নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দোয়েল চত্বর এলাকায় সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের আবারও সংঘর্ষ হয়েছে। সোমবার সকালে দোয়েল চত্ত্বর ও টিএসসি এলাকায় জড়ো হওয়া শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছুড়লে এ সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। এতে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
এর আগে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে বলেন, আমি কমিশনার হয়ে আপনাদের কথা দিচ্ছি, আর একটি টিয়ারশেলও মারবে না পুলিশ। আপনারাও ইট পাটকেল মারবেন না। পুলিশ ক্যাম্পাস থেকে চলে যাবে।
ছাত্রদের পক্ষ থেকে অন্যায়ভাবে কাঁদুনে গ্যাস ও গুলি চালানোর বিচার চাইলে কমিশনার বলেন, ভুল পুলিশেরও, আপনাদেরও, উভয়পক্ষেরই ছিল। আলোচনা হবে, দোষী পুলিশ সদস্যদের বিচার করা হবে। এরপর দোয়েল চত্বর থেকে ডিএমপি কমিশনার শাহবাগের দিকে চলে যান।
এদিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা চিৎকার করে বলতে থাকে পুলিশ চলে গেলে আমরাও চলে যাব। পুলিশ কমিশনার দোয়েল চত্বর এলাকা ত্যাগ করার পরই পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত শিক্ষার্থীদের ওপর কাঁদুনে গ্যাস ছোড়ে, লাঠি পেটা শুরু করে।
এদিকে থমথমে হয়ে আছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার পরিবেশ। শাহবাগ মোড় থেকে ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি), নীলক্ষেত থেকে দোয়েল চত্বর, কার্জন হল থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরের চিত্র আজ একেবারেই আলাদা। ইট-পাটকেল, লাঠি-সোঁটা, গুলির খোসা পড়ে আছে পথে পথে। রাতভর পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া এবং সংঘর্ষ হয়েছে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী এবং চাকরি প্রত্যাশীদের।
ভোর ৬টার দিকে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল করে ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইনসহ প্রায় তিনশ নেতাকর্মী। মিছিলটি শাহবাগ থেকে শুরু হয়ে শহীদুল্লাহ হলের সামনে পৌঁছালে সেখানে অবস্থানরত আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়।
উল্লেখ্য, সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা সংস্কারসহ পাঁচ দফা দাবিতে অনেকদিন থেকেই আন্দোলন করছিল শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বেশিরভাগ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এসব দাবিতে সমর্থন জানিয়ে আন্দোলন করে আসছিল। গতকাল থেকে সারাদেশে আবারও আন্দোলন শুরু করে শিক্ষার্থীরা।
গতকাল দুপুরের পর থেকে শাহবাগে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী রাস্তা অবরোধ করে বসে পড়ে। এ সময় ওই এলাকার সকল রাস্তাঘাট বন্ধ হয়ে যায়। দিনের বেলায় পুলিশ সতর্ক অবস্থানে থাকলেও রাত আটটার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অ্যাকশনে নামে। শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে রাবার বুলেট, কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে পুলিশ। এতে ৫০ জনের বেশি আন্দোলকারী আহত হয়েছেন।
এরপর শিক্ষার্থীরা পিছু হটে টিএসসি ও দোয়েল চত্ত্বরে অবস্থান নেয়। মধ্যরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েদের পাঁচটি হল থেকেও কয়েক হাজার শিক্ষার্থী আন্দোলনে অংশ নেয়। সেখানেই সারারাত অবস্থান করে শিক্ষার্থীরা।
সকালে দোয়েল চত্ত্বর ও টিএসসি এলাকায় অবস্থান নেয়া শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ আবারো অ্যাকশনে যায়। এ সময় রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে পুলিশ। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত পুলিশ সর্তকতার সঙ্গে ঢাবি ক্যাম্পাসে অবস্থানে নিয়েছে।
সংস্কারের পক্ষে আন্দোলনের মূল সমন্বয়ক হাসান আল মামুন জানান, ‘আমাদের দাবি যৌক্তিক এবং পরিষ্কার। সংসদ থেকে কোটা সংস্কারে সুনির্দিষ্ট আশ্বাস চাই। অন্যথায় আমাদের কর্মসূচি চলতে থাকবে।’
Discussion about this post