ফারজানা সুলতানা
আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি ‘ধর্ষণ’ এর শাস্তি মৃত্যুদন্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা কোন নির্দিষ্ট মেয়াদের সাজা না রেখে ধর্ষণকারীর একমাত্র শাস্তি হওয়া উচিৎ তার ‘লিঙ্গ কর্তন’ এবং এই ধরণের মামলার বিচারিক প্রক্রিয়া অতি দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালে নিষ্পন্ন করা যেখানে ৬ মাসের মধ্যে বিচারিক আদালত থেকে মামলার রায় প্রদানের বাধ্যবাধকতা এবং আপীল আদালতে ২ মাসের মধ্যে আপীল নিষ্পত্তির বাধ্যবাধকতার বিধান থাকবে।
বাংলাদেশে যেই হারে ধর্ষণ,ধর্ষণের পর হত্যা,নারী নির্যাতন বেড়ে চলেছে এই পরিস্থিতিতে এই ধরণের একটি আইন প্রণয়ন করার প্রয়োজনীয়তা প্রকট হয়ে গিয়েছে।
এই ধরণের আইন প্রণোয়নের পর আইন কার্যকর করার জন্য যদি প্রত্যেক জেলায় প্রয়োজন অনুসারে ৫-১০ টি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল স্থাপন করা হয় এবং বিচার বিভাগ থেকে নিয়মিত এর সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদারকি করা হয় তাহলে হয়তো ধর্ষণ,ধর্ষণের পর হত্যা, নারী নির্যাতন,নারীর প্রতি সহিংসতা ইত্যাদি কমে আসবে।
উপরোক্ত অপরাধগুলো বাংলাদেশে প্রতিদিন যেভাবে একের পর এক ঘটে চলেছে তা প্রতিরোধ করা না গেলে অদূর ভবিষ্যতে হয়তো নারীরা বিয়ে করবেনা,আর বিয়ে করলেও সন্তান নিতে অনীহা প্রকাশ করবে!!
তাই এই নিয়ে আর কালক্ষেপণ নয় অতি শীঘ্রই এর প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিৎ তাহলেই গড়ে উঠবে নারীবান্ধব রাষ্ট্র যেখানে আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী,বিরোধীদলীয় নেত্রী,স্পীকার,সাবেক প্রধানমন্ত্রী সহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে নারীগণ বহাল আছেন।আর যেখানে আমেরিকার প্রেসিডেন্টও হতে যাচ্ছেন একজন নারী।
বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে সরকারী,বেসরকারী উদ্যেগে দেশে-বিদেশে কত সেমিনার,ওয়ার্কশপ,ইত্যাদি করা হচ্ছে এবং তা বিভিন্ন মিডিয়া যেমন টেলিভিশন, সংবাদপত্র,বিভিন্ন অনলাইন সংবাদে প্রচার ও প্রকাশ করা হচ্ছে কিন্তু বাস্তবে নারীরা এর কতটা সুফল পাচ্ছে??
যেখানে আমি আমার চোখের সামনে অনেক সুশিক্ষিত, সুপ্রতিষ্ঠিত,কর্মজীবী নারী এমনকি আইন পেশার সাথে জড়িত অর্থাৎ আইনজীবী নারীদেরকেও দেখেছি তার মা-বাবার কাছে সামান্য কতগুলো ব্যাপার যেমন সে কোথায় যাবে,কখন যাবে,কিভাবে যাবে,কার সাথে যাবে,কখন ফিরবে,রাত হয়ে যাবে কিনা,ইত্যাদি প্রশ্নের সম্মুখীন হতে।আরো শুনেছি কোন নারীর “ফেসবুক আইডি থাকলে এবং তাতে নিজের কোন ছবি ব্যবহার করলে খারাপ পুরুষরা ঐ ছবি নিয়ে খারাপ কাজে ব্যবহার করবে”।আর এটা মা-বাবারা সমাজের ভয়ে(খারাপ পুরুষদের ভয়ে) অনেকটা বাধ্য হয়েই করেন তাদের কন্যা সন্তানের নিরাপত্তার জন্য। কিন্তু কেন???
একটা খারাপ পুরুষও (যে তার জৈবিক চাহিদা মেটানোর জন্য ৫ বছরের বাচ্চাকে লালসার শিকারে পরিণত করে) তো একজন নারীর গর্ভধারণকারী সন্তান।
অর্থাৎ ঐ খারাপ পুরুষটার “মা” ও একজন নারী।
সেই পুরুষ যাকে বিয়ে করবে বা করেছে তিনিও একজন নারী।
সেই পুরুষের বিয়ের পরে তার ঘরে কন্যা সন্তান হলে তার ঔরষজাত সন্তানও একজন নারী।
আপনি(খারাপ পুরুষ) যদি আপনার মা,স্ত্রী বা কন্যার সাথে এই জঘন্য কাজ(ধর্ষণ)করতে না পারেন তাহলে কেন অন্যের মা,স্ত্রী বা কন্যার সাথে তা করার চিন্তা বা ইচ্ছা পোষন করবেন???
আপনি আপনার মা,স্ত্রী বা কন্যাকে যতটা সন্মান, ভালবাসা বা নিরাপত্তায় রেখেছেন অন্য একজন পুরুষের ক্ষেত্রেও তার একটুকুও ব্যতিক্রম না। শুধু প্রয়োজন দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন।
লেখক: আইনজীবী
Discussion about this post