সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যান হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম বলেছেন, বাৎসরিক আয়ের মাপকাঠি দেখেই একজন অস্বচ্ছল ও দুস্থ ব্যক্তিকে সরকারি আইনি সহায়তা সেবা দেওয়া হয়ে থাকে। আমাদের উপলদ্ধি হচ্ছে এখন দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের জনগণের গড় মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই হিসাবে যাদের উপর আয়কর প্রযোজ্য হবে না তাদেরকে আইনি সহায়তা সেবা দেওয়ার জন্য আইন সংশোধন করতে বোর্ডের মাধ্যমে সরকারের কাছে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এটির বাস্তবায়ন হলে সরকারি আইনি সেবার পরিধি আরো বিস্তৃত হবে বলে আশা করছি।
‘সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির প্যানেল আইনজীবীদের সঙ্গে মতবিনিময় ও প্রকাশনার মোড়ক উম্মোচন’ অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে বিচারপতি ইনায়েতুর রহিম এসব কথা বলেন। সুপ্রিম কোর্ট মিলনায়তনে শনিবার এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা।
বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম বলেন, লিগ্যাল এইডের কার্যক্রম পরিচালিত হয় নিদ্দিষ্ট আইন, বিধি ও প্রবিধানমালার আলোকে। এই আইনের আওতায় থেকে অস্বচ্ছল ও দুস্থদের আইনি সহায়তা সেবা দেয়া হয়ে থাকে। এই সেবা দিতে গিয়ে মনে হয়েছে এই আইন, বিধি ও প্রবিধানমালার মধ্যে কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। কারণ আইনে বলা আছে লিগ্যাল এইড কাকে দেওয়া যাবে? সেই আইন অনুযায়ী জেলা পর্যায়ে যার বাৎসরিক আয় ১ লাখ টাকা এবং সুপ্রিম কোর্টের ক্ষেত্রে দেড় লাখ টাকার উর্ধ্বে নয় এমন ব্যক্তি লিগ্যাল এইডের সেবা পাবেন। অবশ্য সুপ্রিম কোর্টের ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা, বিধবা বা আশ্রয়ন প্রকল্পে যারা থাকেন তারাও এই সেবা পাবেন। আমরা আইন সংশোধনের প্রস্তাব করে বলেছি আড়াই লাখ টাকার নিচে যার আয় তাকে আয়কর দিতে হয় না। এমন লোককে আইনে অন্তর্ভুক্ত করে আইনি সহায়তা সেবা দেওয়া গেলে এই কার্যক্রমের পরিধি আরো বিস্তৃত হবে।
তিনি বলেন, বিচারের দীর্ঘসূত্রিতার কারণে দশ বছরের অধিক সময় ধরে অনেক মামলা নিষ্পত্তি হচ্ছে না। দেশের আদালতগুলোতে পড়ে থাকা এ ধরনের মামলার একটি তালিকা প্রস্তুত করে ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করে সুপ্রিম কোর্টে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নিম্ন আদালতের বিচারকদের প্রতি সার্কুলার জারি করতে প্রধান বিচারপতিকে অনুরোধ জানান বিচারপতি ইনায়েতুর রহিম। তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতি একজন গতিশীল ও সৃজনশীল ব্যক্তি। তিনি এক্ষেত্রে যথাযথ পদক্ষেপ নিলেই মানুষের বিচার পাওয়ার অধিকারের ক্ষেত্রে তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বিচারপতি ইনায়েতুর রহিম বলেন, সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির নানা সীমাবদ্ধতা রয়েছে। যেমন এখানে ফৌজদারি বিবিধ মোকদ্দমার ক্ষেত্রে লিগ্যাল এইড দেওয়ার সুযোগ নেই। আইনের বিধি বিধানের কারণে এই বিষয়গুলো কিছুটা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এসব বিষয় বোর্ডের মাধ্যমে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। এইসব বিধি-বিধান সংশোধন করে কমিটির কার্যক্রমের ক্ষমতা আরো বাড়ানো হলে লিগ্যাল এইডকে আরো এগিয়ে নেয়া সম্ভব।
তিনি বলেন, বিচারের দীর্ঘসূত্রিতার কারণে অনেকেই ১০ থেকে ২০ বছর ধরে কারাগারে বন্দী রয়েছেন। গণমাধ্যমে এই নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। ওইসব প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তাদেরকে আইনি সহায়তা সেবা দেওয়া হয়েছে এবং হচ্ছে। এই আইনি সেবা দিতে গিয়ে একটি মামলার নথি পর্যালোচনায় দেখা গেলো ১৮ বছর ধরে এক ব্যক্তি কারাগারে রয়েছেন। অথচ তার মামলার বিচার শেষ হয়নি। ২০০৫ সালে সর্বশেষ ২ নম্বর সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ হয়েছে। গত ১১ বছরেও আর কোন সাক্ষীর সাক্ষ্য হয়নি। আদালত পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু ওই হতভাগ্য ব্যক্তির বিচার শেষ হয়নি। এরপরেই আমরা দেশের সকল কারাগারে বিচারের দীর্ঘসূত্রিতায় বন্দিদের তালিকা চেয়ে চিঠি দিলাম। কারাকর্তৃপক্ষ আমাদের কাছে ৪৬২ জনের একটি তালিকা পাঠিয়েছে। সেই তালিকা ধরে আমরা আইনি সেবা দিয়ে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, লিগ্যাল এইডের প্যানেল আইনজীবীদের পারিশ্রমিক খুবই কম। কিন্তু এ নিয়ে আইনজীবীদের কোন অভিযোগ নেই। রাষ্ট্র অনেক জায়গায় অনেক বেশি অর্থ খরচ করে, সেক্ষেত্রে এখানে আইনজীবী সম্মানি বাড়িয়ে দেন তাহলে সেটি আন্তরিকতার সঙ্গে মামলা পরিচালনায় ভূমিকা রাখবে। তিনি বলেন, আমরা বিচারক, আইনজীবী ও সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের সকলকে নিয়েই লিগ্যাল এইডের কাজ করে যাচ্ছি এবং তা অব্যাহত থাকবে।
Discussion about this post