কক্সবাজারের উখিয়ার হলদিয়াপালং উত্তর বড়বিল এলাকা ওপেন কারাগার ও পুনর্বাসন কেন্দ্র নির্মাণের প্রাথমিক প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
এ লক্ষে প্রস্তাবিত জমির সীমানা নির্ধারণ করে খুঁটি স্থাপন করে টাঙানো হয়েছে তিনটি সাইনবোর্ড। কক্সবাজারের জেল সুপার বজলুল রশীদ আখন্দ, জেলা কারা পরিদর্শক আবুল মনসুর চৌধুরী, হলদিয়াপালং ইউপি চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ শাহ আলম, আওয়ামী লীগ নেতা রশিদ আহম্মদ, আজিজুর রহমান, গিয়াস উদ্দিন, কক্সবাজার রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি রাসেল চৌধুরী এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগের লোকজন মঙ্গলবার (৭ ফেব্রুয়ারি) প্রাথমিক এ কার্যক্রম শুরু করেছেন।
উন্নত বিশ্বের আদলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় এই প্রথম অত্যাধুনিক মানের সুবিশাল ওপেন কারাগার নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে।
জেল সুপার বজলুল রশীদ আখন্দ জানান, উত্তর বড়বিল গ্রামে পরিত্যক্ত ৩ শত ২৫ দশমিক ৫০ একর সরকারি খাস জমিতে ওপেন কারাগার ও পুনর্বাসন কেন্দ্র নির্মাণে প্রকল্প গ্রহণ করেছেন মন্ত্রণালয়।
এটি হবে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ কারাগার। উক্ত প্রকল্প বাস্তবায়নে স্থান নির্বাচন, সম্ভাব্যতা যাচাই, প্রাক্কলন তৈরি ও ভূমি অধিগ্রহণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। জেল সুপার আরও জানান ওপেন কারাগার ও পুনর্বাসন কেন্দ্র নির্মাণে প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা। সোমবার খুটি স্থাপনের মাধ্যমে এর প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমের এলাকায় নির্মিতব্য এ ওপেন কারাগারের সীমানা নির্ধারণ ও খুঁটি স্থাপনে এলাকাবাসী স্বতঃস্ফুর্তভাবে উন্নয়ন কাজে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেন।
জেল সুপার বলেন, ইতোমধ্যে সরকার ৩২৫ দশমিক ৫০ একর ভূমি বুঝে নেয়ার জন্য কেন্দ্রীয় কারা অধিদফতরকে চিঠি দিয়েছে। খুব শিগগিরই এ প্রকল্পের ভিত্তি প্রস্তর উদ্বোধন করা হবে।
ওপেন কারাগার ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে প্রচলিত জেলখানার মতো আসামিদের নির্দিষ্ট স্থানে ও লকআপে বন্দি রাখা হবে না। আসামিরা মুক্ত বিহঙ্গের মতো ঘুরে বেড়াতে পারবেন। বিভিন্ন ধরনের কুটির ও হস্তশিল্পের কাজ করতে পারবে কয়েদিরা।
সেই সঙ্গে কৃষি জমিতে চাষাবাদ করে পারিশ্রমিক ও আয় করতে পারবেন। এমনকি পরিবার পরিজনের সাথে মোবাইলে কথা বলা, দেখা সাক্ষাৎ করার সুযোগ থাকবে।
স্থানীয় চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ শাহ আলম বলেন, উত্তর বড়বিল এলাকায় ওপেন কারাগার ও পুনর্বাসন কেন্দ্র নির্মাণে বর্তমান সরকার যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন তা ইতিবাচক। ফলে অবহেলিত এলাকার অভূতপূর্ব উন্নয়ন ও স্থানীয় অধিবাসীদের জীবনযাত্রার মান পরিবর্তন হবে।
এদিকে, দেশের এই প্রথম বিশাল কারাগার নির্মাণের উদ্যোগ নেয়ায় এলাকাবাসীর মাঝে আনন্দ ও উচ্ছ্বাস দেখা দিয়েছে।
স্থানীয়রা জানায়, স্বাধীনতার ৪৫ বছর পরও উন্নয়নের কোন ছোঁয়া লাগেনি এই এলাকায়। নেই যোগাযোগ ব্যবস্থা, নেই বিদ্যুৎ, এমনকি জীবন-জীবিকার কর্মসংস্থান। ওপেন কারাগার ও পুনর্বাসন কেন্দ্র নির্মাণ হলে অবহেলিত এলাকাটি আলোকিত হয়ে উঠবে। দেশের সর্ববৃহৎ প্রকল্প গ্রহণে উদ্যোগ নেয়ায় সরকারের উচ্চপদস্থ কর্তৃপক্ষ ও হলদিয়াপালং ইউপি চেয়ারম্যানকে গ্রামবাসী সাধুবাদ জানিয়েছেন।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বলেন, সরকার কক্সবাজারকে ঘিরে বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে ওপেন কারাগারও একটি। মহেশখালী, পেকুয়াসহ চলমান অন্য প্রকল্পের মতো এটির কাজও আমরা খুব দ্রুত শুরু হবে বলে আশা করছি। সবার সহযোগিতায় সফলভাবে কাজের সমাপ্তি হবে।
Discussion about this post