দেশের নিম্ন আদালতসূমহে সহায়ক কর্মচারীর শূন্যপদ পূরণের পূর্বে আইন বা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্র গ্রহণের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে আপিলে এ সংক্রান্ত রায় পুনঃবিবেচনার আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টে আপিল বিভাগ।
সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের করা এ সংক্রান্ত রিভিউ (পুনঃবিবেচনার) আবেদন খারিজ করে মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ এই রায় ঘোষণা করেন। ফলে এখন থেকে দেশের নিম্ন আদালতসূমহে সহায়ক কর্মচারীর শূন্যপদ পূরণের পূর্বে আইন বা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্র গ্রহণের প্রয়োজন নেই।
এরআগে, কিশোরগঞ্জের জেলা জজ আদালতে ৫ জন কর্মচারী নিয়োগ দেয়ার সাত মাস পর ২০০৭ সালের ২৪ জুলাই আইন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে তা বাতিল করা হয়। মন্ত্রণালয়ের অনুমাদনের পর নিয়োগ দেয়ার ক্ষেত্রে নির্ধারিত সময়সীমা অতিক্রম করায় ওই বাতিল আদেশ দেয়া হয়।
এই সিদ্ধান্তের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন মো. আবুল কালাম আজাদসহ ওই কর্মচারীরা। হাইকোর্ট ওই নিয়োগ বাতিলের সিদ্ধান্তকে অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন। এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে আইন মন্ত্রণালয়।
গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর আপিল শুনানি শেষে হাইকোর্টের রায় বহাল রাখেন সুপ্রিম কোর্টের বিভাগ। রায়ে বলা হয়, অধস্তন আদালতসমূহ আইন মন্ত্রণালয় অথবা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অধীন্যস্ত কোনো বিভাগ নয়, এটি সুপ্রিম কোর্টের অধীনস্ত।
সংবিধানের ১০৯ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, সকল অধীনস্ত আদালত ও ট্রাইব্যুনালসূমহের ওপর হাইকোর্ট বিভাগের নিয়ন্ত্রণ ও তত্ত্বাবধান থাকবে। আবার সংবিধানের ১১১ অনুচ্ছেদের জেলা জজ আদালতসমূহ কার অধীন্যস্ত থাকবে তা পরিষ্কার করা হয়েছে।
মাসদার হোসেন মামলার রায় উল্লেখ করে বলা হয়েছে, বিচার বিভাগ একটি স্বতন্ত্র বিভাগ। কার্যক্রম এবং কাঠামোগতভাবে বিচার বিভাগ প্রজাতন্ত্রের বেসামরিক প্রশাসন ও নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা। সংশ্লিষ্ট জেলা আদালতকে অধীনস্ত একটি বিভাগ হিসেবে গণ্য করে আইন মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণ এবং তত্ত্বাবধানে ধরে নিয়ে ওই নিয়োগকে এখতিয়ার বহির্ভূত ঘোষণা করা হয়েছে। এটা আইনের ভুল ধারণাও ওপর করা হয়েছে।
আইন মন্ত্রণালয় জেলা ও দায়রা জজ আদালতকে এই ধরনের আদেশ আইনগতভাবে দিতে পারে- এমন কল্পনার কোনো সুযোগ নেই। আপিল বিভাগের এই রায় পুনঃবিবেচনা চেয়ে আবেদন করে মন্ত্রণালয়।
ওই পুনঃবিবেচনা আবেদনের শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগ তা খারিজ করে দেন। আইনজীবীরা জানিয়েছেন, আপিল বিভাগের এই রায়ের ফলে নিম্ন আদালতসমূহে সহায়ক কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে এখন থেকে আর কোনো মন্ত্রণালয়ের পূর্বানুমতির বা ছাড়পত্র গ্রহণের প্রয়োজন পড়বে না।
Discussion about this post