কিশোরী ধর্ষণের ঘটনায় এক যুবককে আটক করে স্থানীয় লোকজন জনপ্রতিনিধিদের হাতে তুলে দেন। সালিসের নামে ওই যুবককে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে ছেড়ে দেন ইউনিয়ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিরা। এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকার লোকজন। নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চরফকিরা ইউনিয়নে গত সোমবার এই ঘটনা ঘটেছে। ওই কিশোরী (১৭) বাকপ্রতিবন্ধী।
পরে গত মঙ্গলবার কিশোরীর মা কোম্পানীগঞ্জ থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে অভিযুক্ত যুবক ইসমাইল হোসেনসহ তিনজনকে আসামি করে মামলা করেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ইসমাইল দীর্ঘদিন থেকে কিশোরীকে উত্ত্যক্ত করে আসছিল। ইসমাইলের অভিভাবকদের বিষয়টি বিভিন্ন সময়ে জানানো হলেও কোনো কাজ হয়নি। সোমবার সকালে কিশোরীর বাড়িতে যায় ইসমাইল। বাড়িতে তখন কেউ ছিল না। কিশোরীকে ধর্ষণ করে পালিয়ে যাওয়ার সময় বাড়ির লোকজন ইসমাইলকে হাতেনাতে আটক করেন।
কিশোরীর পরিবারের সদস্যরা বলেন, সোমবার দুপুরে গ্রামে সালিস ছিল। সালিসে চরফকিরা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন এবং সদস্য ইসমাঈল হোসেনসহ সমাজের নেতৃস্থানীয় লোকেরা ছিলেন। ইসমাইলকে তাঁরা সালিসে হাজির করেন। ইউপি চেয়ারম্যান ইসমাইলকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে তার পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত দেন। এই সিদ্ধান্ত না মেনে তাঁরা সালিস ছেড়ে যান। পরে থানায় মামলা করেন।
অভিযোগের বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন দাবি করেন, তিনি জরিমানার কোনো সিদ্ধান্ত দেননি, সালিসও করেননি। ইউপি সদস্যসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিদের তিনি বলেছেন ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে কি না, তা তদন্ত করে দেখতে। ধর্ষণের ঘটনা ঘটে থাকলে বিষয়টি থানা-পুলিশকে জানাতে। তাঁর দাবি, তিনি অভিযুক্ত যুবককে ছেড়ে দিতে বলেননি।
তবে ইউপি সদস্য ইসমাঈল হোসেন মুঠোফোনে গণমাধ্যমকে বলেন, সালিসে ইউপি চেয়ারম্যান উপস্থিত ছিলেন। ওই যুবককে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করার সিদ্ধান্তও দেন চেয়ারম্যান। ধর্ষণের ঘটনা সালিসে মীমাংসা করা বেআইনি, একজন জনপ্রতিনিধি হয়ে এটি করা ঠিক হয়েছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের সালিসে চেয়ারম্যানই সব। তিনি সিদ্ধান্ত দিলে তা না মানার সুযোগ নেই।
কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সৈয়দ মো. ফজলে রাব্বী গণমাধ্যমকে বলেন, অভিযুক্ত যুবককে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য কিশোরীকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে পাঠিয়েছেন তাঁরা। ধর্ষণের ঘটনাটি স্থানীয় চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্য সালিসে মীমাংসার চেষ্টা করেছিলেন বলে শুনেছেন তিনি।
Discussion about this post