নারিন-বিহ্বলতার মধ্যে নাইটদের নতুন বিপদ বৃষ্টি

18
VIEWS
member of kkr

জল মাপতে ইডেনে দুই নাইট। শনিবার। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস

একগাল হাসি নিয়ে ড্রেসিংরুম থেকে বেরিয়ে এলেন ইউসুফ পাঠান। টিপটিপ বৃষ্টি পড়ছে, মাঠে জল। পায়ে একটা চটিও নেই। ইডেন কিউরেটর প্রবীর মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে ড্রেসিংরুম লনে দেখা হয়ে গেল ইউসুফের আর সঙ্গে সঙ্গে আব্দার, ‘‘ফির বারিষ আ রহি হ্যায়। দাদা সমভাল লো!’’ বললেন বটে, কিন্তু বৃষ্টির জমা জল দেখে নিজেকে সামলানোর কোনও ইচ্ছে সিনিয়র পাঠানের আছে বলে মনে হল না। আন্দ্রে রাসেলের সঙ্গে একটু আগেই তো জলে রীতিমতো দাপাদাপি করে এলেন।

‘ডাবল জি’ ডাকনামটা গৌতম গম্ভীরের এখন একঘেয়ে লাগে কি না জানা নেই। যদি লাগে, শনিবারের কলকাতা কিন্তু আদরের ক্যাপ্টেনকে একটা নতুন নাম বেছে দিল। গৌতম গম্ভীর দিল্লির ছেলে হতে পারেন, তাঁর পদবী বাঙালি না হতে পারে, কিন্তু আজ থেকে তিনি শহরের ‘গৌতমদা’! অন্তত পাঁচ-ছশো কলেজ ছাত্রের গলা থেকে বেরনো গম্ভীর-গর্জনে এ দিন দুপুরে এই নামটাই ছিটকে বেরলো। কেকেআর ক্যাপ্টেনকে দেখে যাঁরা উন্মত্ত। ক্লাস টুয়েলভে স্কুল ডুব মেরে ক্রিকেট খেলতে যাওয়ার অপরাধে তাঁর দু’মাসের সাসপেনশন কাহিনি শোনার পর? থাক।

স্পনসরদের অনুষ্ঠানে যে এমন বেখাপ্পা প্রশ্ন অপেক্ষা করে থাকতে পারে, আন্দাজই পাননি ‘স্কাই’। গিয়েছেন একটা কলেজ অনুষ্ঠানে, নিজের কলেজ জীবনের গল্প বলছেন, আচমকা এক ছাত্রী জি়জ্ঞেস করে বসলেন, আপনার গার্লফ্রেন্ড কে? দুপুর বারোটার চড়া রোদে না লজ্জায়, সূর্যকুমার যাদবের গালটা কেন লাল হয়ে গেল, বোঝা গেল না। কোনও মতে বললেন, ‘‘ক্রিকেটে মন দিচ্ছি তো। গার্লফ্রেন্ড এখনও হয়ে ওঠেনি!’’

শনিবার গোটা দিন শহরে টিম কেকেআরের আশেপাশে ঘুরে পাওয়া ছবিগুলো দেখলে কিছুতেই মনে হবে না, এই টিমটা চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে লিগ টেবলে দু’নম্বর রাজস্থান রয়্যালসের বিরুদ্ধে নামতে চলেছে। এটাও বিশ্বাস হবে না, টিমটার এত দিনকার ব্রহ্মাস্ত্র বিপদে। বৃষ্টির চোটে যে কেকেআর ইডেন ইন্ডোরে প্র্যাকটিস করতে ঢুকে গেল, তার মধ্যে তিনি ছিলেন না। সুনীল নারিন সকালেই ঢুকে গিয়েছিলেন চেন্নাইয়ের স্পোর্টস সায়েন্স সেন্টারে। তাঁকে নিয়ে কেকেআরের মননে যা-ই চলুক, আতঙ্ক থাকেও যদি, টিমের বহিরঙ্গে তার খোঁজ নেই।

নারিন যখন এ দিন সন্ধেয় কলকাতায় ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, ঠিক তখন গম্ভীর দুই খুদেকে নিয়ে ড্রেসিংরুমের সামনে দাঁড়িয়ে। ওদের দৃষ্টি নেই, কিন্তু ওরাও ক্রিকেট খেলে। আল আমিন-মফিজুলের খুব ইচ্ছে ছিল এক বার কেকেআর ক্যাপ্টেনের সঙ্গে দেখা করার। দেখা হল, গ্লাভস-ব্যাট পাওয়া গেল, গম্ভীরের সঙ্গে ছবি উঠল, নাইট অধিনায়কের ক্রিকেট-পরামর্শও পেল তাঁর দুই খুদে ভক্ত। পরে দেখা গেল দু’জন প্রায় কথাই বলতে পারছে না বিহ্বলতায়।

নাইট অন্দরমহলেও একটা বিহ্বলতা চলছে। কিন্তু অতটা নয়। যে বিহ্বলতার নাম নারিন। পরিস্থিতিটা গম্ভীর দুটো শব্দে বুঝিয়ে গেলেন— ডিস্টার্বিং, আনসেটলিং। পরিষ্কার করে দিলেন, নারিনের অ্যাকশন নিয়ে কেকেআর ম্যানেজমেন্ট সন্তুষ্ট। কিন্তু সমস্যাটা আম্পায়ার এবং ম্যাচ অফিশিয়ালদের। ‘ব্যান’ শব্দটায় তাই নাইট শিবিরের প্রবল আপত্তি। এটাও এক বার বলে ফেললেন যে, নারিন রোববারের ম্যাচে নেই সেটা কী করে ধরে নেওয়া হচ্ছে? পরে আবার বললেন, নারিনকে নামানো হবে কি না ঠিক হয়নি। না হলে কুলদীপ আছেন, কারিয়াপ্পা আছেন, ব্র্যাড হগ আছেন। কেউ কম যান না। অধিনায়ক হিসেবে টিমের মনোবলবর্ধক টোটকা সাংবাদিকদের সামনে দিয়ে যাবেন, প্রত্যাশিত। অপ্রত্যাশিত হল নারিন নিয়ে গম্ভীরের আর একটা মন্তব্য, ‘‘ও পাশ করার পরেও আমরা জানতাম, আবার রিপোর্ট জমা পড়বে!’’

যদিও তার চেয়েও প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন, নারিনের দ্বিতীয় পরীক্ষার রিপোর্টটা পাওয়া যাচ্ছে কবে? কবে থেকে তিনি আবার কেকেআর জার্সিতে নামবেন?

গম্ভীরের দেওয়া ব্যাটে সৌরভের সই নিচ্ছে দুই খুদে দৃষ্টিহীন ক্রিকেটার। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস

শোনা গেল, নারিনের রিপোর্ট আসতে-আসতে সোমবার। সন্ধেয়  কেকেআর সিইও বেঙ্কি মাইসোর তেমনই জানালেন। কেকেআর বলছে, রিপোর্ট এলে তার পর নারিনের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবনাচিন্তা করতে বসবে। তাঁর কার্যকারিতা? কেকেআর ভাঙছে তবু মচকাচ্ছে না। এক কর্তা বললেন, ‘‘আপনাকে যদি বলা হয় ডান হাতের বদলে বাঁ হাতে ব্রাশ করুন, এক দিনে পারবেন?’’

নারিন কয়েকটা দিন না পারলে তাঁর বিকল্প আছে। কিন্তু মুশকিল হল, রবিবার বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টি যদি চলে সমানে, সেই দুর্ভোগের সমাধান পাওয়া কঠিন। আইপিএলের সুবিধে হল, ম্যাচ অনেকক্ষণ টানা যায়। পাঁচ ওভারের ম্যাচও হয়। একেবারে কিছু সম্ভব না হলে তখন পয়েন্ট ভাগাভাগি। এ দিন ইডেনে ঢুকে দেখা গেল, গোটা মাঠ কভারে ঢেকে ফেলেও জায়গায়-জায়গায় জল জমে। সুপার সপার চলছে। পিচকর্মীদের একজন বললেন, রবিবার দুপুরে যদি ঘণ্টাদুয়েকও রোদ পাওয়া যায়, মাঠ শুকিয়ে ফেলা যাবে। কিন্তু সেটা তো বৃষ্টি না হলে। আর ওভার কমিয়ে ম্যাচ হলে তাতে লাভের চেয়ে ক্ষতিই দেখছে কেকেআর। গম্ভীর তো বলেও গেলেন, হায়রাবাদ ম্যাচে কুড়ি ওভারে ১৭৭-এর জায়গায় বারো ওভারে ১১৮ হয়ে গিয়ে চাপটা অনেক বেড়ে গিয়েছিল। তার উপর প্রতিদ্বন্দ্বীর গুণগত মানে ওয়ার্নারের টিমকে আবার তিন গোল দেবে স্টিভ স্মিথের রয়্যালস।

নাইটদের গোল দিতে পারবে টিম রাজস্থান? কে জানে, তার আগে না বৃষ্টিই ম্যাচকে পাঁচ গোল দিয়ে দেয়।

সৌজন্যে আনন্দবাজার পত্রিকা

Next Post

Discussion about this post

নিউজ আর্কাইভ

April 2024
S S M T W T F
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930  

Welcome Back!

Login to your account below

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.