মো: সরোয়ার হোসাইন লাভলু
আমার এই লিখাটি আশা করি বাংলাদেশের সকল নিম্ন আদালতের বিজ্ঞ আইনজীবীগণের সম্মান আরো বৃদ্ধি করবে। আমি আগেই বলে রাখি, আমি এডভোকেট হিসেবে সনদ পাওয়ার পর থেকে বিজ্ঞ আদালতে মামলা শুনানী করার সময় আচকান ষ্টাইলের লম্বা বোতামযুক্ত প্রিন্স কোট পরিধান করি। কিন্তু কোন আদালত আমার ড্রেস কোড নিয়ে প্রশ্ন করেননি। গত ২৪/০২/২০১৬ ইংরেজী তারিখ বিজ্ঞ অতিরিক্ত চীফ মেট্রোপলিটন আদালত, চট্টগ্রাম এ একটি মামলায় জামিন শুনানী করে শুনানী শেষে আদেশ দেওয়ার পর বিজ্ঞ এ.সি.এম.এম. সাহেব জিজ্ঞাসা করলেন আমার ড্রেস কোথায়? আমি ড্রেস কোড ফলো করিনি কেন? আমি তো হতবাক! আমি অত্যন্ত বিনয়ের সাথে বলি যে, ‘‘মাননীয় আদালত আমি তো সঠিক/ ড্রেস কোড অনুযায়ী পোশাক পরিধান করেছি। তিনি বললেন, ‘এটা ড্রেস কোড!’ আমি বললাম, ‘হ্যাঁ স্যার, সিভিল রুলস্ এন্ড অর্ডার এর ৮২৬ নং নিয়মে তো এটাই নিম্ন আদালতের আইনজীবীদের পোশাক যেটাকে আচকান বা লম্বা বোতাম যুক্ত কোট বলে’। তিনি বললেন, ‘ও আচ্ছা। আপনি যান’। আমি উনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে চেম্বারে এসে আমার বই নিয়ে বসলাম। দেওয়ানী নিয়ম ও আদেশাবলী (CRO Civil), এবং ফৌজদারী নিয়ম ও আদেশাবলী (CRO Criminal) নিয়ে জানতে পারি যে, দেওয়ানী নিয়ম ও আদেশাবলীর নিয়ম ৮২৫ এ উচ্চ আদালতের আইনজীবীদের পোশাকের বিষয়ে নিুরূপভাবে লিপিবদ্ধ আছে :
‘‘আদালতের আইনজীবীদের পোশক এবং নিম্ন আদালতের আইনজীবীদের পোশক সুপ্রীম কোর্টের এডভোকেটগণ অধঃস্তন আদালতে উপস্থিত হওয়ার সময় সুপ্রীম কোর্টের ন্যায় একই প্রকার গাউন পরিধান করিবেন।” এবং দেওয়ানী নিয়ম ও আদেশাবলীর নিয়ম ৮২৬ এ জানতে পারি যে, আদালতের উপস্থিতিকালে অধঃস্তন আদালতসমূহের এডভোকেটগণ নিম্নোক্ত বিশেষ পোশাক পরিধান করিবেন:
(১) পাজামার সহিত মানানসই কালো বা সাদা চাপকান, আচকান বা বোতাম যুক্ত লম্বা কোট এবং বিএ গাউনের কাটা এবং আকৃতির কালো আলপাকা গাউন; অথবা
(২) ইউরোপীয় পোষক পরিধান করিলে কালো বা সাদা পাজামাসহ কালো কোট; এবং কালো বা গাঢ় কালো রংয়ের বন্ধনী (tie) এবং গাউন।
টীকী-১: (১) উপনিয়মে ‘‘সাদা” বলিতে ফিকে ক্রিম রংয়ের ন্যায় সরল বিমর্ষ রং, প্রাকৃতিক টাসর ইত্যাদিকে বুঝায়।
টীকী-২: গাউন পরিধান বাধ্যতামূলক।
টীকা-৩: ম্যাজিষ্ট্রেট এবং দেওয়ানী ও রাজস্ব কর্তব্য পালনকারী নির্বাহী কর্মকর্তাগণ গাউন পরিধান করে না বিধায় তাহাদের সম্মুখে উপস্থিতকালে এডভোকেটগণের পরিধান করা না করা ঐচ্ছিক।
আবার ২০০৯ সালের ফৌজদারী নিয়ম ও আদেশাবলীর এর সংখ্যা-১, অধ্যায় ২৯ নিয়ম ৪৮৭ মোতাবেক ‘‘সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবীবৃন্দ যখন কোন দায়রা আদালতে, ট্রাইব্যুনালে অথবা বিচারিক ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে কেস পরিচালনায় উপস্থিত হবে তখন সুপ্রীম কোর্টে পরিধেয় গাউনই পরিধান করবেন।” এবং ২০০৯ সালের ফৌজদারী নিয়ম ও আদেশাবলীর এর সংখ্যা-১, অধ্যায় ২৯ নিয়ম ৪৮৮ মোতাবেক ‘‘অধঃস্তন আদালতের সকল পুরুষ আইনজীবীগণ নিম্নে বর্ণিত পোশাকাদি তাদের পোশাকের একাংশ হিসাবে পরিধান করবেন:
(ক) বোতাম লাগানো কোট অথবা কালো চাপকান, আচকান অথবা শেরোয়ানী এবং হাফহাতা গাউন এবং ব্যান্ড অথবা
(খ) কাল বুক খোলা কোট সাদা শার্ট, খাড়া পাখিরডানার মত সাদা কলার, শক্ত অথবা নরম, এবং কাল গাউন এবং ব্যান্ড।
(গ) যেকোন ক্ষেত্রে, লম্বা পাজামা (সাদা, কালো, কালো রঙের দাগাবিশিষ্ট ডোরাকাটা অথবা ছাই রঙের) পরিধান করতে হবে।
(ঘ) যদি ইউরোপিয়ান পোশাক পরিধান করা হয় তবে একটি কালো কোটের সঙ্গে কালো অথবা সাদা পাজামা এবং কালো অথবা কালোর মধ্যে রঙ্গিন পেইন টাই এবং গাউন পরতে হবে”
এবং ২০০৯ সালের ফৌজদারী নিয়ম ও আদেশাবলীর এর সংখ্যা-১, অধ্যায় ২৯ নিয়ম
৪৮৯ মোতাবেক : ‘‘অধঃস্তন আদালতে মহিলা আইনজীবীগণ তাহাদের পোশাকের একাংশ হিসাবে নিম্নে লিখিত পোশাকাদি পরিধান করবেন:
- কালো রঙের ফুল হাতা জ্যাকেট অথবা বাউজ, খাড়া জোড়া সাদা কলার শক্ত অথবা
- নরম হবে সঙ্গে কালো রঙের গাউন এবং ব্যান্ড থাকবে, শাড়ি অথবা
- স্যালোয়ার কামিজ (সাদা অথবা কালো) পরিধান করতে হবে”।
নোট: নির্ধারিত পোশক পরিধান করা সকল আইনজীবীদের জন্য বাধ্যতামূলক।
২০০৯ সালে আইনজীবীগণের ড্রেস কোড নির্ধারন করা হলে ও এখনো ও পর্যন্ত অনেক আইজীবীগণ নির্ধারিত ড্রেস পরিধান করে না এবং অনেক আইনজীবীগণ জানেন না যে, তাদের পুরানো ড্রেস কোড মোতাবেক ব্যান্ড পড়া শুধুমাত্র উচ্চ আদালতের আইজীবীদের অধিকার থাকলেও ২০০৯ সালের পর থেকে ব্যান্ড পরিধান করা নিম্ন আদালতের আইনজীবীগণের অধিকার এবং তাহারা তাহাদের ইচ্ছা মাফিক ২০০৯ সালের ফৌজদারী নিয়ম ও আদেশাবলীর এর সংখ্যা-১, অধ্যায় ২৯ এর নিয়ম ৪৮৮ ও ৪৮৯ মোতাবেক পূর্বের পোষকসহ উপরোক্ত চার প্রকারের পোশাক পরিধান করতে পারবেন।
তখন বুঝতে পারলাম বিজ্ঞ এ.সি.এম.এম. সাহেব সঠিক ড্রেস কোড পরিধান করার বিষয়ে বলতে চেয়ে ছিলেন। কিন্তু ২০০৯ সালের পর বাংলাদেশ বার কাউন্সিল এর লিগ্যাল এডুকেশন শাখা কর্তৃক বিজ্ঞ আইনজীবীদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষে ০৬ (ছয়) সপ্তাহের যে প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা ছিল আমরা জুনিয়র আইনজীবীগণ (২০০৯ এর পর তালিকভূক্ত আইজীবীগণ) সে প্রশিক্ষন হতে বঞ্চিত হওয়ার কারণে আমাদের পেশাগত আচরনসহ ও অনেক বিষয়ে অজানা রয়েছে। যার কারণে আমরা বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি।
তাই আমার এই লিখার মাধ্যমে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নিকট নিবেদন পূর্বের ন্যায় বিজ্ঞ আইনজীবীদের পেশাগত প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা গ্রহণ করাসহ আইন পেশার মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করলে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা সহজ হবে।
লেখক: এডভোকেট, জজ আদালত, চট্টগ্রাম ও চেয়ারম্যান, দিশারী ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ।
Discussion about this post