ডেস্ক রিপোর্ট
স্ত্রী হত্যায় দেশে কতজন স্বামীর সাজা হয় তার পরিসংখ্যান থাকা উচিত বলে মনে করেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।মঙ্গলবার (৬ জুলাই) সন্তান হত্যার অভিযোগে স্বামীর বিরুদ্ধে স্ত্রীর করা মামলার আপিল শুনানির সময় প্রধান বিচারপতি এ কথা বলেন।
প্রধান বিচারপতি বলেন, আমার মনে হয় স্ত্রীর মামলায় ৮০ শতাংশ স্বামীর সাজা হয়। ফাঁসি হয়, যাবজ্জীবন হয়। তাতে কি স্ত্রী হত্যা কমেছে? এটার পরিসংখ্যান হওয়া উচিত।সুতরাং, এটা ভুল ধারণা যে সাজা দিলেই আমরা দুধের মধ্যে ভাসতে থাকব।
শাশুড়ির সঙ্গে রাগ করে বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলায় নিজ সন্তানকে হত্যা করেন এক ব্যক্তি। এ ঘটনায় তার স্ত্রী মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দেন। পরে বিচারিক আদালত তাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় দেয়।
যে রায়ের দণ্ড পরবর্তীতে হাইকোর্টেও বহাল ছিল। এ মামলার আপিল শুনানিতে এমন মন্তব্য করেন প্রধান বিচারপতি। মামলার শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে দেশ- বিদেশের বিভিন্ন মামলার নজির তুলে ধরা হয়।
তখন প্রধান বিচারপতিও একটি মামলার রেফারেন্স তুলে ধরে বলেন, এক লোক সকালবেলা একটি চায়ের দোকানে গেলো। দোকানে গিয়ে দেখে একজন চা খাচ্ছে তখন তাকে ধরে মাটিতে শুইয়ে গলা কেটে পৃথক করে ফেলল, পরে মাথাটা লটকে নিয়ে থানায় নিয়ে হাজির হয়েছে। এ ঘটনায় আদালত তাকে ফাঁসি দিয়েছে। তখন সুপ্রিমকোর্ট বলল এ অপরাধের ক্ষেত্রে ফাঁসির সাজা কমানো যায় না।
শুনানিতে আসামিপক্ষের আইনজীবী আদালতকে বলেন, ঘটনাটি ছিল আকস্মিক। শাশুড়ির অপমান সহ্য করতে না পেরে নিজের ওপরে নিয়ন্ত্রণ হারান ওই বাবা। সে সময় তিনি নিজেকেও হত্যা করতে পারতেন। কিংবা শাশুড়িকেও হত্যা করতে পারতেন। অর্থাৎ ঘটনাটি পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী হয়নি। নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তিনি এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন।
উভয়পক্ষের বক্তব্য শুনে সন্তান হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ওই ব্যক্তির সাজা কমিয়ে ১০ বছরের কারাদণ্ড দিয়ে রায় দেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ। রায়ে আসামি জসিম রাঢ়ীর বিরুদ্ধে আর কোনো মামলা না থাকলে তাকে কারামুক্তির নির্দেশ দেন আদালত।
আদালতে এদিন রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ। আর আসামিপক্ষের শুনানিতে ছিলেন রাষ্ট্রীয় খরচে নিয়োগ পাওয়া আইনজীবী মো. হেলাল উদ্দিন মোল্লা।
আপিল বিভাগ জসীমকে দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় শাস্তি বহাল না রেখে দণ্ডবিধির ৩০৪-এর পার্ট-২-তে ১০ বছরের সাজা দিয়েছেন। ২০০৭ সাল থেকে জসীম কারাগারে আছেন। এ হিসাবে তার ১০ বছরের সাজাভোগ শেষ হয়ে গেছে। অন্য কোনো মামলায় জসীম গ্রেফতার না থাকলে তাকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
এ মামলার বিবরণ ও স্বীকারোক্তির বিষয়ে আইনজীবী মো. হেলাল উদ্দিন মোল্লা গণমাধ্যমকে বলেন, বরিশাল মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা জসিম রাঢ়ী ২০০৭ সালের ১ এপ্রিল রাত সড়ে ৮টার দিকে, শ্বশুরবাড়িতে রাতের খাবার খাচ্ছিলেন। এ সময় তিনি শাশুড়ির কাছে দুই হাজার টাকা চায়। ওই টাকা নিয়ে শাশুড়ির সঙ্গে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে নাতিকে লাথি মারে নানি।
এরই এক পর্যায়ে সন্তানকে নিয়ে সে বাইরে চলে যায় এবং শাশুড়ির সঙ্গে রাগ করে নিজ সন্তানকে গলা টিপে হত্যা করে পুকুরের পানিতে কচুরিপানার নিচে লুকিয়ে রাখে। এ ঘটনায় পরদিন (২ এপ্রিল) তার স্ত্রী ফাতেমা বেগম জসীম রাঢ়ীর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করে।
এ মামলায় বিচারিক আদালত সন্তান হত্যার দায়ে বাবা জসিম রাঢ়ীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে ২০০৮ সালের ২৮ জুলাই রায় দেয়। এরপর হাইকোর্টও তার সেই সাজা বহাল রেখে ২০১৩ সালের রায় দেয়। এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের করলে আপিল বিভাগে তার শুনানি হয়।
Discussion about this post