দেওয়ানী মামলা কি?
উত্তরঃ ব্যক্তির সাথে ব্যক্তির, প্রতিষ্ঠানের সাথে প্রতিষ্ঠানের, বা ব্যক্তির সাথে প্রতিষ্ঠানের বিরোধ মিমাংসাকারী আইন ও মামলা। যার নিস্পত্তি হয় সাধারণত ক্ষতিপূরণ আদায়ের মাধ্যমে, অধিকার ফিরিয়ে দিয়ে, বা বেকসুর খালাশ করে।
কোন আদালতে দেওয়ানী মামলা দায়ের করতে হবে?
উত্তরঃ প্রতিটি দেওয়ানী মামলা উহার বিচার করার ক্ষমতা সম্পন্ন আদালতে দায়ের করতে হয়। আদালতের এখতিয়ার কে সাধারণত তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়।
১) আর্থিক এখতিয়ারঃ মামলার বিষয়বস্তুর আর্থিক মূল্যমানের উপর ভিত্তি করে আদালত নির্বাচন করে মামলা দায়ের করতে হয়। দেওয়ানী আদালত সমূহের আর্থিক এখতিয়ার নিম্নে দেয়া হলঃ
ক্রমিক নং |
আদালতের নাম |
আর্থিক এখতিয়ার |
০১. |
জেলা জজ আদালত |
মূলত একটি আপীল আদালত তবে আইনে উল্লেখিত ক্ষেত্রে বিশেষ ধরনের মামলা প্রাথমিক পর্যায় থেকেই বিচার শুরু করতে পারেন। |
০২. |
অতিরিক্ত জেলা জজ আদালত |
জেলা জজ কর্তৃক প্রেরিত মামলার বিচার করেন। |
০৩. |
যুগ্ম জেলা জজ আদালত |
চার লক্ষ টাকা থেকে শুরু করে অসীম। |
০৪. |
সিনিয়র সহকারী জজ আদালত |
দুই লক্ষ টাকা থেকে শুরু করে চার লক্ষ টাকা পর্যন্ত। |
০৫. |
সহকারী জজ আদালত |
দুই লক্ষ টাকা পর্যন্ত। |
২) আঞ্চলিক এখতিয়ারঃ প্রত্যেকটি আদালত কোন এলাকার মামলার বিচার করবেন তা নির্ধারণ করে দেয়া আছে।সাধারণত যে অঞ্চলে মামলার বিষয়বস্তু অবস্থিত সে অঞ্চলে মামলা দায়ের করতে হয়।
৩) বিষয় বস্তুর উপর এখতিয়ারঃ যে বিষয় নিয়ে মামলা হবে তা দেওয়ানী, ফৌজদারী, পারিবারিক অথবা বিশেষ আইনের অধীনস্থ কোন বিষয় হতে পারে।দেওয়ানী আদালতে শুধুমাত্র দেওয়ানী মামলা সমূহের বিচার হয়। অন্য কোন বিষয় উপস্থাপিত হলে তা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে এখতিয়ার সম্পন্ন আদালতে প্রেরণ করা হয়ে থাকে।
একটি দেওয়ানী মামলার বিভিন্ন স্তর সমূহ কি কি?
উত্তরঃ
১) আরজি দাখিল (Plaint) : দেওয়ানী মামলা শুরু হয় আরজি (Plaint) দাখিলের মাধ্যমে। মামলায় বাদীর প্রার্থনা সম্বলিত লিখিত আবেদন ই আরজি।
২) সমন (Summon): সমন হল কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে নির্দিষ্ট সময়ে আদালতে হাজির হবার জন্য আদালতের আদেশ। কোন বাদী আরজি দাখিল করলে বিবাদীদের কে আদালতে হাজির হয়ে বাদীর আনীত অভিযোগের জবাব প্রদানের জন্য সমন দেয়া হয়।সমনের সাথে বাদীর আরজির একটি কপি প্রদান করা হয় যাতে বিবাদীগণ তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সর্ম্পকে বিস্তারিত জানতে পারেন।
৩) জবাব (Written Statement): সমন উল্লেখিত তারিখে বিবাদীগণ হাজির হয়ে তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের বিপক্ষে তাদের দাবী, এবং বাদীর আনীত অভিযোগের জবাব সম্বলিত একটি লিখিত বক্তব্য আদালতের সামনে উপস্থাপন করবেন।
৪) বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি: এরপর আদালত মামলাটির আনুষ্ঠানিক বিচার আরম্ভের পূর্বে বিকল্প পদ্ধতিতে উহা নিষ্পত্তির জন্য ব্যবস্থা গ্রহন করবেন (দেওয়ানী কার্যবিধির ৮৯ক, ৮৯খ এবং ৮৯গ ধারা অনুসারে)
৫) বিচার্য বিষয় গঠন: যে সকল বিষয়ের উপর ভিত্তি করে বাদী তার দাবি আদায়ের প্রচেষ্ঠা চালান এবং যে সকল বিষয় বিবাদীর আপত্তি রয়েছে সে গুলো সুনির্দিষ্ট ভাবে লিপিবদ্ধ করা যে গুলো সর্ম্পকে সিদ্ধান্ত গ্রহন ই মামলার নিষ্পত্তির মূল বিষয়।
৬) সাক্ষ্য গ্রহন: বিকল্প পদ্ধতিতে বিরোধ নিষ্পত্তির প্রচেষ্টা ব্যার্থ হলে, সাক্ষ্য গ্রহন শুরু মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক বিচার আরম্ভ হবে।এই প্রকৃয়ায় বাদীর সকল সাক্ষীর জবানবন্দী শেষ হলে বিবাদীর পক্ষ তাদের জেরা করেন। অনুরূপ ভাবে বিবাদী পক্ষের সাক্ষীর জবানবন্দী শেষ হলে বাদী পক্ষ তাদের জেরা করেন।উভয় পক্ষের সাক্ষ্য গ্রহন সমাপ্ত হলে, আদালত উভয় পক্ষের আইন জীবীদের যুক্তিতর্ক শুনানী করেন এবং রায় ঘোষনার তারিখ নির্ধারণ করেন।
৭) রায় প্রদান: সুনির্দিষ্ট তারিখে আদালত সকল সাক্ষীর বক্তব্য এবং দাখিলী কাগজাত এবং অনান্য পারিপার্শ্বিক বিষয়াদী পর্যালোচনা পূর্বক রায় ঘোষনা করেন।
৮) আপীল: কোন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট পক্ষগণ অসন্তুষ্ট হলে উক্ত আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে এখতিয়ার সম্পন্ন আদালতে আপীল করতে পারবেন।
Discussion about this post