নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের মামলা ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির বিধান রয়েছে। তবে এ সময়ের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি না হলে কেন হয়নি তার কারণ উল্লেখ করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারককে এক মাসের মধ্যে একটি প্রতিবেদন সুপ্রিম কোর্টে প্রেরণের বিধান রয়েছে।
একইসঙ্গে মামলার পাবলিক প্রসিকিউটর ও তদন্তকারী কর্মকর্তাকেও অনুরূপ প্রতিবেদন সরকারের নিকট দাখিলের নির্দেশনা রয়েছে।
কিন্তু বিচারক, পিপি ও তদন্তকারী কর্মকতা কেউই এই বিধান যথাযথভাবে পালন না করাকে অনাকাঙ্খিত, অনভিপ্রেত ও আইন বহির্ভূত এবং তা অসদাচরণেল শামিল বলে গণ্য করেছে সুপ্রিম কোর্ট। একইসঙ্গে এই প্রতিবেদন দাখিলের বিধান আবশ্যিকভাবে প্রতিপালনের জন্য ট্রাইব্যুনালের বিচারক, পিপি ও তদন্তকারী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়ে সার্কুলার জারি করেছে সর্বোচ্চ আদালত।
প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার নির্দেশে রবিবার এই সার্কুলার জারি করা হয়।
প্রসঙ্গত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৩১ (ক) ধারায় বলা হয়েছে, “কোনো মামলা এই আইনের ২০ ধারা অনুযায়ী ১৮০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি না হইলে ট্রাইব্যুনাল তার কারণ লিপিবদ্ধ করে একটি প্রতিবেদন ৩০ দিনের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের নিকট দাখিল করিতে হইবে। যার একটি অনুলিপি সরকারের নিকটও দাখিল করতে হইবে। প্রতিবেদন পর্যালোচনার পর যথাযথ কতৃপক্ষ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ার জন্য দায়ী ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।”
কিন্তু এই বিধান পালন না করায় সার্কুলার জারি করেছে সুপ্রিম কোর্ট। এতে বলা হয়, সুপ্রিম কোর্টের নিকট গোচরীভূত হয়েছে যে আইনে নির্ধারিত সমসয়সীমার মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি না হলেও তার কোন কারণ লিপিবদ্ধ করে সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনাল থেকে কোন প্রতিবেদন সুপ্রিমকোর্টে প্রেরণ করা হচ্ছে না। অধিকন্তু এ বিষয়ে পাবলিক প্রসিকিউটর ও সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারাও এর কারণ লিপিবদ্ধ করে সরকারের নিকট প্রতিবেদন দাখিল করে তার অনুলিপি এই কোর্টে প্রেরণ করছে না। বিষয়টি অনাকাংঙ্খিত, অনভিপ্রেত ও আইন বহির্ভূত।
স্ত্রীকে হত্যার দায়ে মিলাদ হোসেন নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে গত বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া থানায় একটি মামলা করা হয়। ঘটনার দিনই তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর থেকে তিনি কারাগারে আছেন। ওই বছরের শেষের দিকে মামলাটি চট্টগ্রামের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এ বিচারের জন্য যায়। চলতি বছরের ২১ মার্চ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আদালত। অভিযোগ গঠনের পর সাত মাসেও কোন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি।
কিন্তু আইনানুযায়ী মামলাটি ১৮০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি না হওয়ায় আসামির জামিন চেয়ে আবেদন করেন আইনজীবী কুমার দেবলু দে। গত পহেলা নভেম্বর ওই জামিন আবেদনের শুনানিকালে আইনের সংশ্লিষ্ট ধারায় ব্যবস্থা গ্রহনের বিষয়টি আদালতের নজরে আনা হয়। এরপরই বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি জেবিএম হাসানের ডিভিশন বেঞ্চ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের মামলা ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি না হলে দায়ী ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া বিধান প্রতিপালন করা হয়েছে কিনা তা প্রতিবেদন আকারে আদালতকে অবহিত করতে সরকারকে নির্দেশ দেয়।
Discussion about this post