বিডি ল নিউজঃ
সাক্ষাৎ না পেয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ের সামনে থেকে ফিরে গেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন প্রমুখ। শনিবার রাত আটটা ৩৩ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের সামনে যান। সেখানে দুই মিনিট অবস্থানের পর কেউ কার্যালয়ের গেট না খোলায় তিনি তার গাড়িতে চড়ে ফিরে যান। প্রধানমন্ত্রীর গাড়িতে ছিলেন সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী ডা. দীপুমনি। তবে প্রধানমন্ত্রী যাওয়ার আগে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া শোকে বিহ্বাল। চিকিৎসকের পরামর্শে খালেদা জিয়াকে ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস। তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের কনিষ্ঠ পুত্র আরাফাত রহমান কোকো মারা যাওয়ার পর শোকার্ত খালেদা জিয়া কারো সঙ্গে কথা বলছেন। না। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপি চেয়ারপারসনকে সমবেদনা জানানোর জন্য কার্যালয়ে আসতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আমি প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারীকে বলেছি বেগম খালেদা জিয়া এখন অসুস্থ। তিনি সুস্থ হলে প্রধানমন্ত্রীকে জানানো হবে। তথন যদি প্রধানমন্ত্রী ইচ্ছা প্রকাশ করেন তাহলে সাক্ষাৎ হবে। শনিবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের সামনে সাংবাদিকদের এতথ্য জানান শিমুল বিশ্বাস। এমন একটি সময়ে এমন ঘোষণা দেয়া হল যখন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।
কোকোর মৃত্যুর সংবাদ জানার পরই প্রধানমন্ত্রী রাত আটটায় খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে যাওয়ার কথা বলেন। সে জন্য এসএসএফও কার্যালয়ে গিয়ে বাড়তি নিরাপত্তা জোরদার করে। শনিবার সন্ধ্যা সোয়া সাতটার দিকে প্রধানমন্ত্রীর ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি আশরাফুল আলম খোকন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।এ উপলক্ষ্যে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার গুলশানের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরাপত্তায় নিয়োজিত এসএসএফ সসদ্যরা।
রাত পোনে আট টার দিকে এসএসএফ সদস্যরা সেখানে অবস্থান নেয়। অবস্থান নিয়েই কার্যালয়ের সামনে থেকে সবাইকে সরিয়ে দেয়।সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ের ভিতর থেকে সাংবাদিকদেরও বের করে দেয়া হয়। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করার জন্য গত ৬ জানুয়ারি থেকে বিএনপির নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোট যখন লাগাতার আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে ঠিক তখনই বাংলাদেশের দুই নেত্রীর মধ্যে সরাসরি এই দেখা-সাক্ষাৎ হচ্ছে।
দুই নেত্রীর এই সাক্ষাতের মধ্য দিয়ে রাজনীতির বরফ গলবে কি না-তা বলা কঠিন হলেও এরকম একটি মুহূর্তে দুই নেত্রীর এই দেখা সাক্ষাতকে পর্যবেক্ষক মহল শুভ দৃষ্টিতেই দেখছেন। খালেদা জিয়ার কনিষ্ঠ পুত্র আরাফাত রহমান কোকো শনিবার সাড়ে ১২টার দিকে মালয়েশিয়ার একটি হাসপাতালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। স্ত্রী সৈয়দ শামিলা রহমান সিঁথি, দুই মেয়ে জাফিয়া রহমান ও জাহিয়া রহমানকে নিয়ে কুয়ালালামপুরে একটি বাড়ি ভাড়া করে থাকছিলেন আরাফাত।
২০০৯ সালের মে মাসে শেখ হাসিনার স্বামী ড. ওয়াজেদ মিয়ার মৃত্যুর পর ধানমণ্ডির সুধা সদনে গিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। সে সময় তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সমবেদনা জানান এবং দুই নেত্রীর মধ্যে কিছুক্ষণ কথাও হয়। এরপর বেশ কয়েকবার একই অনুষ্ঠানে যোগ দিলেও তারা কথা বলেননি।
২০১৩ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর শোক জানাতে বঙ্গভবনে দুই নেত্রী গিয়েছিলেন। অবশ্য সে সময় কথা হয়নি তাদের মধ্যে।এছাড়া বিগত কয়েকবছরে একাধিকবার সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে সেনাকুঞ্জে গেলেও কথা বলেননি তারা। জরুরি অবস্থার সময় গ্রেপ্তার হয়ে এক বছর কারাগারে থাকার পর ২০০৮ সালের ১৭ জুলাই মুক্তি পেয়ে চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ড গিয়েছিলেন আরাফাত।সেখান থেকে তিনি মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমান। অন্যদিকে মুদ্রা পাচার মামলায় বাংলাদেশের আদালতে ২০১১ সালে তার ৬ বছর কারাদণ্ড হয়; তবে বিএনপির দাবি, এই মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
Discussion about this post