স্বাধীনতার পর থেকে এই পর্যন্ত নারী আসামি ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত হলেও কার্যকর হয়নি বাংলাদেশে। দেশের কোনো কারাগারে নারীদের ফাঁসির মঞ্চও নেই।
কারা অধিদফতর সূত্র জানায়, স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন অভিযোগে শতাধিক নারীর ফাঁসির আদেশ হয়েছে। দণ্ডপ্রাপ্তদের বেশিরভাগই দীর্ঘ সময় কারাভোগ করে বেরিয়ে গেছেন, কেউ মারা গেছেন, কারও শাস্তি আপিলে কমেছে।
বর্তমানে দেশের বিভিন্ন কারাগারে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৩৭ নারী বন্দি রয়েছেন। এছাড়াও হত্যাসহ বিভিন্ন মামলায় দুই হাজার ৮৯৯ নারী কারাবন্দি। এদের মধ্যে বিচারাধীন মামলায় দুই হাজার ৩৬৯ জন হাজতে আছেন। আর সাজাপ্রাপ্ত কয়েদি হিসেবে কারাগারে আছেন ৫৩৩ জন নারী।
কারা সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুরের কাশিমপুরে একটি নারী কেন্দ্রিয় কারাগারসহ দেশের ১৩ কেন্দ্রিয় কারাগার ও ৫৫টি জেলা কারাগারে বর্তমানে বন্দি রয়েছেন (৭ জুন পর্যন্ত) ৭৫ হাজার ৯৩৫ জন। এরমধ্যে বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত কয়েদি বন্দি রয়েছেন ১৪ হাজার ৮৯৩ জন। ৫৯ হাজার ৪২৯ জন হাজতি বন্দি রয়েছেন। এসব বন্দির মধ্যে নারী বন্দি রয়েছেন দুই হাজার ৮৯৯ জন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি রয়েছেন এক হাজার ৪৫৬ জন। তারমধ্যে মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত নারী বন্দি হচ্ছেন ৩৭ জন। নারী বন্দিদের সঙ্গে ছয় বছরের নিচে শিশু রয়েছে ২৬৭টি।
কারা সূত্র জানায়, ব্রিটিশ শাসনামলে ১৯৩৭ সালে সিলেট কারাগারে স্বামী হত্যার দায়ে করিমুন্নেসা নামের এক নারীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় বলে তারা জানতে পেরেছেন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নারীদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার তথ্য থাকলেও এই ভুখণ্ডে আর কোনও নারীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার নজির নেই।
সর্বশেষ পুলিশ কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমান হত্যা মামলায় মেয়ে ঐশী রহমানকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় দেন উচ্চ আদালত। ৫টি কারণ উল্লেখ করে আদালত তাকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন দেন। কারণগুলো হলো, ১. মার্ডার উইথআউট মোটিভ, ২. মেডিক্যাল রিপোর্ট (শারীরিকও মানসকি অবস্থা) ৩. পারিবারিক মানসিক রোগ, ৪. পূর্বেকারে কোনও ক্রিমিনাল অ্যাক্টিভিটি নেই এবং ৫. অপরাধ করার ২ দিন পর পুলিশের কাছে আত্মসর্মপণ।
কারা সদর দফতরের এআইজি প্রিজন্স (প্রশাসন) মো. আবদুল্লাহ আল মামুন গণমাধ্যমকে জানান, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর দেশে কোনও নারী বন্দির মৃত্যুদণ্ড র্কাযকর করা হয়নি। এমন কোনও তথ্যও তাদের কাছে নেই। বাংলাদশে হওয়ার আগে কোনও নারী বন্দির মৃত্যুদণ্ড র্কাযকর করা হয়েছে কিনা সেটা তার জানা নেই।
২০০৭ সালে কাশিমপুরে দেশের একমাত্র মহিলা কারাগার উদ্বোধনকালে সাবেক আইজি প্রিজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জাকির হোসেন বলেছিলেন, অতীতে কোনো নারী আসামির ফাঁসির রেকর্ড না থাকায় এই কারাগারে ফাঁসির মঞ্চ তৈরি করা হয়নি।
Discussion about this post