ভূমি ও দেওয়ানী মামলা একে অপরের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। যখন কোন ব্যক্তির সম্পত্তির বা ভূমির বৈধ অধিকারের উপর আঘাত আসে তখন সে তার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য দেওয়ানী মামলা করে। ব্যক্তির বৈধ অধিকার প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব দেওয়ানী আদালতের। আমাদের দেশের ৮০ ভাগ মামলাই হয় জমি-জমা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে। জমির স্বত্ব, দখল, অধিকার নিয়ে প্রশ্ন উঠলে দেওয়ানী মামলার সূত্রপাত ঘটে। সময়মত রেজিস্ট্রেশন, মিউটেশন, খাজনা, ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ না করা, বেনামী লেনদেন এবং সিলিং অতিক্রান্ত জমি নিজের দখলে রাখার কারণেও মামলা-মোকদ্দমার উদ্ভব হয়। আমরা একটু সচেতন হলেই জমি-জমা সংক্রান্ত বিরোধ কমে আসতে পারে।
দেওয়ানী মামলা বলতে আমরা যা বুঝি:
সম্পত্তির উপর স্বত্ব এবং দখলের অধিকার নিয়ে অংশীদার বা অন্য কোন ব্যক্তির মধ্যে বিরোধ দেখা দিলে সেই বিরোধের বিষয়ে যে মামলা হয়, তাকে দেওয়ানী মামলা বলা হয়। এই বিরোধ নিরসনের দায়িত্ব দেওয়ানী আদালতের উপর ন্যস্ত থাকে।
সম্পত্তি বলতে ঐ সকল জিনিসকে বুঝায়, যা কোন ব্যক্তি মালিকানা সূত্রে পেতে পারে। সম্পত্তি স্থাবর, অস্থাবর, দৃশ্যমান, অদৃশ্যমান, যৌথ ও একক হতে পারে। যে কোন প্রকার সম্পত্তি নিয়ে যে মামালা হয় তাকে দেওয়ানী মামলা বলে। কোন পদের অধিকার বা মর্যাদার অধিকারকেও দেওয়ানী বিষয় বলে। পিতা-পুত্রের সম্পর্ক, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক প্রভৃতি বিষয় নিয়ে বিরোধ দেখা দিলে তা নিয়ে দেওয়ানী আদালতে মামলা হতে পারে। পূজা বা প্রার্থনার অধিকার, মসজিদে নামায পড়ার অধিকার, রাস্তা দিয়ে ধর্মীয় মিছিল পরিচালনা করার অধিকার নিয়ে দেওয়ানী মামলা করা যেতে পারে। সাধারণভাবে সকল প্রকার স্বত্ব, অধিকার, দাবী প্রভৃতি মামলার বিচার দেওয়ানী আদালত করতে পারে।
ফৌজদারী আদালতে যেসব বিষয় নিয়ে মামলা হয় সেইসব বিষয়ে দেওয়ানী আদালতে মামলা চলে না। ফৌজদারী আদালতের সম্পত্তির স্বত্ব সম্পর্কে বিচার করার কোন অধিকার নেই, সেই অধিকার কেবলমাত্র দেওয়ানী আদালতের। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ধানকাটা নিয়ে আমাদের দেশে প্রচুর মামলা হয়। বাদী অভিযোগ করে যে, বিরোধীয় জমিতে তিনি ধান লাগিয়েছিলেন এবং আসামী ঐ ধান চুরি করে কেটে নিয়ে গেছে। অপরদিকে আসামী এসে বলে যে, বিরোধীয় জমিটি তার, তিনি ধান লাগিয়েছিলেন এবং কেটে নিয়ে গেছেন। এই ফৌজদারী মামলায় ম্যাজিস্ট্রেট শুধু কে লাগিয়েছিলেন তা দেখবেন, জমির স্বত্বের প্রশ্নের দিকে তিনি তাকাবেন না। স্বত্বের মীমাংসা করতে হলে দেওয়ানী আদালতে যেতে হবে। রাজস্ব আদালত ফৌজদারী আদালত বা বিশেষ আদালতে যে সমস্ত মামলার বিচার হবে বলে আইনে নির্দেশ রয়েছে, সেই সমস্ত মামলা দেওয়ানী আদালতে বিচার করা যাবে না।
মামলার কারণঃ
মামলার কারণ বলতে ঐ সকল অভিযোগ এবং দাবিকে বুঝায়, যে সকল অভিযোগ এবং দাবীর উপর ভিত্তি করে মামলা দায়ের করা হয় এবং যা বাদীর আদালতে শরণাপন্ন হওয়ার দাবীকে প্রতিষ্ঠিত করে। মামলায় ডিক্রী লাভ করার জন্য বাদীকে এরূপ প্রমাণ করতে হয় যে, উক্ত মামলা দায়ের করার ব্যাপারে তার বৈধ অধিকার রয়েছে। বাদী তার অধিকার প্রমাণ করে ডিক্রী লাভের যে সকল অবস্থা ও তথ্য আদালতের সামনে উপস্থাপন করে, তাকেই দেওয়ানী আইনে কজ অব একশন বা মামলার কারণ বলা হয়ে থাকে।
মামলার পক্ষঃ
দেওয়ানী আদালতে যে পক্ষ মামলা দায়ের করে, তাকে মামলার বাদী বলা হয় এবং যার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে তাকে বিবাদী বলা হয়। দেওয়ানী মামলায় এক ব্যক্তি বাদী হতে পারে বা একাধিক ব্যক্তি যৌথভাবে বাদীরূপে মামলা পরিচালনা করতে পারে। একইভাবে এক বা একাধিক ব্যক্তি কোন মামলার বিবাদী হতে পারে।
মামলা দায়ের ও আরজি গ্রহণঃ
দেওয়ানি মামলা শুরু হয় আরজি গ্রহণের মাধ্যমে। বাদী তার মোকদ্দমার বর্ণনা ও প্রতিকার আরজিতে উল্লেখপূর্বক প্রয়োজনীয় কোর্ট ফিসহ সংশ্লিষ্ট আদালতে মোকদ্দমাটি দায়ের করবেন। দেওয়ানি আদালতের সেরেস্তাদার বা তাঁর অনুপস্থিতিতে সেরেস্তাদার হিসেবে কর্মরত কর্মকর্তা মামলার আরজি গ্রহণ করে আরজির গায়ে বা এর সঙ্গে যুক্ত অর্ডারশিটে বা স্লিপে মামলার ফাইলিং নম্বর লিখবেন। যেমন দেওয়ানি মামলা নম্বর ১৩৫/২০১১ ইং (এর অর্থ হলো ওই আদালতের ২০১১ সালে ১৩৫ নম্বর দেওয়ানি মামলা)।
এরপর সেরেস্তাদার অর্ডারশিটটি আলাদা করে, সিলমোহর লাগিয়ে যিনি আরজি উপস্থাপন করবেন তাঁর কাছে ফেরত দেবেন। এরপর আরজির সঙ্গে দাখিল হতে পারে, এমন সব কাগজপত্রে মামলার নম্বর উল্লেখ করতে হবে। সেরেস্তাদার আর-১২ নামক ফাইলিং রেজিস্টারে (যাকে স্যুট রেজিস্টারও বলা হয়) আরজির বিষয়বস্তু ক্রমানুসারে লিপিবদ্ধ করবেন। সাধারণত যেদিন আরজি গ্রহণ করা হয়, সেদিনই তা নিবন্ধন করা হয়।
সেরেস্তাদার আরজি পরীক্ষা করে আরজির প্রথম পৃষ্ঠার বাঁ প্রান্তের উপরিভাগে স্ট্যাম্প পর্যাপ্ত হয়েছে কি না তা লিখবেন। অপর্যাপ্ত স্ট্যাম্প থাকলে তাও উল্লেখ করবেন এবং বাকি স্ট্যাম্প আদায়ের পর দ্বিতীয়বার তা উল্লেখ করে প্রত্যয়ন করবেন। ২১ দিনের মধ্যে বাকি স্ট্যাম্প দিতে হবে। এভাবে একটি দেওয়ানি মামলা করা হয়।
আরজি ফেরত বা প্রত্যাখান
আরজি ফেরত বা প্রত্যাখ্যান হওয়া উচিত মনে করলে সেরেস্তাদার তা বিচারকের কাছে উপস্থাপন করবেন। বিচারক আইন অনুসারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। কোনো কারণে আরজি সঠিকভাবে মূল্যায়িত না হলে তা সংশোধনের জন্য পক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়, যার সময়সীমা ২১ দিন।
সমন জারি
একটি মামলা দায়েরের পরের ধাপ সমন জারি। সমন দু’ভাবে জারি করা হয়। আদালতে জারিকারকের (পদাতিক) মাধ্যমে এবং আদালতের সেরেস্তা কর্তৃক ডাকযোগে। সমনের সঙ্গে মামলার আরজি, বাদীর ফিরিস্তিযুক্ত কাগজের কপি (আরজির বিষয়ের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ কাগজপত্র, যা আরজির দাবিকে সমর্থন করে), ওকালতনামা, তলবনামা (বিবাদীর নামীয় সমন জারির ক্ষেত্রে সরকারকে দেওয়া কোর্ট ফি) দাখিল করতে হয়। মামলার সমন বিবাদী সরাসরি গ্রহণ করলে তা সরাসরি জারি হিসেবে গণ্য হবে। আদালতের জারিকারক যখন বিবাদীর ওপর সমন জারির জন্য যাবেন, তখন সমন নোটিশের অপর পৃষ্ঠায় সংশ্লিষ্ট এলাকার দুজন নিঃস্বার্থ ব্যক্তির স্বাক্ষর বা টিপসই নেবেন। সাধারণত সমন বিবাদীর ওপর ব্যক্তিগতভাবে জারি হতে হয়। তাঁর অনুপস্থিতিতে তাঁর পক্ষে ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিনিধির ওপর সমন জারি হতে হবে। যদি ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো প্রতিনিধি পাওয়া না যায়, তবে পরিবারের প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ-সদস্যের ওপর জারি করতে হয়। এ ক্ষেত্রে ভৃত্য পরিবারের সদস্য হিসেবে গণ্য হবে না (দেওয়ানি কার্যবিধি, আদেশ-৫, নিয়ম-১২ ও ১৫)। বিবাদী বা তাঁর পক্ষে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো প্রতিনিধি বা তাঁর পরিবারের কোনো প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ পাওয়া না গেলে বা সমন গ্রহণ না করলে বিবাদীর বাসগৃহের বহির্দ্বারে বা অন্য কোনো প্রকাশ্য স্থানে লটকে সমন জারি করতে হবে (দেওয়ানি কার্যবিধি, আদেশ-০৫, নিয়ম-১৭)। এ ক্ষেত্রেও জারিকারক সমন নোটিশের অপর পৃষ্ঠায় সংশ্লিষ্ট এলাকার দুজন নিঃস্বার্থ ব্যক্তির স্বাক্ষর বা টিপসই নেবেন। সাময়িক অনুপস্থিতিতে বিবাদীর বাসগৃহের বহির্দ্বারের সামনে সমন লটকিয়ে জারি করা যুক্তিসংগত নয়। যদি ওই বিবাদীকে তাঁর বাসগৃহে পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তবে পুনরায় তাঁর বাড়িতে সমন জারি করতে হয়। জারিকারক সমন জারি ফেরত দিলে নাজির যথাসম্ভব দ্রুত ও কমপক্ষে মামলার ধার্য তারিখের দুই দিন আগে সংশ্লিষ্ট আদালতে ফেরত দেবেন। অপরদিকে ডাকযোগে পাঠানোর পর ডাক রসিদ (অ্যাকনলেজমেন্ট ডিউ) থাকলে এক মাস অতিবাহিত হওয়ার পর এডি (ডাক-সমন) জারি হিসেবে গণ্য হবে। বিবাদী একের অধিক হলে প্রত্যেকের প্রতি সমন জারি হতে হবে। এ ছাড়া সমন সংশ্লিষ্ট জেলার নেজারত বিভাগের মাধ্যমে পাঠাতে হবে।
জবাব দাখিল
সমন জারি অন্তে ফেরত আসলে এই পর্যায়ে বিবাদী পক্ষের জন্য জবাব দাখিলের জন্য তারিখ ধার্য্য হয়ে থাকে। বিবাদী মামলা প্রথম শুনানির তারিখে বা এর আগে বা আদালতের অনুমোদিত সময় দুই মাসের মধ্যে লিখিত জবাব দাখিল করবেন (দেওয়ানি কার্যবিধি, আদেশ-০৮, নিয়ম-০১)। তা না হলে মামলাটি একতরফাভাবে শুনানির জন্য নির্ধারিত হবে। তবে দেওয়ানি কার্যবিধি ৮০ ধারার নোটিশ জারি না হলে সরকার জবাব দাখিলের জন্য তিন মাস সময় পাবে। বিবাদী যদি তাঁর দাবির সমর্থনে কোনো দলিলের ওপর নির্ভর করেন, তবে তা ফিরিস্তিসহ দাখিল করবেন।
প্রতিদ্বন্ধিতাবহির্ভূত শুনানি:
প্রথম শুনানির তারিখে যদি দেখা যায়, মামলার পক্ষদের মধ্যে কোনো বিরোধীয় বিষয় নেই, তবে তা অবিলম্বে নিষ্পত্তি করতে হবে। এ ক্ষেত্রে মামলা মুলতবি করার কোনো সুযোগ নেই।
ইস্যু গঠন
মামলার প্রথম শুনানির তারিখ বা জবাব দাখিলের তারিখের মধ্যে যেটি পড়ে, তা থেকে ১৫ দিনের মধ্যে ইস্যু গঠন করতে হবে (দেওয়ানি কার্যবিধি, আদেশ-১৪, নিয়ম-০১)। যেসব বিরোধীয় বিষয়ের ওপর মামলা নিষ্পত্তি হবে, সেসব বিষয়বস্তু নিয়ে ইস্যু গঠন করা হবে।
৩০ ধারার তদবির
এই পর্যায়ে মোকদ্দমার কোন কাগজপত্র বা দলিলাদী দাখিল করতে চাইলে সেগুলো দাখিলের জন্য তারিখ ধার্য্য হয়। সাধারণত ইস্যু গঠনের পর কোনো তদবির আছে কি না, এর জন্য এ পর্যায়টি রাখা হয়। ইস্যু গঠনের ১০ দিনের মধ্যে বাদী বা বিবাদী আদালতের অনুমতি নিয়ে অন্য পক্ষকে লিখিত প্রশ্ন দাখিল করতে পারবে। তবে একটি পক্ষ একবারই প্রশ্ন দাখিল করতে পারবে (আদেশ-১১, বিধি-০১)। অন্য পক্ষকে এফিডেভিটের মাধ্যমে ১০ দিনের মধ্যে প্রশ্নোত্তর দাখিল করতে হবে (আদেশ-১১, বিধি-০৮)।
চূড়ান্ত শুনানির তারিখ নির্ধারণ
ইস্যু গঠনের ১২০ দিনের মধ্যে মামলার চূড়ান্ত শুনানির তারিখ ধার্য (এডি) করতে হয় (আদেশ-১৪, নিয়ম-০৮, দেওয়ানি কার্যবিধি)
চূড়ান্ত শুনানি
চূড়ান্ত শুনানির (পিএইচ) তারিখ থেকে ১২০ দিনের মধ্যে মামলার শুনানি শেষ করতে হয় (আদেশ-১৮, নিয়ম-১৯, দেওয়ানি কার্যবিধি) চূড়ান্ত শুনানি (পিএইচ) ও পরবর্তী চূড়ান্ত শুনানি (এফপিএইচ) পর্যায়ে বিচারক জবানবন্দি, জেরা, দলিলাদি গ্রহণ করবেন এবং যুক্তিতর্ক শুনবেন।
রায় ঘোষণা
মামলা শুনানি সমাপ্ত হওয়ার পর অনধিক সাত দিনের মধ্যে আদালত রায় ঘোষণা করবেন (আদেশ-২০, বিধি-১১, দেওয়ানি কার্যবিধি)।
ডিক্রি প্রদান
রায় ঘোষণার তারিখ থেকে সাত দিনের মধ্যে ডিক্রি প্রণয়ণ করতে হবে (আদেশ-২০, নিয়ম-০৫, দে.কা.বি.)।
এ ছাড়া মামলার যে কোনো পর্যায়ে দুই পক্ষই আরজি, জবাব সংশোধন, অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা, স্থানীয় পরিদর্শন ও স্থানীয় তদন্তের জন্য আদালতে দরখাস্ত দিতে পারবে। মামলার জবাব দাখিলের পর প্রতিদ্ধন্ধীতাকারী পক্ষরা যে কোনো সময় আপস-নিষ্পত্তির জন্য আদালতের মধ্যস্থতায় বা আদালতের বাইরে বসতে পারেন। দেওয়ানি কার্যবিধির ৮৯(ক) ধারা মোতাবেক আপস-নিষ্পত্তির কথা বলা হয়েছে, যা এডিআর নামে পরিচিত।
আপীলঃ
আদালতের রায়ে কোন পক্ষ সন্তুষ্ট না হলে সেই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চতর আদালতে আপীল করতে পারে।
দেওয়ানী মামলা কোন আদালতে দায়ের করতে হয়?
আইনসংগতভাবে বিচার কাজ সম্পন্ন করার জন্য আদালতের সৃষ্টি। কোন আদালতে কোন মামলার বিচার হবে তা তিন ভাবে ঠিক করা হয়। যথা- আর্থিক এখতিয়ার, আঞ্চলিক এখতিয়ার এবং বিষয়বস্তুভিত্তিক এখতিয়ার।
১) আর্থিক এখতিয়ার
যেই বিষয় বা সম্পত্তি নিয়ে মামলা, সেই বিষয় বা সম্পত্তির মূল্য অনুসারে আদালতের বিচারের অধিকার নির্ধারিত হয়। বাংলাদেশের দেওয়ানী আদালতে সকল জেলায় কয়েকটি স্তর আছে। সর্বনিম্নে সহকারী জজ, তার উপর সিনিয়র সহকারী জজ, এর উপর যুগ্ম জেলা জজ এবং সবচেয়ে উপরে জেলা জজ। এই আদালতগুলো বিচারের ক্ষমতা টাকার অংক দ্বারা নির্দিষ্ট করা আছে।
সূতরাং নিয়ম হলো-বিচার করার আর্থিক ক্ষমতা সম্পন্ন সর্বনিম্ন আদালতে মামলা দায়ের করতে হবে।
২) আঞ্চলিক এখতিয়ার
সম্পত্তি যে এলাকার সীমারেখার মধ্যে অবস্থিত, সম্পত্তি বিষয়ক মামলা সেই আদালতে দায়ের করতে হবে। স্থাবর সম্পত্তি পুনরুদ্ধার, বাটোয়ারা, রেহেন পরিশাধ, স্বত্ব নির্ণয় এবং ক্ষতিপূরণ আদায়ের মামলা সাধারণত ঐ সম্পত্তিটি যেখানে অবস্থিত সেখানকার আদালতে করতে হবে। ক্রোকাবদ্ধ বা আটক অস্থাবর সম্পত্তির মামলা একইভাবে যে এলাকার আঞ্চলিক এখতিয়ারের মধ্যে সম্পত্তিটি ক্রোকাবদ্ধ বা আটক অবস্থায় অবস্থিত সেই আদালতে দায়ের করতে হবে। বিভিন্ন আদালতের আঞ্চলিক এখতিয়ারের মধ্যে অবস্থিত স্থাবর সম্পত্তির মামলা উক্ত স্থাবর সম্পত্তির অংশবিশেষ যে আদালতের এলাকায় অবস্থিত সেই আদালতে দায়ের করা যেতে পারে।
৩) বিষয়বস্তুভিত্তিক এখতিয়ার
অনেক সময় মামলার বিষয়বস্তু অনুযায়ী আদালতের এখতিয়ার নির্ধারিত হয়ে থাকে। যেমন-মামলার বিষয়বস্তুর মূল্য যাই হোক না কেন পরিবার বিষয়ক সব মামলা পারিবারিক আদালতের দায়ের করতে হয়।
লেখকঃ এ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক, সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী, এম.ফিল গবেষক ও আইনজীবী জজ কোর্ট, কুষ্টিয়া। E-mail: seraj.pramanik@gmail.com.
Discussion about this post