ময়মনসিংহ মহিলা ক্যাডেট কলেজের শিক্ষার্থী শর্মিলা শাহরিন পলিন হত্যা মামলার অভিযুক্ত মূল আসামি লেফটেন্যান্ট কর্নেল নাজমুল হককে কেন সাময়িক বরখাস্ত করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
একইসঙ্গে আগামী ১০ দিনের মধ্যে সেনা সদর দফতর, প্রতিরক্ষা সচিব, সেনা সদর দফতরের অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেলসহ সংশ্লিষ্টদের এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।সোমবার এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে হাইকোর্টের বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি জেবিএম হাসানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রুল জারি করেন।আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট ফাওজিয়া করিম ও ব্যারিস্টার এম. সারোয়ার হোসেন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন মোতাহার হোসেন সাজু। এর আগে আদালতে রিটটি করেন পলিনের বাবা আবুল বাশার পাটোয়ারী।এর আগে ২০০৫ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহ গার্লস ক্যাডেট কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী শার্মিলা শাহরিন পলিন মারা যায়। ওই ঘটনায় কলেজ কর্তৃপক্ষ ময়মনসিংহের কোতোয়ালি থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা করে। কিন্তু ঘটনার ৮ দিন পর পলিনের বাবা মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে দাবি করে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন। ওই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ঘটনাটির বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেয়। জেলার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. আল আমিন ঘটনাটি তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন।
২০১৩ সালের ২২ মে দাখিলকৃত বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ক্যাডেট কলেজের মিল্ক ব্রেকের সময় ভিকটিম শার্মিলা শাহরিন পলিনের হত্যাকাণ্ড ঘটে। এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ধামাচাপা দিয়ে উক্ত ঘটনা আত্মহত্যা হিসেবে প্রচারের সঙ্গে জড়িত ওই কলেজের তত্কালীন অ্যাডজুট্যান্ট (বর্তমানে লেফটেন্যান্ট কর্নেল) মেজর নাজমুল হক, এনসিও সার্জেন্ট নওশেরুজ্জামান, সিকিউরিটি গার্ড হেনা বেগম ক্যাডেট কলেজসমূহের ডিএ এজি মেজর মুনির আহাম্মদ চৌধুরী এবং কলেজের সহযোগী অধ্যাপক আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০২/২০১/২০২/২০৩/৩৪ ধারার অধীনে অপরাধে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে।হত্যাকাণ্ডের প্রায় এক যুগ পর ২০১৬ সালের ৩ মার্চ ময়মনসিংহের জেলা ও দায়রা জজ মো. আমির উদ্দিন আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। এই অভিযোগ গঠনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ এবং মামলার বিচার কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন সেনা কর্মকর্তা নাজমুলসহ চারজন। গত বছরের ৬ এপ্রিল হাইকোর্ট ওই আবেদন খারিজ করে দেন।
হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করেন নাজমুলসহ অন্যরা। আবেদনের পক্ষে ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ, রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা এবং পলিনের পিতার পক্ষে অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন শুনানি করেন। শুনানি শেষে আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় বাতিলের আপিল আবেদন খারিজ করে দেন।এর ফলে ময়মনসিংহ গার্লস ক্যাডেট কলেজের ছাত্রী শার্মিলা শাহরিন পলিন হত্যা মামলার বিচার কার্যক্রম নিম্ন আদালতে চলবে মর্মে হাইকোর্টের দেয়া রায় বহাল থাকে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের চার বিচারপতির বেঞ্চ এই আদেশ দেন। এর ফলে বিচারিক আদালতে এই মামলার কার্যক্রম শুরু হয়। কিন্তু এ হত্যা মামলার প্রধান আসামি হওয়া সত্ত্বেও আসামি নাজমুল চাকরিতে বহাল থাকায় তার সাময়িক বরখাস্ত চেয়ে সেনা সদর দফতরে একটি আইনী নোটিশ পাঠানো হয়। সেই নোটিশের কোনো জবাব না পেয়ে নাজমুলের চাকরিতে বহাল থাকার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে উক্ত রিট দায়ের করা হয়। রিটের শুনানি নিয়ে আদালত আজ এই আদেশ দেন।
জাগোনিউজ
Discussion about this post