ড. বদরুল হাসান কচি
সম্প্রতি ঘুষ ও দুর্নীতি সহ্য করা হবে না উল্লেখ করে সচিবদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৩টি নির্দেশনা দিয়েছেন। ঐ সচিব কমিটির মিটিংয়ে ৭১ জন সচিব উপস্থিত ছিলেন। সভার শুরুতে সচিবদের উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘পে-স্কেলে বাংলাদেশের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন যেহারে বেড়েছে, তা বিশ্বে বিরল। তাই জনগণ যেন সেবা পায় সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে। বেতন যেহেতু বেড়েছে তাই ঘুষ-দুর্নীতি সহ্য করা হবে না।’
তারই উদ্যোগ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় সরকার দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)’কে আরও শক্তিশালী করার নানা উদ্যোগ নিয়েছেন। তেমনি একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ হল- দুর্নীতির অভিযোগ জানাতে হটলাইন চালু করা। এটি চালু হবার পর জনগণের মধ্যে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। হটলাইন নম্বর ১০৬ চালু হওয়ার পর থেকেই প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ এটিতে ফোন করে নানা অভিযোগ করছেন। সংবাদ মাধ্যম সূত্রে জানতে পেরেছি, প্রথম এক সপ্তাহেই অভিযোগ জানাতে ফোন করেছেন প্রায় ৭৫ হাজার মানুষ। এমন উদ্যোগ নেয়া প্রসঙ্গে গণমাধ্যমে প্রতিক্রিয়ায় দুর্নীতি দমন কমিশন আশা করছে তাদের চালু করা হটলাইন লোকজনকে ঘুষ দেয়া থেকে বিরত রাখতে সাহায্য করবে।
হটলাইনটি উদ্বোধন করেছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি সভায় অপ্রিয় একটি সত্যি একটি কথা বলে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘দেশের প্রায় সব মানুষ পরোক্ষভাবে দূর্নীতির সাথে জড়িত’। একটি পরিসংখ্যান টানলে মাননীয় মন্ত্রীর বক্তব্যটি আরও স্পষ্ট হয়ে উঠে। দুর্নীতি বিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সী ইন্টারন্যাশনালের সূচকে গত বছর সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্থ দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৩ নম্বরে। এখানে উল্লেখ করা দরকার, যদিও ২০০৫ সালে একই সংস্থার করা প্রতিবেদনে বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে স্থান লাভ করেছিল বাংলাদেশ। বর্তমানে কিছুটা উন্নতির দিকে ধাবিত। কিন্তু তারমানে এই নয় যে এটা স্বস্তির কথা; নিশ্চয়ই এটা অসস্তির বিষয়। বিশ্বপরিমণ্ডলেও এ পরিসংখ্যান আমাদের মর্যাদা ক্ষুন্ন করে।
যাইহোক, এমন পরিস্থিতি উত্তরণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতা প্রশংসনীয়। আমরা দেখেছি, পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির অভিযোগ আসায় বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন বন্ধ করে দিয়েছিল। এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ উঠা সকলকেই দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়েছিলেন। অবশ্য সর্বশেষ, পদ্মা সেতুতে কোন দুর্নীতি হয়নি বলে বিশ্বব্যাংক তাদের নিজেদের করা তদন্ত প্রতিবেদনেই স্বীকার করেছে। তাছাড়া ‘দুদক হটলাইন-১০৬’ চালু করার কঠোর অবস্থান দেখিয়েছেন তিনি। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন প্রতিবেদনের ভাষ্যমতে যেখানে রাষ্ট্রের বৃহৎ একটি অংশ জুড়ে দুর্নীতি বিদ্যমান সেখানে হটলাইন চালু করার উদ্যোগ সাহসিকতাও বটে। এই হটলাইনের কারণে দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরা অনেকটাই টেনে ধরা সম্ভব হবে বলে বিশ্বাস করি।
গণমাধ্যম থেকে পাওয়া তথ্যমতে দুদকের অভিযোগ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক সেলিনা আক্তার মনি’র ভাষ্য হচ্ছে, টেলিফোন বা যেকোনো মোবাইল ফোন থেকে দুদক হটলাইনে কল করতে পারবেন যে কেউ। এই কল হবে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। এজন্য মোবাইল থেকে কোনো টাকা কেটে রাখা হবে না। একাধিক ব্যক্তি একই সঙ্গে অভিযোগ করতে পারবেন। অভিযোগকারীর নাম ও পরিচয় গোপন রাখা হবে। এমনকি অভিযোগকারী চাইলে তার বক্তব্য রেকর্ডও করা যাবে এবং অফিস চলাকালীন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত যে কেউ কল করতে পারবেন। এতে দুর্নীতির ঘটনার সঙ্গে সঙ্গেই অথবা ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে এমন অভিযোগ পেলে প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেবে দুদক।
ইদানিং গণমাধ্যমে প্রায় সংবাদ প্রকাশিত হতে দেখা যায়, কোন ভুক্তভোগীর অভিযোগের ভিত্তিতে প্রতিরোধের ব্যবস্থা হিসেবে নাটকীয়ভাবে ঘুষ নেয়া অবস্থায় হাতেনাতে অনেক সরকারী কর্মকর্তা দুদকের হাতে আটক হয়ে থানা হাজতে গিয়েছেন। দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, হটলাইনের এই উদ্যোগটি দীর্ঘস্থায়ী ও ব্যাপকতা লাভ করলে দেশে দুর্নীতির সংস্কৃতি সংকুচিত হয়ে আসবে।
লেখক: অ্যাডভোকেট বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট
Discussion about this post