবস্থা, অনিয়ম, অবহেলা, দুর্নীতি ও ক্রমাগত লোকসানের কারণ দেখিয়ে কর্তৃপক্ষ পর্যায়ক্রমে ৭টি ট্রেন বন্ধ করে দিয়ে একটি মাত্র ট্রেন চালু রাখে। লোকসানের কারণ দেখিয়ে আবারো ১৯৮৯ সালের আগস্ট মাসে এ লাইনে রেল চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। ফলে যাত্রীদের দুর্ভোগ চরমে উঠে। জনদাবীর মুখে তা ঐ বছর পুনরায় চালু করা হয়। যাত্রীরা যাত্রী ‘কল্যাণ সমিতি গঠন’ করে প্রমাণ করে লোকসানের বিষয়টি সত্য নয়।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, উত্তর চট্টগ্রামের হাটহাজারী,ফটিকছড়ি, রাউজান এলাকার চট্টগ্রাম শহরে কর্মরত হাজারো লোক কর্মস্থলে আসা-যাওয়ার জন্য প্রতিদিন সকালে ট্রেন,বাস,সিএনজি,অটো-রিক্সায় যাতায়াত করে। ওই তিন উপজেলার লোকজন চট্টগ্রাম শহরে সরকারী-বেসরকারী অফিস, স্কুল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, আদালত, গামেন্টসসহ বিভিন্ন সেক্টরের চাকুরী করলেও অনেকেই বাসা ভাড়া নিয়ে জীবন যাপন করা কঠিন হয়ে দাড়াঁয়। যার কারনে তারা নিজ গ্রামের বাড়ি থেকে বিভিন্ন গাড়ি ও রেলযোগে কর্মস্থলে পৌঁছিতে হয়।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে , বর্তমান সরকার এ রেলপথ উন্নয়নে ১১০ কোটি টাকা বরাদ্ধ দেয়। ২০১২-১৩ অর্থ বছরে এ লাইন উন্নয়ন কাজ শুরু করে ঠিকাধারী সংস্থা ম্যাক্স গ্রুপ । ঠিকাধারী সংস্থাটি ঠানা ৩ বছর কাজ করে পুরানো ৬০ গ্রেড ওজনের লাইন তুলে নিয়ে ৭৫ গ্রেড ওজনের লাইন প্রতিস্থাপন করা হয়। ট্টগ্রাম-নাজিরহাট লাইনে ৪ টি স্টেশন আধুনিকীকায়নের কাজও পুরাদমে চলছে । এ গুলো হচ্ছে- ফতেয়াবাদ, হাটহাজারী, সরকারহাট এবং নাজিরহাট স্টেশন।
এদিকে গত মে মাসে চট্টগ্রাম-নাজিরহাট রেলপথ ও নাজিরহাট স্টেশন পরিদর্শন করেন, বাংলাদেশ রেলওয়ে’র বিভাগীয় ব্যবস্থাপক মুফিজ উদ্দিন,বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা ফিরোজ ইফতেকার, বিভাগীয় বানিজ্যিক কর্মকর্তা মিজানুর রহমান, প্রকৌশল বিভাগের উর্ধত্তন কর্মকর্তা সহ সেতু বিভাগের কর্মকর্তারা । জরুরী ভিত্তিতে ডেমু ট্রেন সার্ভিস চালুকরা, নাজিরহাট পুরাতন ঘাট স্টেশন পর্যন্ত রেল লাইন সম্পন্ন করার বিষয়ে দাবী জানান স্থানীরা। এসময় বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক মুফিজ উদ্দিন বলেন , ডেমু ট্রেন সার্ভিস কখন চালু হবে তা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। বর্তমানে আগামী ২৫ শে জুন ডেমু ট্রেন চালুকরা হবে নিয়মিত ভাবে। এছাড়া গত ১৮ মে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিদর্শক আক্তারুজ্জামানের নেতৃত্বে সরকারী আরো একটি প্রতিনিধি দল চট্টগ্রাম-নাজিরহাট রেল লাইন পরিদর্শন করেন। ঐ দিন স্থানীয়দের নিকট থেকে উপস্থাপিত অভিযোগ গুলো সমধানের জন্য রেল মন্ত্রনালয়ে ইতিবাচক রিপোর্ট প্রদানের আশ্বাস দেন এ সরকারী কর্মকর্তা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নাজিরহাট থেকে প্রতিদিন চট্টগ্রাম মুখী সকাল সাড়ে ৬টার দিকে একটি ট্রেন রয়েছে। চলাচলরত ট্রেনের বগিগুলোতে আলো, পাখার কোন ব্যবস্থা নাই। যাত্রীদেরকে টয়লেটে গিয়ে পানির অভাবে ফিরে আসতে হয়। ৪টি বগি সম্বলিত ট্রেনটিতে যাত্রীরা কোনো রকমে গাদাগাদি করে শহরমুখী যাতায়াত করে থাকেন। উক্ত লাইনে চট্টগ্রাম রেল স্টেশন থেকে ঝাউতলা, ষোলশহর সেনানিবাস, ফতেয়াবাদ, চৌধুরীহাট, ফতেপুর, হাটহাজারী, চারিয়া সরকারহাট, কাটিরহাট, নাজিরহাট এবং নাজিরহাট ঘাট স্টেশন পর্যন্ত ট্রেন যাত্রা বিরতি করে। তবে আর কোনো ট্রেন না থাকায় অন্যন্য পেশার লোকজনকে পড়তে হয় দুর্ভোগে।যাত্রীরা বাধ্য হয়ে বাস ও সিএনজি করে দ্বিগুন ভাড়া দিয়ে শহরে পৌঁছিতে হয়। সাধারণ যাত্রীদের দাবী সরকার চট্টগ্রাম, হাটহাজারী ও নাজিরহাট পর্যন্ত ডেমু ট্রেন সার্ভিস চালু করা হলে এই এলাকার লোকজনের যেমন সুবিধা হবে তেমনি চট্টগ্রাম-হাটহাজারী ও নাজিরহাট রেলওয়ে থেকে বিশাল একটি রাজস্ব আয় করতে পারবে। এছাড়া রেলওয়ে ফিরে পাবে তার হারানো ঐতিহ্য।
Discussion about this post