দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) গণশুনানি অনুষ্ঠানে দলিল লেখক ও কয়েকজন আইনজীবীর মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। এসময় অনুষ্ঠানস্থলে চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সদস্য দুই পক্ষকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে দর্শকদের একাংশও বিশৃঙ্খলায় জড়িয়ে পড়েন।
গতকাল বুধবার চট্টগ্রাম নগরের এম এ আজিজ স্টেডিয়ামসংলগ্ন জিমনেসিয়ামে এ ঘটনা ঘটে।
দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-১ এই গণশুনানির আয়োজন করে। এতে সহযোগিতা করে মহানগর দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি। গণশুনানিতে প্রধান অতিথি ছিলেন দুদকের কমিশনার নাসিরউদ্দিন আহমেদ। গণশুনানি পরিচালনা করেন স্থানীয় সরকার বিভাগের চট্টগ্রামের উপপরিচালক খোরশেদ আলম।
‘বিদ্যুৎ বিভাগ ও সদর সাবরেজিস্ট্রি অফিসের সেবা প্রদান-সংক্রান্ত’ গণশুনানির শেষ দিকে বেলা দেড়টায় এম এ নেওয়াজ নামের একজন দলিল লেখক মঞ্চে উঠে বলেন, ‘মুসাবিদা করার সময় দলিল লেখকদের সই করার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু আইনজীবীরা সেটা আমাদের করতে না দিয়ে নিজেরাই করে ফেলেন।’ এই অভিযোগ করে নামার সঙ্গে সঙ্গে সেখানে উপস্থিত কয়েকজন আইনজীবী তাঁর দিকে তেড়ে যান। এই অভিযোগের ব্যাখ্যা দাবি করেন তাঁরা। এ সময় সাবরেজিস্ট্রি কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দলিল লেখক নেওয়াজের পক্ষ নেন। একপর্যায়ে দুপক্ষের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিত নিয়ন্ত্রণে আনে।
এ সময় দুদক কমিশনার নাসিরউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এখানে যে কেউ অভিযোগ কিংবা নিজস্ব মতামত দিতে পারবেন। অভিযোগ কিংবা মতামত দেওয়ার অর্থ কেউ কারও প্রতিপক্ষ নয়।’
এর আগে দু-একজন আইনজীবী রেজিস্ট্রি দলিল করতে হয়রানির অভিযোগ তোলেন। পাশাপাশি দলিল ঠিক সময়ে পাওয়া যায় না বলেও অভিযোগ করেন।
এর জবাবে সাবরেজিস্ট্রার জামিলুর রহমান বলেন, ‘২০১৭ সাল চললেও এখন ২০১২ সালের জুন পর্যন্ত সময়ের দলিল দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। লোকবলের অভাবে সারা দেশে একই ধরনের চিত্র দেখা যাবে।’
শুনানির সময় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করেন কয়েকজন গ্রাহক। খালেকুজ্জামান নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিভাগে গিয়ে আমরা ভালো ব্যবহার পাই না।’
আবদুল মান্নান নামের একজন গ্রাহক বলেন, ‘আমি কয়েক মাস আগে দুটি বৈদ্যুতিক মিটার ফেরত দিয়েছি। কিন্তু এখনো আমাকে ওই দুটি মিটারের বিপরীতে বিল দেওয়া হচ্ছে।’
পিডিবির প্রধান প্রকৌশলী প্রবীর কুমার সেনসহ প্রকৌশলীরা গ্রাহকদের এসব ভোগান্তি ও হয়রানির অভিযোগের জবাব দেন। তাঁরা অভিযোগগুলো সমাধানের আশ্বাস দেন।
শেষে দুদক কমিশনার নাসিরউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ডিসেম্বরের মধ্যে দুর্নীতি সহনশীল পর্যায়ে চলে আসবে। আজ যে অভিযোগগুলো পাওয়া গেল, সেগুলোর সমাধান কত দূর হয়েছে, তা দেখতে আমি আবার আসব। এরপর কেউ যদি পয়সা চায় দুদকে অভিযোগ করবেন। আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।’
দুর্নীতির বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে উল্লেখ করে নাসিরউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা দুর্নীতি কমানোর জন্য আসিনি। দুর্নীতি প্রতিরোধ করতে এসেছি।’ তিনি বলেন, জনগণকে কষ্ট দিয়ে কেউ পার পাবে না।
Discussion about this post