‘বাসাওলারাতো ডাকাতি করতাচ্ছে। দিনেদুপুরে ডাকাতি করতাচ্ছে। দ্যাহেন না, সবার সামনেই ডাকাতি করতাচ্ছে। ৩০ টাকার ভাড়া নিতাছে ১০০ টাকা। এই তো ডাকাতিই। ডাকাতি ছাড়া অন্যকিছু না।’ সদরঘাটগামী বিহঙ্গ পরিবহনে যাত্রী নাজমা বেগম এভাবেই বলে যাচ্ছেন। শুধু নাজমা বেগমই নয়, অন্য যাত্রীরও একই কথা বলছেন।
ওই বাসের যাত্রীরা বলেন, ঈদের সময় ৫ টাকা বা সর্বোচ্চ ১০ টাকা বেশি ভাড়া নিতে পারে সেখানে ৩০ টাকার ভাড়া ১০০ টাকা নিচ্ছে। এটা কোনোভাবে মানা যায়? এটাকে গলাকাটা ভাড়া বলা যায়। ঈদ উপলক্ষে ভাড়া আদায় করা হয়েছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা। ছাদে উঠলে দিতে হচ্ছে ৫০ টাকা।
মঙ্গলবার দুপুর সোয়া ১টায় মিরপুর ১০ নম্বর গোল চত্বরে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ‘সদরঘাট ১০০, সদরঘাট ডাইরেক্ট ১০০, ডাইরেক্ট সদরঘাট ১০০, গুলিস্তান ৭০, গুলিস্থান ৭০। সিটিং গাড়ি। খালি গাড়ি। খালি গাড়ি।’ এভাবেই একেকটি গাড়ি একেক ধরনের ভাড়া হাঁকাচ্ছে। যাত্রীরা কোনো উপায় না পেয়ে ওই গাড়িগুলোতে উঠতে বাধ্য হচ্ছে।
ওই রুটে চলাচলকারী মিরপুর-গুলিস্তান, মিরপুর-সদরঘাট, মিরপুর-মতিঝিল রুটে চলাচলকারী বিহঙ্গ, ইউনাইটেড, ইটিসি, শিখর, বিকল্প অটো, একাত্তর, ৫২ পরিবহনসহ অন্যান্য পরিবহনের বাসগুলোকে এভাবেই অতিরিক্তি ভাড়া আদায় করতে দেখা গেছে। পাশে পুলিশ দাঁড়িয়ে থাকলেও এ বিষয় কোনো কিছুই বলছে না।
মিরপুর মিরপুর ১০ নম্বর গোল চত্বরে দায়িত্বরত ট্রাফিক সার্জেন্ট অনিত্যর কাছে অতিরিক্তি ভাড়া নেয়ার বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কই, কোথায় বেশি ভাড়া নেয়া হচ্ছে? আমিতো জানি না। আমি দেখিও নাই।’ আপনার সামনেই তো বাসের হেলপার চিৎকার করে ভাড়া চাচ্ছে, আর যাত্রী ডাকছে। এ কথা বলার পর ওই সার্জেন্ট কোনো উত্তর না দিয়ে বিরক্ত নিয়ে সামনের দিকে চলে যান।
মিরপুর-আজিমপুর রুটে চলাচলকারী সেফটিসহ অন্যরুটের বাসগুলোও নির্ধারিত ভাড়ার তিন থেকে চার গুণ বেশি ভাড়া নিতে দেখা গেছে। যাত্রী মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমার স্ত্রী এবং দুই সন্তান বরিশালের মুলাদীতে গ্রামের বাড়ি ঈদ করার জন্য যাবে। সাড়ে ১২টা থেকে দাঁড়িয়ে আছি। যেই বাস আসে সেই ভাড়া চায় ৮০-১০০ টাকা করে। আপনিই বলেন, এটা হয়? আমরা চারজনকে বাসে করে সদরঘাটে যাইতেই যদি ৪০০ টাকা লাগে, তাহলে কিভাবে হয়? ১২০ টাকার ভাড়া ৪০০ টাকা। এইজন্য একটু দেরি করতাছি। একটু কম পাইলেই উঠবো।’
পাশে দঁড়িয়ে থাকা জামাল আহমেদ বলেন, ‘আমরা তিন বন্ধু বসুন্ধরায় মাকের্টে যাবো, এক ঘণ্টার বেশি সময় হয়ে গেছে। কিন্তু কোনো বাসেই উঠতে পারছি না। তারা শুধু সদরঘাট-গুলিস্তানের যাত্রী নিচ্ছে। সব ডাইরেক্ট গাড়ি হয়ে গেছে।’
গার্মেন্টসকর্মী মতিনুর বেগম বলেন, ‘সদরঘাট যাবো, কিন্তু বাসওলারা অনেক বেশি বেশি ভাড়া চাচ্ছে। ৮০ টাকার নিচে কোনো বাসওলারা নিতে চায় না। আমাদের লঞ্চ ৭টায়। আমরা ভোলায় যাবো। কিন্তু পারছি না।’
ইউনাইটেড পরিবহনের বাসে বসে যাত্রী আলমগীর হেসেন বলেন, ‘গুলিস্তান পর্যন্ত ৭০ টাকা ভাড়া। ডাইকা উঠায়ছে। কোনো উপায় নাই, এরা এখন বেশি ভাড়াই নিবে। দেখার কেউ নেই। এজন্য বেশি ভাড়া নিয়ে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিলাম। গুলিস্তান গিয়ে, বাস বা রিকশায় সদরঘাট যাবো। কারণ ওখানে জ্যাম থাকতে পারে।’
বিহঙ্গ, ইউনাইটেডের একাধিক বাসচালক এবং হেলপারদের কাছে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া নেয়ার বিষয় জানতে চাইলে তারা বলেন, ঈদের সময় একটু বেশি নিতেই হয়। এটা অতিরিক্ত মনে করতে পারেন। বেশি মনে করতে পারেন। বোনাসও মনে করতে পারে ন। যাই মনে করেন, দুইদিন এ ভাবেই ভাড়া নিবো। মালিকদের সিদ্ধান্ত হয়েছে। মালিকরাই বলেছে বেশি নিতে।
এদিকে অনেক পরিবহনকে দেখা গেছে, গুলিস্তানের কথা বলে মৎস্য ভবন কিংবা প্রেসক্লাবের মোড়ে যাত্রীদের নামিয়ে দিচ্ছে। বাংলামেইল।
Discussion about this post